সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলো জুলাই আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রথম কার্যদিবসে অর্থাৎ আগামীকাল সোমবার জারি করা হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদের জরুরি বৈঠকে শনিবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুসারে-আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে দলটির বিচার হবে। এই বিচারের আগপর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় রাত ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। এ সময়ে বন, পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
.
আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় তিনটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী এই ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, দলের অঙ্গসংগঠন, সমর্থক সংগঠন বা তার নেতাকর্মীকে শাস্তি দিতে পারবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরিপত্র পরবর্তী কর্মদিবসে জারি করা হবে। পাশাপাশি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
.
এই সিদ্ধান্তের পরপরই রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনকারীরা আনন্দ মিছিল বের করেন। মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা আনন্দ-উল্লাস করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় আনন্দ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা।
.
এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় রাত ১১টার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক পোস্টে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বিপ্লবী ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন। সরকারকেও সাধুবাদ। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন চাই। তবে জুলাই ঘোষণাপত্র ও বিচার প্রশ্নে আমাদের সংগ্রাম জারি রাখতে হবে। সারা দেশের ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নিবন্ধন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাতিল করতে হবে বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন তিনি।
.
৭ মে রাত ১০টার পর এই আন্দোলনের সূচনা হয়। এর কারণ ছিল সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগ। ওই দিন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর ডাকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে জড়ো হতে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পালটে যায় দৃশ্যপট। ধীরে ধীরে আসতে থাকেন এনসিপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মাঠে নামে শাপলা চত্বর ও পিলখানা হত্যাকাণ্ডের শিকার পরিবারের সদস্যসহ আহত জুলাই যোদ্ধারাও। বৃহস্পতিবার রাতভর বিক্ষোভ চলার পর শুক্রবার বাদ জুমা যমুনার পাশে ফোয়ারার সামনে বড় জমায়েত হয়। ডাক আসে শাহবাগ ব্লকেডের। এদিন রাজধানীর উত্তরাসহ ঢাকার কিছু প্রবেশমুখে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। বিভাগীয় শহর কিংবা জেলা-উপজেলায়ও ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে তারাও সমানতালে নামেন সড়কে। সিদ্ধান্ত না এলে এরই মধ্যে ফের ‘মার্চ টু ঢাকা’র হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন এনসপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একই সঙ্গে তিন দফা দাবিতে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়েছে জানিয়ে শুক্রবার বিবৃতি দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক সব দলের সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ করেছে সরকার। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতা-সমর্থকদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন সরকার বিবেচনায় রাখছে।’
.
তবে পুরোপুরি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ময়দান না ছাড়ার ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ১৬ বছরের শাসনামলে অনিয়ম-গণহত্যা, গুম-খুন, নির্যাতন, অর্থ বাণিজ্যসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধ করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সরাসরি অভিযুক্ত করা হয়েছে এ রিপোর্টে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় নির্বাচন জালিয়াতি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল টিকিয়ে রাখেন শেখ হাসিনা। আর ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে এমন কোনো অপরাধ নেই, যা করেননি তিনি। বেপরোয়া অপরাধ ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে দেশের মানুষ। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা। এ সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় তার দল আওয়ামী লীগ। এরপর আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে জাতিসংঘের রিপোর্টে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না করার সুপারিশ করা হয়েছে।
.
এদিকে শনিবার বিকালে শাহবাগ থেকে ফ্যাসিবাদের কফিনে শেষ পেরেক মারার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছিলেন-এনসিপিসহ জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতারা। এদিন বিকালে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করাসহ তিন দফা দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে গণজমায়েত কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা এই অঙ্গীকারের কথা জানান। তারা বলেন, আমাদের এই লড়াই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। এসময় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকা এবং দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সরকারের প্রতিও অনাস্থা দেওয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন বক্তারা।
.
এদিকে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ শনিবার রাত ৮টায় শাহবাগে ঘোষণা করেছিলেন, এক ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত না এলে তারা ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করবেন। পরে রাত ৯টার দিকে তারা শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের পাশের সড়কে অবস্থান নেন।
.
এ সময় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ২০১৩ সালে শাহবাগে ফ্যাসিবাদের যে পদধ্বনি শোনা গেছে, আমরা সে ফ্যাসিবাদের পতন ধ্বনিতে শেষ পেরেক মারব। আমাদের মত-পথ আলাদা হতে পারে, তবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে আমরা এক। আওয়ামী লীগের সময়ে যারা গুম, খুন হয়েছেন, আয়নাঘরে ছিলেন, তাদের জন্য আমরা এখানে বসেছি। যারা গুম হয়েছেন, আমরা হয়তো তাদের ফিরিয়ে দিতে পারব না। তবে আমরা এই বার্তা প্রতিষ্ঠা করব, নমরুদ ও ফেরাউনের যেভাবে পতন হয়, হাসিনারও সেভাবে পতন হয়েছে।
.
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, এই বাংলায় আওয়ামী লীগের ঠাঁই হবে না-এটা তো জনগণ রায় দিয়েছে। যারা গণহত্যা চালিয়ে ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, ওপার বাংলায় বসে ষড়যন্ত্র করছে সেই আওয়ামী লীগের এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক দল নয়, তারা সন্ত্রাসীগোষ্ঠী। যেসব বিদেশি শক্তি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে আনার চেষ্টা করবে, জুলাই জনতা তাদের রুখে দেবে।
.
তিনি আরও বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে। আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছেড়ে যাব না। আ.লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে শাহবাগে যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেখানে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
.
গণজমায়েতে এনসিপি উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সরেজমিন শাহবাগে গিয়ে দেখা যায়, দেশাত্মবোধক গানে গানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হচ্ছে। তবে শুক্রবার রাতের তুলনায় জনসমাগম অনেক কম ছিল। পুরো শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখা হয়েছে। তাতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেওয়া হয়নি। অবরোধ কর্মসূচিতে ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, করতে হবে করতে হবে’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘ব্যান ব্যান, আওয়ামী লীগ’, ‘দফা এক দাবি এক, লীগ নট কাম ব্যাক’, ‘এক দুই তিন চার, চুপ্পু তুই গদি ছাড়’, ‘আওয়ামী লীগের নিবন্ধন, বাতিল করো করতে হবে’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের।
.
শাহবাগ অবরোধে যানজট ভোগান্তি : শাহবাগ মোড় অবরোধের কারণে শনিবারও এই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। গণজমায়েতের কারণে বন্ধ রয়েছে শাহবাগ মোড়ের চারপাশের সংযোগ সড়ক। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, মৎস্য ভবনমুখী সড়ক, কাঁটাবন ও জাদুঘরের সামনে থেকে টিএসসিমুখী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে বিকল্প সড়ক দিয়ে যান চলাচল করছে। এরপরও অনেকে শাহবাগ মোড়ে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
.
ঢাকা মেডিকেল থেকে রিকশায় শাহবাগ মোড়ে এসে নেমে যান আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি ফার্মগেট বাজার যাব। শাহবাগের পর রিকশা যাবে না। তাই এখানে নেমে রাস্তা পার হয়ে আবার রিকশা নেব।’ মোটরসাইকেল আরোহী আব্দুর রহিম বলেন, আমি এসেছি চকবাজার থেকে। ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে ফার্মগেট চলে যাব। এখন এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। এখন আবার অনেক ঘুরে যেতে হবে।
.
প্রসঙ্গত, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দল। শুরুতে নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাশেম। প্রতিষ্ঠাকালে দলটির সভাপতি ছিলেন জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হক। পরে ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীরই উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে নতুন নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর দলটির নাম স্বভাবতই পালটে গিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ হয়ে যায়। স্বাধীনতার পরে বিভিন্ন সময় ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে গেছে দলটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ বিপর্যয়ে মধ্যে পড়ে। ওই বছর দলের তৎকালীন সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। তবে আওয়ামী লীগ তছনছ হয়ে যায়।
.
১৯৮১ সালের ১৭ মার্চ দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি দেশব্যাপী দল পুনর্গঠনে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে অর্থাৎ দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে দলটি। ২০০১-২০০৬ ক্ষমতার বাইরে থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন দলের নেতাকর্মীরা। এরপর এক-এগারো পেরিয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারও ক্ষমতায় আসে। ওই সময় থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় ছিল। এই ১৬ বছরে তিনটি ‘চরম বিতর্কিত’ নির্বাচন করে ক্ষমতায় আঁকড়ে রাখে আওয়ামী লীগ। তবে ছাত্র-জনতাসহ আওয়ামী বিরোধী সব দলের গণ-আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পতন ঘটে দলটির। তখন ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও বেশিরভাগই ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনসংশ্লিষ্টরা শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিও নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল।
প্রিন্ট