ঢাকা , সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আড়ানী পৌরসভার রুস্তমপুর হাট ও বাজার পুনঃ ইজারা প্রদান Logo লালপুরে প্রকল্পের অর্থ লোপাট, গরীবের নলকূপ বিত্তবানদের বাড়িতে Logo নেদারল্যান্ডসে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ Logo সরকারি অর্থায়নের রাস্তায় চলাচলে বাঁধা, গৃহবন্দী ২০ পরিবার Logo মধুখালীতে ইয়াবাসহ আমিন খন্দকার গ্রেপ্তার Logo বদলে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুর নামঃ জানুয়ারিতে উদ্বোধন ও বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু Logo ইসকন নিষিদ্ধ ও আইনজী‌বি হত্যার বিচারের দাবিতে আলফাডাঙ্গায় বিক্ষোভ Logo রাজশাহীতে ঘুষকাণ্ডে সাসপেন্ড হিটলারঃ মামলা করে আপোস করেন নিজেই! Logo বর্ণিল ও নান্দনিক আয়োজনে বিদ্যাবাড়ি’র দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উদযাপন Logo কুষ্টিয়ায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্র-গুলিসহ শ্রমিক লীগ নেতা আটক
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

আওয়ামী লীগে পঞ্চপাণ্ডবের উত্থান ও যত অপকর্ম

-সংগৃহীত ছবি।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতেই এখন অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। প্রায় দেড় দশক টানা ক্ষমতায় থাকা দলটির সাংগঠনিক শক্তি যে আগে থেকেই ভেতরে-ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেটা এখন আবার উঠে আসছে দলের ভেতর থেকেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পরে মূলত পাঁচ নেতা দল পরিচালনা করেছেন। পঞ্চপান্ডব হিসেবে পরিচিত এই নেতাদের কারণে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিনাশ ঘটেছে বলে দাবি দলের অনেক নেতাকর্মীর।

 

এই পাঁচ নেতা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য-গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

 

দলীয় সূত্রগুলোর দাবি, ক্ষমতার রাজনীতি ওবায়দুল কাদেরসহ এই পাঁচজনকে বড় নেতা ও ক্ষমতাবান করে তুলেছিল। আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের ছাড়া অন্যদের তাদের অবদান নেই বললেই চলে। দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন তিন মাসের জন্য। এরপর চলে যান বেলজিয়াম। সেখান থেকে ফিরে ২০০২ সালে বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। এক/এগারোর সময় দলে সংস্কারের আওয়াজ উঠলে শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন হাছান মাহমুদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তাকে প্রতিমন্ত্রীও করা হয়। তবে বিপ্লব বড়ুয়া, সেলিম মাহমুদ ও আবদুস সোবহান গোলাপ মিছিল-মিটিংয়ের কর্মীও ছিলেন না।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপ্লব বড়ুয়া ও সেলিম মাহমুদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের হাত ধরে আওয়ামী লীগে জায়গা করে নেন। পরে সামরিক সচিব জয়নুল আবেদীনের সহযোগিতায় ক্ষমতাবান হন তারা। গোলাপ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হন যুক্তরাজ্যে বসবাস করার সময়ে। ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। বিপ্লব বড়ুয়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসেন ২০১৬ সালে। আর সেলিম মাহমুদ অন্তর্ভুক্ত হন সর্বশেষ ২০২২ সালের কাউন্সিলে। এর আগে তিনি উপকমিটিতে ছিলেন।

 

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র সেলিম মাহমুদ বিভাগের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক এরশাদুল বারীর তদবিরে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে পিএইচডি করতে যান। মানারাত ইউনিভার্সিটি, সিটি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন তিনি। সেলিম তার বাবা রুস্তম আলীর নামে করা কলেজ এমপিওভুক্ত করেন বিএনপি আমলে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বদান্যতায়। জ্বালানি খাতের দায়িত্ব পালনের সময়ে দুর্নীতি, মনোনয়ন ও তদবির-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মাঠের রাজনীতির অভিজ্ঞতা না থাকায় দলের নেতাকর্মীদের কাছে হাছান মাহমুদ, গোলাপ, বিপ্লব বড়ুয়া ও সেলিম মাহমুদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এ অবস্থায় নিজেদের দল ভারী করার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের একটি গ্রুপকে কাছে টেনে নিয়েছেন তারা। এটা প্রথম শুরু করেছিলেন গোলাপ। এরপর হাছান, বিপ্লব ও সেলিম একই কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি, উপকমিটিসহ বিভিন্ন স্তরের কমিটি ও সহযোগী সংগঠনে তাদের অনুসারীদের নেতা বানানো হয়। তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকও ছিলেন। ওবায়দুল কাদেরের ওপরও দলের বড় একটি অংশের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। নিজের আধিপত্য ও ক্ষমতা বাড়াতে ওই চারজনকে সঙ্গী করেন কাদের। আওয়ামী লীগে আবির্ভাব ঘটে পঞ্চপান্ডবের।

পঞ্চপান্ডব ও তাদের অনুসারীরা আওয়ামী লীগের ত্যাগী লোকজনকে ভিন্ন মতাদর্শের ট্যাগ দিয়ে দল থেকে দূরে সরিয়েছেন। তাদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন অনেক কর্মী। এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটিয়েছেন বিপ্লব ও সেলিম। মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন ছাড়াও মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল ভারী করতে এসব করতেন তারা। ঢাকায় তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা একাধিক অফিস ছিল।

 

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বাবলু বলেন, গত বছর ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিপ্লব বড়ুয়ার লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়েছিল। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ করলেও তার প্রভাবে তদন্ত হয়নি।

 

বাবলুর দাবি, বিপ্লব বড়ুয়া সাতকানিয়ায় জামায়াত ঘরানার এক নেতার মেয়ে সাজেদা সুুরতকে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করেছেন। লোহাগাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রিদুওয়ানুল হক সুজনকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি বানিয়েছেন। তার স্ত্রীকে করেছেন কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। সাতকানিয়ার জামায়াত ক্যাডার আহমুইদ্দার ডান হাত হিসেবে পরিচিত বিএনপি-নিয়ন্ত্রিত টাইগার ক্লাবের সদস্য হুমায়ুনকে লোহাগাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। বিপ্লবের হাত ধরেই সেলিম মাহমুদ ও সায়েম খান দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের কচুয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সেলিম মাহমুদ সম্পর্কে উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শাহজাহান শিশির বলেন, এমপির রোষানলে পড়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ছয়টি মামলায় আসামি হয়েছেন তিনি। এক মামলায় জামিন নিয়ে বের হলে আরেকটি মামলা করাতেন।

 

ছয় মাস জেল খেটেছেন দাবি করে তৃণমূলের এ নেতা আরও বলেন, কমপক্ষে ৫০ জন স্থানীয় নেতা সেলিম মাহমুদের মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ পদ হারিয়েছেন। তিনি নিজেও চেয়ারম্যান পদ হারিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

 

শুধু তাই নয়, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা প্রতিবেদন কোন নেতার পক্ষে দেওয়া হবে, তাও বিপ্লব ও সেলিম ঠিক করে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূল থেকে মনোনীত ব্যক্তির নাম দপ্তরে জমা পড়ার পর বাদ দেওয়া বা অন্য নাম সংযোজন করার কাজও করতেন তারা। ওবায়দুল কাদের মনোনয়ন বোর্ডে থাকায় তারা এ সুযোগ পেয়েছিলেন।

 

আওয়ামী লীগের অন্তত সাতজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ধানমন্ডি ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। পঞ্চপান্ডবের নির্দেশনায় তাদের কার্যালয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত ছিল। কেউ কেউ কার্যালয়ে ঢুকে অপমানিত হয়েছেন।

 

জানা গেছে, দুই বছর আগে অপমানিত হয়ে ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে লাঞ্ছিত করেছিলেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আড়ানী পৌরসভার রুস্তমপুর হাট ও বাজার পুনঃ ইজারা প্রদান

error: Content is protected !!

আওয়ামী লীগে পঞ্চপাণ্ডবের উত্থান ও যত অপকর্ম

আপডেট টাইম : ০২:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪
সময়ের প্রত্যাশা অনলাইন ডেস্ক :

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতেই এখন অনিশ্চিত অবস্থায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। প্রায় দেড় দশক টানা ক্ষমতায় থাকা দলটির সাংগঠনিক শক্তি যে আগে থেকেই ভেতরে-ভেতরে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেটা এখন আবার উঠে আসছে দলের ভেতর থেকেই। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পরে মূলত পাঁচ নেতা দল পরিচালনা করেছেন। পঞ্চপান্ডব হিসেবে পরিচিত এই নেতাদের কারণে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক বিনাশ ঘটেছে বলে দাবি দলের অনেক নেতাকর্মীর।

 

এই পাঁচ নেতা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য-গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

 

দলীয় সূত্রগুলোর দাবি, ক্ষমতার রাজনীতি ওবায়দুল কাদেরসহ এই পাঁচজনকে বড় নেতা ও ক্ষমতাবান করে তুলেছিল। আওয়ামী লীগের মাঠের রাজনীতিতে ওবায়দুল কাদের ছাড়া অন্যদের তাদের অবদান নেই বললেই চলে। দলের প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন তিন মাসের জন্য। এরপর চলে যান বেলজিয়াম। সেখান থেকে ফিরে ২০০২ সালে বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক হয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। এক/এগারোর সময় দলে সংস্কারের আওয়াজ উঠলে শেখ হাসিনার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন হাছান মাহমুদ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় তাকে প্রতিমন্ত্রীও করা হয়। তবে বিপ্লব বড়ুয়া, সেলিম মাহমুদ ও আবদুস সোবহান গোলাপ মিছিল-মিটিংয়ের কর্মীও ছিলেন না।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিপ্লব বড়ুয়া ও সেলিম মাহমুদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের হাত ধরে আওয়ামী লীগে জায়গা করে নেন। পরে সামরিক সচিব জয়নুল আবেদীনের সহযোগিতায় ক্ষমতাবান হন তারা। গোলাপ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হন যুক্তরাজ্যে বসবাস করার সময়ে। ২০১২ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হন। বিপ্লব বড়ুয়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসেন ২০১৬ সালে। আর সেলিম মাহমুদ অন্তর্ভুক্ত হন সর্বশেষ ২০২২ সালের কাউন্সিলে। এর আগে তিনি উপকমিটিতে ছিলেন।

 

দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র সেলিম মাহমুদ বিভাগের বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষক এরশাদুল বারীর তদবিরে স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে পিএইচডি করতে যান। মানারাত ইউনিভার্সিটি, সিটি ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন তিনি। সেলিম তার বাবা রুস্তম আলীর নামে করা কলেজ এমপিওভুক্ত করেন বিএনপি আমলে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বদান্যতায়। জ্বালানি খাতের দায়িত্ব পালনের সময়ে দুর্নীতি, মনোনয়ন ও তদবির-বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

 

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, মাঠের রাজনীতির অভিজ্ঞতা না থাকায় দলের নেতাকর্মীদের কাছে হাছান মাহমুদ, গোলাপ, বিপ্লব বড়ুয়া ও সেলিম মাহমুদের গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। এ অবস্থায় নিজেদের দল ভারী করার জন্য অনুপ্রবেশকারীদের একটি গ্রুপকে কাছে টেনে নিয়েছেন তারা। এটা প্রথম শুরু করেছিলেন গোলাপ। এরপর হাছান, বিপ্লব ও সেলিম একই কাজ করেছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি, উপকমিটিসহ বিভিন্ন স্তরের কমিটি ও সহযোগী সংগঠনে তাদের অনুসারীদের নেতা বানানো হয়। তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকও ছিলেন। ওবায়দুল কাদেরের ওপরও দলের বড় একটি অংশের নেতাকর্মী-সমর্থকরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। নিজের আধিপত্য ও ক্ষমতা বাড়াতে ওই চারজনকে সঙ্গী করেন কাদের। আওয়ামী লীগে আবির্ভাব ঘটে পঞ্চপান্ডবের।

পঞ্চপান্ডব ও তাদের অনুসারীরা আওয়ামী লীগের ত্যাগী লোকজনকে ভিন্ন মতাদর্শের ট্যাগ দিয়ে দল থেকে দূরে সরিয়েছেন। তাদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন অনেক কর্মী। এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটিয়েছেন বিপ্লব ও সেলিম। মোটা অঙ্কের টাকার লেনদেন ছাড়াও মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল ভারী করতে এসব করতেন তারা। ঢাকায় তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা একাধিক অফিস ছিল।

 

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বাবলু বলেন, গত বছর ১৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিপ্লব বড়ুয়ার লোকজন তার ওপর হামলা চালিয়েছিল। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ করলেও তার প্রভাবে তদন্ত হয়নি।

 

বাবলুর দাবি, বিপ্লব বড়ুয়া সাতকানিয়ায় জামায়াত ঘরানার এক নেতার মেয়ে সাজেদা সুুরতকে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করেছেন। লোহাগাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রিদুওয়ানুল হক সুজনকে স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি বানিয়েছেন। তার স্ত্রীকে করেছেন কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক। সাতকানিয়ার জামায়াত ক্যাডার আহমুইদ্দার ডান হাত হিসেবে পরিচিত বিএনপি-নিয়ন্ত্রিত টাইগার ক্লাবের সদস্য হুমায়ুনকে লোহাগাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। বিপ্লবের হাত ধরেই সেলিম মাহমুদ ও সায়েম খান দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের কচুয়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সেলিম মাহমুদ সম্পর্কে উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. শাহজাহান শিশির বলেন, এমপির রোষানলে পড়ে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ছয়টি মামলায় আসামি হয়েছেন তিনি। এক মামলায় জামিন নিয়ে বের হলে আরেকটি মামলা করাতেন।

 

ছয় মাস জেল খেটেছেন দাবি করে তৃণমূলের এ নেতা আরও বলেন, কমপক্ষে ৫০ জন স্থানীয় নেতা সেলিম মাহমুদের মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন। কেউ কেউ পদ হারিয়েছেন। তিনি নিজেও চেয়ারম্যান পদ হারিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।

 

শুধু তাই নয়, জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে গোয়েন্দা প্রতিবেদন কোন নেতার পক্ষে দেওয়া হবে, তাও বিপ্লব ও সেলিম ঠিক করে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূল থেকে মনোনীত ব্যক্তির নাম দপ্তরে জমা পড়ার পর বাদ দেওয়া বা অন্য নাম সংযোজন করার কাজও করতেন তারা। ওবায়দুল কাদের মনোনয়ন বোর্ডে থাকায় তারা এ সুযোগ পেয়েছিলেন।

 

আওয়ামী লীগের অন্তত সাতজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ধানমন্ডি ও বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছিলেন বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। পঞ্চপান্ডবের নির্দেশনায় তাদের কার্যালয়ে প্রবেশ নিয়ন্ত্রিত ছিল। কেউ কেউ কার্যালয়ে ঢুকে অপমানিত হয়েছেন।

 

জানা গেছে, দুই বছর আগে অপমানিত হয়ে ধানমন্ডির কার্যালয়ে দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে লাঞ্ছিত করেছিলেন।


প্রিন্ট