ক্ষমতায় থাকাকালীন হত্যা ও নির্যাতনে জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মার্কিন সাময়িকী টাইমকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সাময়িকীটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়।
টাইমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিএনপির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান বলেছেন— ‘কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা না করেই অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে। এটা ভালো লক্ষণ নয়। এটা স্বৈরাচারী সরকারের লক্ষণ।’ যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা ও রূপরেখা চান বিএনপি নেতা ওয়াহিদুজ্জামান।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস টাইমকে জানান, নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট কোনো তারিখ এখনো নির্ধারণ করেনি সরকার। তিনি বলেন, ‘প্রথমে আমাদের রেললাইন ঠিক করতে হবে, যাতে ট্রেন সঠিক দিকে যেতে পারে।’
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অন্যদের মতোই স্বাধীন। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভিত্তিতে লড়াই করব আমরা।’
তবে ক্ষমতায় থাকাকালীন হত্যা ও ক্ষমতার অপব্যহারের সঙ্গে জড়িতদের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের পর আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় স্বাগত জানানো হবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাকে সরকারের দায়িত্ব নিতে বলায় শুরুতে আমি তা এড়ানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পরে বললাম, ‘ঠিক আছে, তোমরা জীবন দিয়েছো, তোমার বন্ধুরা জীবন দিয়েছে, তাই আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।’
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকেই ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক বিবৃতি ও বক্তব্য দিচ্ছেন।
শেখ হাসিনার এসব বিবৃতি ও বক্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারে অনেক সমস্যার কারণ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি ভারতে বসে সরকারের উপদেষ্টারদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে সহিংসতার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে তিনি শেখ হোসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত চেয়েছেন। যদিও কেউ বিশ্বাস করে না যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাতে রাজি হবেন।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান দলীয় ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামীতে তার নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী; আমরা ব্যবসার মধ্যে রয়েছি। কোনো সংকট থেকে বের হতে সহায়তার জন্য আমরা অর্থ চাচ্ছি না। আমরা একটি ব্যবসায়ী অংশীদার চাই।’
আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব টাকা ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে টাইম ম্যাগাজিনকে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
এছাড়া দেশকে পুনর্গঠিত করার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ছয় দফা সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। যেখানে নির্বাচনী ব্যবস্থা, পুলিশ প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি প্রশাসন এবং জাতীয় সংবিধানকে কেন্দ্র করে কাজ করা হচ্ছে।
প্রিন্ট