ঢাকা , সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভার উম্মুক্ত বাজেট পেশ Logo ভেড়ামারায় প্রতিভা মডেল একাডেমী স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ ও ফল উৎসব অনুষ্ঠিত Logo মাগুরাতে বাস মোটর সাইকেল সংঘর্ষে নিহত ৩ Logo তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশকে সমৃদ্ধশালী দেশে পরিণত করেছিলেন জিয়াউর রহমানঃ -নার্গিস বেগম Logo দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ উন্মুক্ত করেছিলেন জিয়াউর রহমানঃ -অমিত Logo লালপুর হাসপাতালে দুইদিনে ৯০ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি, সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা Logo নতুন ৬ ধরনের নোটের নকশা উন্মোচন করলো বাংলাদেশ ব্যাংক Logo বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেঃ -বিজিএমইএ সভাপতি কাজী মনির Logo তানোরে অর্কিড স্কুল এন্ড কলেজে ফল উৎসব Logo দৌলতপুরে পুষ্টি সপ্তাহ পালিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কাদেরের নেতৃত্বে দল চালাতেন পাঁচ নেতা

 

এই পাঁচ নেতা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য-গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। গত ৫ আগস্ট প্রবল গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অন্তত দুই ডজন নেতাকর্মীর দাবি, দলের নিয়মতান্ত্রিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ছেদ পড়েছে পঞ্চপান্ডবের কারণে। দলীয় পদ দেওয়া, দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি তারাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। শেষ দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দল কাকে মনোনয়ন দেবে না দেবে, সেটাও ঠিক করেছেন এই পাঁচ নেতা। পছন্দের লোককে নেতা বানিয়ে নিজেদের দল ভারী করেছেন তারা। বিএনপিসহ অন্য দলের সঙ্গে বিরোধ-মীমাংসার ক্ষেত্রেও তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। এই পাঁচ নেতার সবাই আত্মগোপনে থাকায় বা বিদেশে চলে যাওয়া তাদের সঙ্গে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, একসময় সাংগঠনিক জেলার কমিটি অনুমোদন দিতেন দলের সভাপতি। তার স্বাক্ষরেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হতো। তিন/চার বছর ধরে কমিটি অনুমোদন করতেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুমোদিত কমিটিতে লেখা থাকত সভাপতির সম্মতিক্রমে। এই নেতা বলেন, দলীয় এক সভায় প্রসঙ্গটি টেনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আগে জেলা কমিটি তার স্বাক্ষরে অনুমোদন হতো। এখন সেটিও আর লাগে না। সভাপতির অনুমোদনক্রমে লিখে প্রকাশ করে দেওয়া হয়। তার দাবি, এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে জেলা কমিটিগুলোয় পছন্দের লোকদের নেতা বানাতেন পঞ্চপান্ডব। তাদের কেউ কেউ এভাবে ‘কমিটি বাণিজ্য’ করার সুযোগ পেয়েছেন।

 

আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পদধারী বেশিরভাগ নেতার সক্রিয় রাজনীতি করার সুযোগ হয়নি। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলেও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মতামত দেওয়ার সুযোগ হতো না কমপক্ষে ৬০ নেতার। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘টানা তিনবার একই পদে আছি। গত পাঁচ বছর দলীয় কোনো জনসভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়নি আমার।’ তার দাবি, অন্তত ৩০ জন নেতা এমন নিষ্ক্রিয় হয়ে বসেছিলেন বছরের পর বছর।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদপদবি থাকলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছিল না অন্তত ৫০ নেতার। সভা-সমাবেশে পেছনের সারিতে বসে থেকে অলস সময় কাটানো ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আসা-যাওয়া করা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না তাদের।

 

পঞ্চপান্ডবের বাইরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম কিছুটা সক্রিয় ছিলেন। তবে তাদের পঞ্চপাণ্ডবের বশ্যতা শিকার করে থাকতে হয়েছে।

অন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ ও আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়া ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতা সারা দেশের নেতাকর্মী-সমর্থকদের কাছেও তেমন পরিচিত ছিলেন না। কারণ, পঞ্চপাণ্ডবের বাইরে আর কোনো কেন্দ্রীয় নেতার কাছে সাংগঠনিক কোনো ক্ষমতা ছিল না। ২০১৬ সালের পর জেলা-উপজেলায় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক সফরের নজির নেই। কারণ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ইচ্ছার বাইরে কোনো কেন্দ্রীয় নেতার সাংগঠনিক সফরের সুযোগ মিলত না। কাদেরের সরকারি দায়িত্ব পালন ও শারীরিক কারণে সাংগঠনিক সফর বন্ধ হয়ে যায়।

 

দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতীয়-আন্তর্জাতিক কোনো ইস্যুতে সম্মিলিতভাবে আলোচনা-পরামর্শ এসবের কিছুই হতো না কয়েক বছর ধরে। দলীয় কোনো ফোরামে, সভা-সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরের ইচ্ছার বাইরে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যেত না। গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিলেও পরের দিন সাধারণ সম্পাদকের রোষানলে পড়তে হতো।

 

আওয়ামী লীগ সূত্রগুলোর দাবি, ২০২০ সালের পরে আওয়ামী লীগে পঞ্চপান্ডবের ক্ষমতা বেড়ে যায়। তারা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে ঘিরে থাকায় অন্য নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কারণ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা, যোগাযোগ করা এ পাঁচ নেতার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করত। দলীয় সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার পর পঞ্চপান্ডবের মাধ্যমে পাওয়া তার নির্দেশনা সম্পর্কে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ থাকত না অন্য কারও। এমন পরিস্থিতিতে, আলোচনা ছাড়াই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে আওয়ামী লীগ।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ সীমিত হয়ে যায়। নিয়মিত আর দেখা করা যেত না। এই ফাঁকে পঞ্চপান্ডবের আধিপত্য ও ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাদের সঙ্গে দলীয় সভাপতির যখন-তখন দেখা হওয়া আর অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা না হওয়ার ফলে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে শেখ হাসিনা অনেক কিছুই আংশিক জানতেন। রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় দলের সাংগঠনিক বিষয়েও খোঁজখবর রাখা হতো না তার। ওই পাঁচজনের ১০ চোখে যা দেখতেন তাই বিশ্বাস করতেন তিনি।

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দলের সভাপতিকে ওই পাঁচ নেতা কখনো সত্য তথ্য দিয়েছেন, আমি দেখিনি। অর্ধ সত্য বা সত্য আড়াল করেই সবকিছু তাকে জানানো হতো।’

 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতার দাবি, পঞ্চপাণ্ডবের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে অনেকেই বঞ্চনার শিকার হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। দলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

 

এন আই সৈকত নামে এক সমর্থক গত ২৬ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সমস্যা নিজেদের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বান্দরদের মাথায় তোলা।… বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমস্যা ছিল তৃণমূলকর্মীদের মূল্যায়ন না করে পদবাণিজ্য করা।’

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, একসময়ে এসে দেখা গেল ক্ষমতার আওয়ামী লীগের রথী-মহারথীরা সব শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতি অসম্মান শুরু করলেন। তার ভাষ্য, ক্ষমতাসীন হলে আওয়ামী লীগ ভয়ংকর হয়ে ওঠে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

নাটোরের বড়াইগ্রাম পৌরসভার উম্মুক্ত বাজেট পেশ

error: Content is protected !!

কাদেরের নেতৃত্বে দল চালাতেন পাঁচ নেতা

আপডেট টাইম : ০২:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪
সময়ের প্রত্যাশা অনলাইন ডেস্ক :

 

এই পাঁচ নেতা হলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য-গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। গত ৫ আগস্ট প্রবল গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অন্তত দুই ডজন নেতাকর্মীর দাবি, দলের নিয়মতান্ত্রিক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে ছেদ পড়েছে পঞ্চপান্ডবের কারণে। দলীয় পদ দেওয়া, দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া বা না দেওয়ার বিষয়টি তারাই নিয়ন্ত্রণ করতেন। শেষ দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসেবে দল কাকে মনোনয়ন দেবে না দেবে, সেটাও ঠিক করেছেন এই পাঁচ নেতা। পছন্দের লোককে নেতা বানিয়ে নিজেদের দল ভারী করেছেন তারা। বিএনপিসহ অন্য দলের সঙ্গে বিরোধ-মীমাংসার ক্ষেত্রেও তারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। এই পাঁচ নেতার সবাই আত্মগোপনে থাকায় বা বিদেশে চলে যাওয়া তাদের সঙ্গে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

 

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর এক সদস্য গণমাধ্যমকে বলেন, একসময় সাংগঠনিক জেলার কমিটি অনুমোদন দিতেন দলের সভাপতি। তার স্বাক্ষরেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হতো। তিন/চার বছর ধরে কমিটি অনুমোদন করতেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অনুমোদিত কমিটিতে লেখা থাকত সভাপতির সম্মতিক্রমে। এই নেতা বলেন, দলীয় এক সভায় প্রসঙ্গটি টেনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আগে জেলা কমিটি তার স্বাক্ষরে অনুমোদন হতো। এখন সেটিও আর লাগে না। সভাপতির অনুমোদনক্রমে লিখে প্রকাশ করে দেওয়া হয়। তার দাবি, এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে জেলা কমিটিগুলোয় পছন্দের লোকদের নেতা বানাতেন পঞ্চপান্ডব। তাদের কেউ কেউ এভাবে ‘কমিটি বাণিজ্য’ করার সুযোগ পেয়েছেন।

 

আওয়ামী লীগের ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পদধারী বেশিরভাগ নেতার সক্রিয় রাজনীতি করার সুযোগ হয়নি। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম হলেও সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে মতামত দেওয়ার সুযোগ হতো না কমপক্ষে ৬০ নেতার। দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘টানা তিনবার একই পদে আছি। গত পাঁচ বছর দলীয় কোনো জনসভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়নি আমার।’ তার দাবি, অন্তত ৩০ জন নেতা এমন নিষ্ক্রিয় হয়ে বসেছিলেন বছরের পর বছর।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদপদবি থাকলেও সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ছিল না অন্তত ৫০ নেতার। সভা-সমাবেশে পেছনের সারিতে বসে থেকে অলস সময় কাটানো ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় আসা-যাওয়া করা ছাড়া আর কোনো কাজ ছিল না তাদের।

 

পঞ্চপান্ডবের বাইরে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম কিছুটা সক্রিয় ছিলেন। তবে তাদের পঞ্চপাণ্ডবের বশ্যতা শিকার করে থাকতে হয়েছে।

অন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ ও আট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ছাড়া ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক নেতা সারা দেশের নেতাকর্মী-সমর্থকদের কাছেও তেমন পরিচিত ছিলেন না। কারণ, পঞ্চপাণ্ডবের বাইরে আর কোনো কেন্দ্রীয় নেতার কাছে সাংগঠনিক কোনো ক্ষমতা ছিল না। ২০১৬ সালের পর জেলা-উপজেলায় কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ সাংগঠনিক সফরের নজির নেই। কারণ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ইচ্ছার বাইরে কোনো কেন্দ্রীয় নেতার সাংগঠনিক সফরের সুযোগ মিলত না। কাদেরের সরকারি দায়িত্ব পালন ও শারীরিক কারণে সাংগঠনিক সফর বন্ধ হয়ে যায়।

 

দলের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জাতীয়-আন্তর্জাতিক কোনো ইস্যুতে সম্মিলিতভাবে আলোচনা-পরামর্শ এসবের কিছুই হতো না কয়েক বছর ধরে। দলীয় কোনো ফোরামে, সভা-সমাবেশে ওবায়দুল কাদেরের ইচ্ছার বাইরে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যেত না। গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিলেও পরের দিন সাধারণ সম্পাদকের রোষানলে পড়তে হতো।

 

আওয়ামী লীগ সূত্রগুলোর দাবি, ২০২০ সালের পরে আওয়ামী লীগে পঞ্চপান্ডবের ক্ষমতা বেড়ে যায়। তারা দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে ঘিরে থাকায় অন্য নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কারণ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা, যোগাযোগ করা এ পাঁচ নেতার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করত। দলীয় সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাওয়ার পর পঞ্চপান্ডবের মাধ্যমে পাওয়া তার নির্দেশনা সম্পর্কে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের সুযোগ থাকত না অন্য কারও। এমন পরিস্থিতিতে, আলোচনা ছাড়াই সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে আওয়ামী লীগ।

 

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আমাদের সাক্ষাৎ সীমিত হয়ে যায়। নিয়মিত আর দেখা করা যেত না। এই ফাঁকে পঞ্চপান্ডবের আধিপত্য ও ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাদের সঙ্গে দলীয় সভাপতির যখন-তখন দেখা হওয়া আর অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দেখা না হওয়ার ফলে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে শেখ হাসিনা অনেক কিছুই আংশিক জানতেন। রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় দলের সাংগঠনিক বিষয়েও খোঁজখবর রাখা হতো না তার। ওই পাঁচজনের ১০ চোখে যা দেখতেন তাই বিশ্বাস করতেন তিনি।

 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দলের সভাপতিকে ওই পাঁচ নেতা কখনো সত্য তথ্য দিয়েছেন, আমি দেখিনি। অর্ধ সত্য বা সত্য আড়াল করেই সবকিছু তাকে জানানো হতো।’

 

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেতার দাবি, পঞ্চপাণ্ডবের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে অনেকেই বঞ্চনার শিকার হয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। দলে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

 

এন আই সৈকত নামে এক সমর্থক গত ২৬ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সমস্যা নিজেদের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বান্দরদের মাথায় তোলা।… বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমস্যা ছিল তৃণমূলকর্মীদের মূল্যায়ন না করে পদবাণিজ্য করা।’

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, একসময়ে এসে দেখা গেল ক্ষমতার আওয়ামী লীগের রথী-মহারথীরা সব শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতি অসম্মান শুরু করলেন। তার ভাষ্য, ক্ষমতাসীন হলে আওয়ামী লীগ ভয়ংকর হয়ে ওঠে।


প্রিন্ট