– শামীম আহমেদ
সন্ধ্যার আকাশে লালচে আভা ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামের ধুলোমাখা পথ ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে একটি শবযাত্রা। গাঁয়ের মানুষজন, শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবাই মিলেই এই যাত্রায় সামিল হয়েছে। প্রতিটি মুখেই বিষণ্ণতার ছাপ।
যাত্রাপথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটি বুড়ো বটগাছ। এই গাছটিই ছিল কাকা হারাণ কাকার প্রিয় জায়গা। এখানে বসেই তিনি গ্রামের ছেলে-মেয়েদের গল্প শোনাতেন। হারাণ কাকার মৃত্যু যেন গ্রামের প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে গভীরভাবে আঘাত করেছে।
হারাণ ঘোষ ছিলেন গ্রামের শিক্ষক। দীর্ঘ জীবনের প্রায় পুরোটাই তিনি গ্রাম্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে ব্যয় করেছেন। তাঁর মুখে শোনা গল্পগুলোই ছিল গ্রামের শিশুদের প্রথম পাঠ। আজ তাঁর মৃত্যুর পর সেই বটগাছটি যেন আরও বেশি নীরব, আরও বেশি শোকাহত।
শবযাত্রার শেষে সবাই হারাণ কাকার মরদেহটি গ্রামের শ্মশানে নিয়ে গেল। সেখানে আগুনের শিখায় যখন তাঁর দেহ বিলীন হয়ে গেল, তখন গ্রামের মানুষের চোখে জল ঝরছিল। কেউ উচ্চস্বরে কাঁদেনি, কিন্তু সবাই ভেতরে ভেতরে কেঁদেছে।
সেদিন সন্ধ্যায় গ্রামের প্রতিটি ঘরে আলো জ্বলেছিল, কিন্তু সেই আলোয় যেন একটা বিষণ্ণতা লুকিয়ে ছিল। গ্রামের বটগাছটি সেই সন্ধ্যায় আরও বেশি একা হয়ে পড়েছিল। যেন হারাণ ঘোষের স্মৃতি মুছে ফেলতে পারছে না।
হারাণ কাকার অন্তিমযাত্রা শুধু তাঁর জীবনের সমাপ্তি ছিল না, এটি ছিল একটি যুগের সমাপ্তি। তাঁর আদর্শ, শিক্ষা, এবং ভালবাসার স্মৃতি গ্রামবাসীদের হৃদয়ে চিরকাল বেঁচে থাকবে…।
-লেখকঃ শামীম আহমেদ
কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।
প্রিন্ট