ফরিদপুরের চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের চর বালুধুম ও উত্তর চরমাধবদিয়া মৌজার ব্যক্তিমালিকানাধীন ৭৩ শতাংশ জমির উপরে বিবিধ হাট হিসেবে স্থানীয়দের প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠে আফজাল মন্ডলের গরুর হাট। গরু বিক্রেতা ব্যাপারীদের আকৃষ্ট করতে শুরুতে নামেমাত্র হাসিলে এখানে গরু বেচাকেনার সুবিধা ছিল। একারণে ফরিদপুর ছাড়াও পদ্মা তীরবর্তী রাজবাড়ি, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ছাড়াও যশোহর, মাগুরা এমনকি রংপুরের গরুর বেপারীরাও এখানে ট্রলার ও ট্রাকে গরু নিয়ে আসতে থাকেন। তাদের মুখে মুখেই এই হাটের কথা ছড়িয়ে পরে। এতে অল্প সসময়ের মধ্যেই হাটটি জমজমাট হয়ে উঠে। এরপর মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে এই গরুর হাটটি জেলার সবচেয়ে বড় গোহাটায় পরিণত হয়েছে। এবছর যার ইজারামূল্য দাড়িয়েছে ৯৬ লাখ টাকা।
স্থানীয়রা বলছেন, উদ্যোক্তাদের কৌশলী প্রচেষ্টা ও মুনাফার পরিবর্তে বিক্রেতাদের আকৃষ্ট করার মনোভাবের কারণেই এমনটি সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্য ধরে রাখাও চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ এবছর ইজারা মূল্য বাড়লেও আগের তুলনায় সুবিধা বাড়েনি কোন। বরং এতে খাজনা-হাসিল বৃদ্ধি পাবে। আর করোনা পরিস্থিতির কারণে গরু বেপারীদের আনাগোনা হবে কিনা সেটিরও আশঙ্কা রয়েছে।
যেভাবে হাটটির পত্তন: ফরিদপুরের দীর্ঘদিনের পুরনো টেপাখোলা গরুর হাটটিতে অতিরিক্ত হাসিল ও নানাবিধ সমস্যার বিষয়টি বিবেচনা করে চরমাধবদিয়ার এই গোহাটা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়। একরাণে টেপালো গোহাটের লোকেরা শুরু হতেই বিরোধীতা করে আসছে। তবে সেই সময়ে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবরের হস্তক্ষেপে এটির পত্তন হয়।
তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান তুহিনুর রহমান মন্ডলের নেতৃত্বে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সভায় রেজুলেশন করে উপজেলা পরিষদের অনুমোদনক্রমে ২০১৮ সালের আগস্টে হাটটির শুরু করেন। চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের উন্নয়নকাজের সমন্বয়কারী জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদের নামে সেবছর নামমাত্র ৫০ হাজার টাকা ইজারা মূল্য ধরা হয়।
তুহিনুর রহমান মন্ডল জানান, তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনের মন্ডলের নামে স্থাপিত হলেও মূলত এই হাটটি মৃত ওহিদ শেখ নামে এক ব্যক্তির দুই ছেলে আনু শেখ ও সানু শেখের সম্মতিতে তাদের জমির উপড়ে গড়ে উঠেছে। হাটটি জমে গেলে ওই এলাকার জমির দামও যাতে বেড়ে যায় এজন্য শুরুতে হতেই আমাদের লক্ষ্য ছিল হাটটি যাতে জমজমাট হয়ে উঠে। এজন্য ইজারা মূল্য কম রেখে নামমাত্র খাজনা-হাসিলে গরু বিক্রির সুবিধা রাখা হয়।
তিনি বলেন, শওকত আলী জাহিদের নামে প্রথম বছরে ইজারা নিলেও হাটটি আমরাই চালাতাম। পরের বছর আমার নামে এর ইজারা নিই। এরপর হাটটি ক্রমেই প্রসিদ্ধ হয়ে ওঠার পর গত এপ্রিল মাসে উপজেলা প্রশাসন হতে পেরিফেরি করে হাটটির চৌহদ্দি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। একইসাথে হাট সংলগ্ন মসজিদ, মাদ্রাসা কবরস্থানের জমিও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। ওই হাটের আয়ের একটি অংশ এসব প্রতিষ্ঠানেও দান করা হয়।
জানা গেছে, গত বছর হাটটির ইজারা মূল্য ছিল ৫৫ হাজার টাকা। তবে এবছর মেসার্স মন্ডল এন্ড সন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান ৯৬ লাখ টাকায় হাটটির ইজারা নেয়। একধাপে হাটের এই ইজারা মূল্য বৃদ্ধিতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, শুরু হতে নানা কৌশলে হাটটি মেলানো গেছে বলেই এর দাম বেড়েছে। এজন্য হাটের প্রতিষ্ঠাতাদের পুরস্কৃত করা উচিত। আবার ইজারা মূল্য বেড়ে গেলে অন্যান্য হাটের মতোই এখানেও বেপারীদের মোটা অংকের খাজনা ও হাসিল গুনতে হবে কিনা এমন আশঙ্কায় করছেন অনেকে। তারা জানান, করোনার কারণে গত বছর হাটটি ৬৬দিন বন্ধ ছিল।
এবছরও করোনার কারণে কোরবানীর হাট কেমন হবে তাও বোঝা যাচ্ছে না। চরাঞ্চলের এই হাটে বেপারীদের রাত্রি যাপনের তেমন সুবিধা নেই। টাকা নিয়ে ফেরার পথেও নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। শুধু রাজস্ব বৃদ্ধির দিকটিই নয়, বরং সবদিক বিবেচনা করে যেনো হাটটি ইজারা দেয়া হয় যাতে দুরদুরান্তের বেপারীরা মুখ ফিরিয়ে না নেন বলে তাদের অভিমত।
এব্যাপারে হাটের ইজারাদার মেসার্স মন্ডল এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী আরশাদ মন্ডল বলেন, ব্যবসা করতেই হাটের ইজারা নিয়েছি। এজন্য যাতে গরুর বেপারীরা এই হাটে আসেন সেদিকেও নজর রাখছি। হাটে এসে তারা যেসব অসুবিধার সম্মুখিন হবেন চেষ্টা করবো সেসব সমস্যার নিরসণের।
প্রিন্ট