ঢাকা , মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫, ৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মঙ্গলকোটে মঙ্গলচণ্ডী পুজোয় পুলিশের জলছত্র Logo কুড়ানো আলুই ওদের সারা বছরের খাবার ! Logo সংকট উত্তরণে এখনই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিকল্প নেইঃ -নার্গিস বেগম Logo ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ প্যারাসিটামল ,কলেরা স্যালাইন ও এক্সরে ফিল্ম নেই Logo দৌলতপুরে জামায়াতের ইফতার ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ Logo মধুখালীতে শয়তানের নিঃশ্বাস পার্টি চক্রের দুই সদস্য আটক Logo রায়পুরায় তিন সন্তানের জননীকে ধর্ষণের পর প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ Logo ১৬ বছর বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের বীজ বপন করেছে বিধায় হাসিনার পতন হয়েছেঃ-মাহবুবের রহমান শামীম Logo লালপুরে জামাতের ইফতার মাহফিল Logo সুদৃঢ় ঐক্যের মাধ্যেম সকল ষড়যন্ত্র মুছতে হবেঃ -হারুন অর রশীদ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

-ছবিঃ প্রতীকী।

সময়ের প্রত্যাশা ডেস্কঃ

মায়ের ভাষার জন্য বিশ্বের বুকে রক্ত ও প্রাণদানের এক অনন্য ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। পলাশ-শিমুল ফোটার দিনে তাই তো আজ গেয়ে উঠছে মন- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলনের আজ ৭৩ বছর পূর্ণ হয়েছে।

 

দিনটি পালনে এবার দেখা যাবে ভিন্নমাত্রা। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রিপরিষদের অধিকাংশ সদস্যই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। গত ১৫ বছর দলটির নেতৃত্বে থাকা সরকার ও ঘনিষ্ঠদের দিবসটি পালনে যে করায়ত্তবাদী তৎপরতা দেখা যেত। এবার সে চিত্রের দেখা মিলবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তখন কর্মসূচি পালন করতে পারলেও, বারবার নানা বাধার সম্মুখীন হতো। আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী ছাড়া প্রায় প্রতিটি দলই এবার সুষ্ঠুভাবে দিনটি পালন করবে।

 

রীতি অনুযায়ী রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বিদেশি কূটনীতিক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ভাষাসৈনিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানান।

 

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজপথ, দেয়াল বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা রাত-দিন খেটে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিবাদের নানা ভাষা। শহীদ মিনার বেদি, কালো রাজপথ, দেয়াল হেসে উঠছে বর্ণিল আল্পনায়।

 

এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ঘিরে রাজধানীতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।

 

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় এবং পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকার ছাত্র ও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস থেকে ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ কয়েকজন।

 

দিনটি উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করবে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ, কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা শহরের সড়কদ্বীপ ও গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানে বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা-সংবলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।

 

কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই, তবুও চার স্তরের নিরাপত্তা

বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী জানান, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে কোনো আশঙ্কা নেই। তারপরও চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে র‍্যাবসহ অন্যরা সমন্বয় করে কাজ করছে।

 

তিনি আরও বলেন, ‘এখনো আমরা কোনো আশঙ্কা দেখছি না। প্রবেশের ক্ষেত্রে মেটাল ডিটেক্টরের পাশাপাশি ম্যানুয়ালি দেহতল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। কোনোরূপ দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। শহীদ মিনারের চারপাশে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পুলিশের মোবাইল টিম সতর্ক অবস্থায় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।’

 

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, ‘শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণে প্রচুর জনসমাগম হবে। এজন্য ট্রাফিক বিভাগ এক কিলোমিটার এলাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে। পাশাপাশি সাতটি পথে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এই সাতটি পথ হলো- শাহবাগ ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং, চানখাঁরপুল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং ও বকশীবাজার ক্রসিং। আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলমান থাকবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

 

ভাষা আন্দোলন জাতীয়তাবাদ ও ঐক্যের অনুভূতি জাগ্রত করেঃ -তারেক রহমান

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমি এই দিনে শহীদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। রক্তরাঙা একুশে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এ দিনেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের এই মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান।’ তিনি বলেন, ‘বায়ান্নের একুশের রক্তাক্ত পথ ধরেই এ দেশের সব গণতান্ত্রিক এবং স্বাধিকারের সংগ্রাম তীব্র হয়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হলেও নতুন তাঁবেদার গোষ্ঠী আমাদের ভাষা, সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালানোর ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আমরা বিশ্ব সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারি। কিন্তু এ দেশের মানুষ সব সময় স্বৈরাচার এবং দেশি-বিদেশি কুচক্রীদের অদম্য সাহসে প্রতিহত করে এসেছে। দেশের মানুষের মুক্ত বিকাশের জন্য ন্যায়বিচার, মানবিক সাম্য তথা প্রকৃত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও চিরস্থায়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্রকে যাতে আর কেউ শৃঙ্খলবন্দি করতে না পারে, সেজন্য স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শক্তিকে সার্বক্ষণিক সজাগ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে একুশের অম্লান চেতনা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।’

 

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন জাতীয়তাবাদ ও ঐক্যের অনুভূতি জাগ্রত করে। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় বিশ্বে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।’

 

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি দুদিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ এবং প্রভাতফেরি করবে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা করেছে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

মঙ্গলকোটে মঙ্গলচণ্ডী পুজোয় পুলিশের জলছত্র

error: Content is protected !!

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

আপডেট টাইম : ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :

সময়ের প্রত্যাশা ডেস্কঃ

মায়ের ভাষার জন্য বিশ্বের বুকে রক্ত ও প্রাণদানের এক অনন্য ইতিহাস রচনা করেছে বাংলাদেশ। পলাশ-শিমুল ফোটার দিনে তাই তো আজ গেয়ে উঠছে মন- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’ আজ একুশে ফেব্রুয়ারি। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গৌরবোজ্জ্বল ভাষা আন্দোলনের আজ ৭৩ বছর পূর্ণ হয়েছে।

 

দিনটি পালনে এবার দেখা যাবে ভিন্নমাত্রা। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। সরকারপ্রধান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ তার মন্ত্রিপরিষদের অধিকাংশ সদস্যই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। গত ১৫ বছর দলটির নেতৃত্বে থাকা সরকার ও ঘনিষ্ঠদের দিবসটি পালনে যে করায়ত্তবাদী তৎপরতা দেখা যেত। এবার সে চিত্রের দেখা মিলবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তখন কর্মসূচি পালন করতে পারলেও, বারবার নানা বাধার সম্মুখীন হতো। আওয়ামী লীগ ও তার জোটসঙ্গী ছাড়া প্রায় প্রতিটি দলই এবার সুষ্ঠুভাবে দিনটি পালন করবে।

 

রীতি অনুযায়ী রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়। পরে বিদেশি কূটনীতিক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ভাষাসৈনিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানান।

 

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাজপথ, দেয়াল বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। চারুকলার শিক্ষার্থীরা রাত-দিন খেটে রংতুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিবাদের নানা ভাষা। শহীদ মিনার বেদি, কালো রাজপথ, দেয়াল হেসে উঠছে বর্ণিল আল্পনায়।

 

এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ঘিরে রাজধানীতে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন। বসানো হয়েছে চেকপোস্ট।

 

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেসকো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কয়েক বছর ধরে দিবসটি পালিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ায় এবং পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে ঢাকার ছাত্র ও সাধারণ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাস থেকে ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্রছাত্রীরা মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ কয়েকজন।

 

দিনটি উপলক্ষে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করবে। আজিমপুর কবরস্থানে ফাতেহা পাঠ, কোরআনখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন উপলক্ষে ঢাকা শহরের সড়কদ্বীপ ও গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাজনক স্থানে বাংলাসহ অন্যান্য ভাষার বর্ণমালা-সংবলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে।

 

কোনো ধরনের আশঙ্কা নেই, তবুও চার স্তরের নিরাপত্তা

বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী জানান, একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে কোনো আশঙ্কা নেই। তারপরও চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সতর্ক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে র‍্যাবসহ অন্যরা সমন্বয় করে কাজ করছে।

 

তিনি আরও বলেন, ‘এখনো আমরা কোনো আশঙ্কা দেখছি না। প্রবেশের ক্ষেত্রে মেটাল ডিটেক্টরের পাশাপাশি ম্যানুয়ালি দেহতল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। কোনোরূপ দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। শহীদ মিনারের চারপাশে এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পুলিশের মোবাইল টিম সতর্ক অবস্থায় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।’

 

ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সরওয়ার বলেন, ‘শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণে প্রচুর জনসমাগম হবে। এজন্য ট্রাফিক বিভাগ এক কিলোমিটার এলাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকবে। পাশাপাশি সাতটি পথে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এই সাতটি পথ হলো- শাহবাগ ক্রসিং, নীলক্ষেত ক্রসিং, শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং, চানখাঁরপুল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, পলাশী ক্রসিং ও বকশীবাজার ক্রসিং। আজ শুক্রবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চলমান থাকবে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।

 

ভাষা আন্দোলন জাতীয়তাবাদ ও ঐক্যের অনুভূতি জাগ্রত করেঃ -তারেক রহমান

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমি এই দিনে শহীদকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। রক্তরাঙা একুশে ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এ দিনেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ অনেকেই জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাদের এই মহান আত্মত্যাগের বিনিময়ে রচিত হয়েছে আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রথম সোপান।’ তিনি বলেন, ‘বায়ান্নের একুশের রক্তাক্ত পথ ধরেই এ দেশের সব গণতান্ত্রিক এবং স্বাধিকারের সংগ্রাম তীব্র হয়ে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হলেও নতুন তাঁবেদার গোষ্ঠী আমাদের ভাষা, সংস্কৃতির ওপর আগ্রাসন চালানোর ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আমরা বিশ্ব সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারি। কিন্তু এ দেশের মানুষ সব সময় স্বৈরাচার এবং দেশি-বিদেশি কুচক্রীদের অদম্য সাহসে প্রতিহত করে এসেছে। দেশের মানুষের মুক্ত বিকাশের জন্য ন্যায়বিচার, মানবিক সাম্য তথা প্রকৃত গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও চিরস্থায়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্রকে যাতে আর কেউ শৃঙ্খলবন্দি করতে না পারে, সেজন্য স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী গণতান্ত্রিক শক্তিকে সার্বক্ষণিক সজাগ থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে একুশের অম্লান চেতনা আমাদের উদ্বুদ্ধ করবে।’

 

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন জাতীয়তাবাদ ও ঐক্যের অনুভূতি জাগ্রত করে। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় বিশ্বে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।’

 

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিএনপি দুদিনব্যাপী বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ দিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশে সংগঠনের সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালোব্যাজ ধারণ এবং প্রভাতফেরি করবে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা করেছে।


প্রিন্ট