আরমান হোসেনঃ
কোনাবাড়িতে নকল সিগারেটের গোডাউনে পুলিশ অভিযান চালিয়ে নকল সিগারেট জব্দ করে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তথ্য গোপন করে নয় লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ। ও সহযোগী হিসেবে ছিল রাজনৈতিক দল বিএনপি’র রেজাউল মাস্টার কোনাবাড়ী থানা বিএনপির সহ-সভাপতি।
বুধবার (১০ জুলাই ২০২৫)সকাল আনুমানিক ১১টা ৩০ মিনিটে কোনাবাড়ী থানার এসআই (নিঃ) মোঃ কামরুল হাসানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী থানার জরুন এলাকায় একটি অবৈধ নকল সিগারেটের গোডাউনে অভিযান চালিয়ে ৮৬৪ বান্ডিল তথা ৮,৬৪০ প্যাকেট নকল সিগারেট ও নগদ ৯ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। অভিযানে আটক করা হয় দুইজন আসামিকে।
তবে বিস্ময়করভাবে, মামলার এজাহারে শুধু মাত্র ৫৫০১০ টাকা এবং একজন আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন—তাহলে বাকি ৯ লক্ষ টাকা ও আরেকজন আসামি কোথায়?
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গোডাউনে দায়িত্বে থাকা রেজাউলের স্ত্রীকেও আটক করা হলেও উৎকোচের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা রেজাউল মাস্টার থানায় গিয়ে আসামিদের ছাড়িয়ে আনবে বলে ভিকটিমের কাছ থেকে আরও ৪ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে ‘তদবির ’ করেন ও আরো ৪ লক্ষ টাকা থানায় এসআই অজয়ের কাছে দিলে ওসি আটক কৃত নারীকে ছেড়ে দেয়।
স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত রেজাউল জরুন ইটভাটা এলাকায় ছোট্ট একটি মুদি দোকানের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে নকল সিগারেটের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালায় এবং বিপুল পরিমাণ সিগারেট ও নগদ অর্থ উদ্ধার করে।
রেজাউলের ছোট ভাই জানান, “আমার ভাবি ও ভাতিজাকে ধরে থানায় নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে প্রায় ৯ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা ক্যাশও নিয়ে গেছে পুলিশ। আমার ভাবিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য থানায় যারা যা টাকা চেয়েছে আমি দিতে রাজি ছিলাম।”
অন্যদিকে, চালক পারভেজ জানান, “আমি নিজে সিগারেটভর্তি গাড়ি থানায় নিয়ে যাই। গাড়িতে সিগারেট ও ৯-১০ লক্ষ টাকার মত নগদ টাকা ছিল। পরে আমি আরেকটি অটোতে ভাড়া নিয়ে বাসায় ফিরে আসি।”
ঘটনার পর যখন সাংবাদিকরা বিস্তারিত জানতে চান, তখন কোনাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাউদ্দিন আহমেদ এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অজয় কৌশলে এ বিষয়ে মন্তব্য না করে এড়িয়ে যান।
পুলিশি তোতবির, মামলার এজাহারে তথ্য গোপন এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। তারা এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
আটককৃত দ্বিতীয় আসামি কোথায়?জব্দকৃত পুরো ৯ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকার হিসাব কোথায়?
থানার জব্দ তালিকায় মাত্র ৫৫০১০ টাকা দেখানো হলো কেন?
রেজাউলের স্ত্রী’র মুক্তির পেছনে কী রাজনৈতিক তদবির ছিল?
এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত হলে, গাজীপুরের নকল সিগারেট সিন্ডিকেট ও পুলিশের ভেতরের দুর্নীতির চিত্র অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে উঠতে পারে।
প্রিন্ট