আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী ইস্যুতে গতকাল বুধবার দিনভর উত্তাল ছিল বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। গত মঙ্গলবার পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল নিহতের ঘটনায় গতকাল বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে। যাতে নেতৃত্ব দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। নগরের টাইগার পাস এলাকায় হওয়া ওই সমাবেশে সাইফুল হত্যায় জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ইসকন (আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ) নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। একইভাবে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশও। এর আগে গতকাল সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবন চত্বর এবং পরে জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে সাইফুল ইসলামের আলাদা দুটি জানাজা হয়।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় গতকাল চট্টগ্রাম ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে আরও অনেক সংগঠন। এসব কর্মসূচি থেকেও ইসকন নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। আইনজীবী সাইফুল হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই দেশ জুড়ে উত্তেজনাকর ও থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে এসব কর্মসূচি পালিত হলেও নতুন করে কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি।
অহিংস প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করায় ছাত্র-জনতাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, ছাত্র-জনতা দায়িত্ব ও দরদের নজির দেখিয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে। অন্যদিকে দেশের মানুষ অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সাতজনকে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ। তিনি গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে জামিন নামঞ্জুরের পর সনাতনী সংগঠনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে এবং সাইফুল হত্যার ঘটনায় পৃথক মামলা প্রক্রিয়াধীন।’ এর আগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং আইনজীবী সাইফুল হত্যার জেরে মঙ্গলবার রাতভর কোতোয়ালি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩০ জনকে আটক করে যৌথবাহিনী। মঙ্গলবার দুপুরে চিন্ময় ইস্যুতে বিক্ষোভকারীদের সহযোগিতার অভিযোগে গতকাল দুপুরে আইনজীবী ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন অফিসের নথিতে আগুন দিয়েছেন বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। সাইফুল হত্যার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবারও আদালতের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি।
গতকাল সকালে প্রথমে আদালত প্রাঙ্গণে এবং পরে বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে সাইফুলের দ্বিতীয় জানাজায় নগর জামায়াতের আমির শাহজাহান চৌধুরী, সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলমসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। এ সময় তারা আইনজীবী সাইফুলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং সর্বোচ্চ বিচার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
আইনজীবী সাইফুল হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে শুভ কান্তি দাশ নামে এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব স্থগিত করেছে বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। বহিষ্কৃত শুভ কান্তি দাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ইসকন নিষিদ্ধের দাবি : দ্রুত সময়ের মধ্যে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। গতকাল দুপুরে টাইগারপাস মোড়ে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি করেন তারা। এ সময় তারা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনজীবী হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিও জানান।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এজেন্ট হিসেবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে ইসকন। উগ্র হিন্দুত্ববাদী এই জঙ্গি সংগঠন সাইফুল ইসলাম আলিফ ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। ভারতে বসেই স্বৈরাচার হাসিনা যত ষড়যন্ত্র করুক না কেন, আমরা রুখে দেব। বাংলাদেশে সব ধর্মের সহাবস্থান থাকবে। ধর্মের নামে উগ্রবাদীর ঠাঁই এখানে নেই। ইসকনের বর্বরতা কোনোভাবেই মেনে নেবে না ছাত্র-জনতা। তাই অবিলম্বে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’
সমাবেশে নাগরিক কমিটির সদস্য ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, ‘যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা এই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যে রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ এসেছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এই চিন্ময়রা উসকানি দেন। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে খুনি হাসিনারা উসকানি দেন। সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে জঙ্গি ইসকনরা উসকানি দেয়। আমরা স্পষ্ট করে সব প্রেত্মাকে বলে দিতে চাই, আমরা ১৬ বছরের খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছি এবং ছোটখাটো কিছু জঙ্গি ইসকনকে দেশছাড়া করা আমাদের জন্য হাতের ময়লা।’
ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন অফিসের নথিপত্রে আগুন : চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভের সময় ইসকন সদস্যদের সহায়তা করার অভিযোগে চট্টগ্রাম আদালতের ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের অফিসের (মুন্সি সমিতি) নথিপত্রে আগুন দিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম আদালতের প্রবেশমুখে ভূমি অধিগ্রহণ শাখার উল্টো পাশে ওই সমিতির অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের অভিযোগ, চিন্ময়ের জামিন নামঞ্জুরের পর ইসকন সদস্যরা তাকে বহনকারী প্রিজনভ্যান আটকে বিক্ষোভ করেন। এ সময় মুন্সি সমিতির সদস্যরা নিজেদের পোশাক এবং খাবার পানি বিক্ষোভকারীদের সরবরাহ করেছেন। এ ছাড়া তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বিভিন্ন পোস্টও দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আইনজীবী সাইফুল হত্যার প্রতিবাদে আজ বৃহস্পতিবারও আদালতের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এ ঘটনায় জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজনসহ পাঁচ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
হত্যায় সাতজনকে শনাক্ত : আইনজীবী সাইফুল হত্যার ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হত্যায় জড়িত সাতজনকে শনাক্ত করেছে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণের অদূরে রঙ্গম টাওয়ার এলাকায় সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে চিন্ময় অনুসারীদের বিরুদ্ধে।
জামিন নামঞ্জুরের পর গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে চিন্ময়কে কৃষ্ণ দাসকে প্রিজনভ্যানে কারাগারে পাঠানোর সময় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর রাতভর কোতোয়ালি এলাকায় অভিযান চালিয়ে যৌথ বাহিনী ৩০ জনকে আটক করে। এর মধ্যেই সাতজনকে আলিফ হত্যায় জড়িত হিসেবে ভিডিও ফুটেজ থেকে শনাক্ত করেছে সিএমপি। সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় আমরা ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে সাতজনকে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করেছি। মামলায় তাদের হত্যা মামলায় এবং অন্য আটকদের মধ্যে ২১ জনকে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
বিজিসি ট্রাস্টের শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব স্থগিত : আইনজীবী সাইফুল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুভ কান্তি দাশ নামে এক শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব স্থগিত করেছে বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা থেকে নোটিস আকারে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়, আইন বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী শুভ কান্তি দাশকে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে তার ছাত্রত্ব স্থগিত করা হলো। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার হত্যাকাণ্ডের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সে ছবিতে শুভ কান্তির উপস্থিতি দেখা যায়।
অপরাধীর পরিচয় অপরাধীই, দল-গোষ্ঠী নয় : অপরাধীর পরিচয় শুধু অপরাধী, কোনো দল-গোষ্ঠী হিসেবে তার পরিচয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ। তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে থাকে, তাহলে সে ব্যক্তিটিই দায়ী হবে। তার ব্যক্তি পরিচয়, সামাজিক পরিচয়, ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক পরিচয় কোনো কিছুই সামনে আসবে না। তাই কাউকে কোনো সংগঠনের বলাটা আমরা পরিহার করি। একক অপরাধের জন্য কোনো সংগঠন, দল বা কোনো গোষ্ঠীর দিকে আঙুল তোলা উচিত নয়।’ গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য যে সাজা হওয়া দরকার, সেটা রাষ্ট্রদ্রোহী হোক বা আলিফের হত্যাকাণ্ডের উসকানির জন্য হোক, অপরাধের জন্য প্রত্যেককে শাস্তি পেতে হবে।’
অভিবাদন উপদেষ্টা মাহফুজের, প্রজ্ঞার কথা বললেন প্রেস সচিব : ‘দায়িত্ব ও দরদের নজির দেখিয়ে বাংলাদেশকে গর্বিত করায়’ ছাত্র-জনতাকে অভিবাদন জানিয়েছেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেছেন, হঠকারিতা, নেতিবাচকতা ও ভাঙনের মানসিকতা থেকে বের হয়ে রাষ্ট্রকে গড়তে হবে।
অন্যদিকে দেশের মানুষ অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ কোনো ফাঁদে পা দেবে না।
গতকাল মাহফুজ আলম ও শফিকুল আলম নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলাদা পোস্টে এসব কথা বলেন। চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনার পর বড় কোনো অস্থিরতা তৈরি না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা এই পোস্ট দেন।
সাইফুল হত্যার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে। পাশাপাশি সবাইকে শান্ত থাকা ও সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়। সরকারের উপদেষ্টারাও সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। পরে দেশে বড় কোনো অস্থিরতা হয়নি।
মাহফুজ আলম লিখেছেন, ‘দায়িত্ব ও দরদের নজির দেখিয়ে আপনারা বাংলাদেশকে গর্বিত করেছেন। বাংলাদেশ আর কারও ষড়যন্ত্রের সামনে পরাস্ত হবে না। ইনশাআল্লাহ।’
অন্যদিকে শফিকুল আলম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার দেশের মানুষ; রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও নাগরিক সমাজ এবং স্থানীয় ও বিদেশে অবস্থানরত প্রভাবশালী বাংলাদেশিরা অভূতপূর্ব রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। এখনো কিছু বিষয়ে উত্তেজনা থাকলেও আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, আমরা মাথা উঁচু করে কঠিন এই পরীক্ষাও উতরে যাব।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ : আইনজীবী সাইফুল ইসলাম ওরফে আলিফের জন্য দোয়া ও সম্প্রীতির ডাক দিয়ে গতকাল বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে সংগঠনটির মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘বাংলাদেশে হাজার বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সঙ্গে মানুষ বসবাস করে এসেছে। এই দেশে একজনকে হত্যা করে যদি কেউ ভেবে থাকে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাইকে মুখোমুখি দাঁড় করাবে, তা তাদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে।’
উসকানিদাতাদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মৃত্যুর আর কোনো ভয় নেই। আমাদের আরেকবার লড়তে বাধ্য করবেন না।’
ইসকন মানেই সনাতনী নয় এ কথা উল্লেখ করে সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘ইসকনের উগ্রবাদীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের (বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র) প্রতিটি কর্মসূচিকে সনাতনীদের কর্মসূচি বলে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। হাজার হাজার সনাতনী ভাই জঙ্গি ইসকনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। চিন্ময় দাস বা ইসকনকে গণমাধ্যমে সনাতনী হিসেবে প্রচারের কারণেই এটা এত দূর এসেছে।’
উগ্রবাদকে প্রতিহতের আহ্বান নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইংয়ের : আইনজীবী সাইফুল হত্যায় জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইং। একই সঙ্গে তারা নতুন বাংলাদেশ গড়তে যেকোনো উগ্রবাদকে প্রতিহত করার আহ্বান জানান। গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট বার প্রাঙ্গণে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইংয়ের সদস্যরা এ কথা বলেন।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির মিছিল : সাইফুল হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মিছিল করেছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা। একই সঙ্গে তারা ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। গতকাল দুপুরে ঢাকার জজকোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীরা মিছিল করে এসব দাবি জানান।
সাইফুল হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের : চট্টগ্রামের আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। পাশাপাশি এ ঘটনায় নিরপরাধ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে প্রশাসনকে সচেতন থাকার আহ্বান জানায়। গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ দাবি জানিয়েছেন পরিষদের নেতারা।
রাজশাহীতে মানববন্ধন : চট্টগ্রাম বারের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাধারণ আইনজীবীরা। গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় রাজশাহী আদালত প্রাঙ্গণে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মানববন্ধনে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচার আইনে বিচার ও ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি জানান।
শিবচরে ইসকনের বন্ধে আলটিমেটাম : মাদারীপুরের শিবচর থেকে ইসকনের অফিস গুটিয়ে নিতে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছে স্থানীয় আলেম সমাজ ও সাধারণ মানুষ। গতকাল বুধবার দুপুরে শিবচর পৌর এলাকার সোনালি মার্কেটে ইসকনের অফিসসহ সব অফিস ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গুটিয়ে নিতে আলটিমেটাম দেন তারা।
রাজবাড়ীতে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি : রাজবাড়ীতে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশ যুব খেলাফত মজলিস রাজবাড়ী জেলা শাখার উদ্যোগে এই বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে রাজবাড়ী প্রেস ক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিস রাজবাড়ী জেলা শাখার সভাপতি মুফতি আবু তাহের, সহসভাপতি কারি মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান, রাতুলুজ্জামান, আলামিন প্রমুখ।
প্রিন্ট