ছাত্র আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে থাকা ‘মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্য’র একটি কান ভেঙে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাতে বিষয়টি জানতে পেরে ভাস্কর্যের ভেঙে ফেলা অংশটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। তবে কে বা কারা, কখন ভাস্কর্যে আঘাত করেছে, তা জানা যায়নি।
দেশে চলমান ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একজন সদস্য ও মধুর ক্যানটিনের একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, মধুদার ভাস্কর্যের অংশবিশেষ ভাঙার বিষয়টি নজরে আসার পর প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীকে জানানো হয়।
পরে প্রক্টরিয়াল টিমের কয়েকজন সদস্য এসে ভাস্কর্যে নতুন কান স্থাপন করেন। তবে প্রক্টরের ভাষ্য, মধুর ক্যানটিনের কর্মচারীরাই নতুন কান প্রতিস্থাপন করেছেন।
মধুসূদন দে, যিনি ‘মধুদা’ নামেই বহুল পরিচিত, ছিলেন মধুর ক্যানটিনের প্রতিষ্ঠাতা। মধুদা সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হত্যা করে। মধুদার স্মৃতির স্মরণে তাঁর নামেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থিত রেস্তোরাঁটির নামকরণ করা হয় ‘মধুর ক্যানটিন’।
মধুদার ভাস্কর্যে আঘাত ও কান প্রতিস্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী গতকাল মধ্যরাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমন একটি তথ্য আমার কাছে এসেছে। মধুর ক্যানটিনের কর্মচারীরাই ভাস্কর্যটির কান প্রতিস্থাপন করেছেন। তবে ভাস্কর্যে আঘাতটি খেয়ালের বশে হয়েছে, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, তা এখনো জানা যায়নি। কারা, কী উদ্দেশ্যে কাজটি করেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তা খুঁজে বের করতে বলা হয়েছে।’
গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে নাসির নামে টিমের একজন সদস্য বলেন, ‘মধুদার ভাস্কর্যের কান কারা ভেঙেছিলেন, তা জানা যায়নি। আপাতত আমরা কানটি কোনোমতে লাগিয়ে দিয়েছি। পরে ভালো করে মেরামত করা হবে।’ মধুর ক্যানটিনের একজন কর্মচারী জানান, গতকাল পৌনে আটটার দিকে তাঁরা মধুদার ভাস্কর্যের অংশবিশেষ ভাঙা দেখতে পান। পরে প্রক্টরকে বিষয়টি জানানো হয়। রাত নয়টার পর প্রক্টরিয়াল টিম এসে ভাস্কর্যের ভেঙে ফেলা অংশটি লাগিয়ে দিয়ে যায়।
মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্যটি মধুর ক্যানটিনের সামনে থাকা গোলঘরের জানালার ঠিক পাশেই অবস্থিত। তবে শুরুতে ভাস্কর্যটি ক্যানটিনের একটি দরজার সামনে স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ১৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এমাজউদ্দিন আহমদ ভাস্কর্যটির প্রথম উদ্বোধন করেন। বর্তমান অবস্থানে ভাস্কর্যটির পুনর্নির্মাণের পর ২০০১ সালে এটির উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী। ভাস্কর্যটির ভাস্কর তৌফিক হোসেন খান।