প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। বেলা একটার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়। পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করে। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেননি।
এদিকে বেলা দুইটার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি অংশ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে ঢুকে পড়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি চালায়। এতে অনেক মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা ছয়জনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন শহরের থানাপাড়া এলাকার এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় রক্তের জন্য হাহাকার চলছে। হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া–২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আওয়ামী সমর্থকদের কয়েকটি দোকানে লুটপাট হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও কিছু জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ ছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।
প্রিন্ট