ঢাকা , শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ফলোআপ নিউজ

কুষ্টিয়ায় পুলিশের গুলিতে শিশুসহ ছয়জন নিহত, শতাধিক গুলিবিদ্ধ

আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে পুলিশ গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। আজ সন্ধ্যায়  আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়ার মডেল থানা ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। বেলা একটার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়। পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করে। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেননি।

খবর পেয়ে সেনাসদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। এর পরপরই আন্দোলনকারীরা থানার ভবনে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে থানার ভেতরের সব আসবাব, জরুরি রেকর্ডসহ অন্যান্য দ্রব্য পুড়ে যায়। এ ছাড়া ভবনের সামনে থাকা ৮-১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে বেলা দুইটার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি অংশ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে ঢুকে পড়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি চালায়। এতে অনেক মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা ছয়জনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন শহরের থানাপাড়া এলাকার এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় রক্তের জন্য হাহাকার চলছে। হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া–২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আওয়ামী সমর্থকদের কয়েকটি দোকানে লুটপাট হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও কিছু জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ ছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শহরে আনন্দ উল্লাস করে পরে আন্দোলনকারীরা ভেড়ামারা থানার মধ্যে ঢুকে পড়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। শহরের পাবনা সুইট নামক মিষ্টির দোকানে ব্যাপক ভাংচুর করে। জনৈক এক আওয়ামী লীগ নেতার  ১ টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রি হাসানুল হক ইনুর বাড়িতে ও আজ বিকেলে  আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিভান।

প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

ফলোআপ নিউজ

কুষ্টিয়ায় পুলিশের গুলিতে শিশুসহ ছয়জন নিহত, শতাধিক গুলিবিদ্ধ

আপডেট টাইম : ১১:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অগাস্ট ২০২৪
ইসমাইল হোসেন বাবু, ষ্টাফ রিপোর্টার :
আন্দোলনের শেষ মুহূর্তে কুষ্টিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছয়জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আজ সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে পুলিশ গুলি চালালে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। আজ সন্ধ্যায়  আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়ার মডেল থানা ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর রেলগেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এ সময় পুলিশ কয়েক দফা কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। বেলা একটার পর আন্দোলনকারীদের অপর একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়। পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে আন্দোলনকারীদের হটাতে ব্যর্থ হয়। পরে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করা শুরু করে। পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেলের শব্দে থানার আশপাশের এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। এমন পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেননি।

খবর পেয়ে সেনাসদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান। এর পরপরই আন্দোলনকারীরা থানার ভবনে আগুন লাগিয়ে দেন। এতে থানার ভেতরের সব আসবাব, জরুরি রেকর্ডসহ অন্যান্য দ্রব্য পুড়ে যায়। এ ছাড়া ভবনের সামনে থাকা ৮-১০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে বেলা দুইটার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি অংশ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে ঢুকে পড়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি চালায়। এতে অনেক মানুষ গুলিবিদ্ধ হন। তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা ছয়জনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁরা হলেন শহরের থানাপাড়া এলাকার এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আবদুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় রক্তের জন্য হাহাকার চলছে। হতাহত ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতালের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

অন্যদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া–২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা–কর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আওয়ামী সমর্থকদের কয়েকটি দোকানে লুটপাট হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে অরক্ষিত মডেল থানা থেকেও কিছু জিনিসপত্র লুটপাট হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ ছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার খবর পাওয়া গেছে।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শহরে আনন্দ উল্লাস করে পরে আন্দোলনকারীরা ভেড়ামারা থানার মধ্যে ঢুকে পড়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। শহরের পাবনা সুইট নামক মিষ্টির দোকানে ব্যাপক ভাংচুর করে। জনৈক এক আওয়ামী লীগ নেতার  ১ টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। জাসদের সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রি হাসানুল হক ইনুর বাড়িতে ও আজ বিকেলে  আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নিভান।

প্রিন্ট