রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সরকারি খাস পুকুর ইজারায় পুকুর চুরির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় অধিবাসীরা এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন, একই সঙ্গে মৎস্যজীবীরা পুকুরগুলো পুনরায় ইজারা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোক্তারুজ্জামানের সঙ্গে যোগসাজশে গোদাগাড়ীর জাহানাবাদ মহল্লার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম ওরফে বিষুর নেতৃত্বে একটি জালিয়াত চক্র কাজ করেছে। প্রায় সাড়ে ছয় একর আয়তনের একটি বড় পুকুর ইজারা দেওয়া হয়েছে মাত্র দুই লাখ টাকায়, যদিও এর ইজারামূল্য ছিল ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। এই পুকুরটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সাগুয়ান মৌজায় অবস্থিত।
সম্প্রতি, গোদাগাড়ী উপজেলার সাগুয়ান মৌজায় সাড়ে ছয় একর আয়তনের একটি পুকুর ইজারা দেওয়ার জন্য তালিকা প্রকাশ করে প্রশাসন। তালিকায় খাস-খতিয়ানভুক্ত পুকুরটির ইজারামূল্য ছিল ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা। তবে পুকুরটির ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয় “মামলা আছে” উল্লেখ করে। পরে, জালিয়াতির মাধ্যমে গোপনে মাত্র দুই লাখ টাকায় পুকুরটি ইজারা দেওয়া হয়। শুধু একটি পুকুর নয়, গোদাগাড়ীতে ইজারার জন্য প্রকাশিত তালিকার ২ হাজার ৭৪৯টি খাস পুকুরের মধ্যে ২০০টিরও বেশি পুকুরে জালিয়াতি করা হয়েছে।
ভুয়া চালান দেখিয়ে, ইজারা মূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক কম মূল্যে দলিল তৈরি, মামলার নিষেধাজ্ঞার কথা বলে এবং তালিকা বহির্ভূত রেখেই এসব পুকুর ইজারা দেওয়া হয়। ১৪৩১ থেকে ৩৩ বঙ্গাব্দের দ্বিতীয় পর্যায়ে সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে একটি মহল এই জালিয়াতি করেছে। এতে তিন বছরে অন্তত ৫ কোটি ২৯ লাখ ৮২ হাজার ৬২৮ টাকার রাজস্ব সরকারের ক্ষতি হয়েছে।
সরকারি হিসাবমতে, গোদাগাড়ী উপজেলায় তিন হাজার ৬০টি খাস পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৭৪৯টি পুকুরের ইজারা দেওয়ার জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। ৩০ মে অনুমোদিত তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর, ১৫ দিনের মধ্যে দরপত্র দাখিলকারীরা আপিল করতে পারেন, তবে তালিকা দেরিতে প্রকাশিত হওয়ায় অনেক দরপত্র দাখিলকারী বঞ্চিত হন।
গোয়েন্দা তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গোদাগাড়ী উপজেলার সাগুয়ান মৌজার সোয়া ৪ একর, ৬ দশমিক ৬৪ একর এবং প্রায় দেড় একরের তিনটি বড় পুকুরের ইজারামূল্য ছিল অনেক বেশি, কিন্তু সেগুলো গোপনে অনেক কম দামে ইজারা দেওয়া হয়েছে। এসব পুকুরে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ তিন বছরে প্রায় ১ কোটি ৯৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৬ টাকা।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত চলছে এবং মৎস্যজীবীরা দ্রুত পুকুরগুলো পুনরায় ইজারা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ লালপুরে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত
এই ঘটনায়, গোদাগাড়ী উপজেলার তৎকালীন ইউএনও আতিকুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হাসানকে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রিন্ট