জাতীয় পরিচয় পত্রে মৃত ভাইয়ের নামে নিজের নাম পরিবর্তন করে সৎ ভাইয়ের জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে অপর এক ভাইয়ের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার পলাশবাড়িয়া ইউনিয়নের লক্ষিপুর গ্রামে। এ নিয়ে এলকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্ঠি হয়েছে। ক্রমাগত বিবাদে জড়িয়ে পড়ছে পরিবারটি। যে কোন সময় ওই পরিবারে ঘটতে পারে অপ্রীতিকর ঘটনা। এ বিষয়ে এলকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার চেষ্টা চালিয়ে কোন সমাধান দিতে পারেন নি। তবে বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেকেই পক্ষে বিপক্ষে বক্তব্য রেখেছেন।
তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়ভাই আছাদুজ্জামান বাবলুর অভিযোগ থেকে জানা যায়, তার পিতা লক্ষিপুর গ্রামের আব্দুল হাকিম শেখ ২য় স্ত্রী রাবেয়া বেগমসহ তিন ছেলে এবং দ্ইু কণ্যা সন্তান রেখে চাকুরিরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে ১৯৭৪ সাালের ১০ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর পর তিনি ২য় বিয়েতে আবদ্ধ হন।
প্রথম স্ত্রী মাজু বিবির চার সন্তানের মধ্যে সাহিদুজ্জামান ৬ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা যায়।
এ ঘটনার প্রায় ৫০ বছর পর অপর ভ্রাতা ২য় স্ত্রীর সন্তান লাবলু শেখ মৃত সৎ ভাইয়ের অংশের জমি দখল নিতে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসের যোগসাজসে দাখিল পাশের ভূয়া সনদ এবং এবং জন্ম নিবন্ধন দাখিল করে জাতীয় পরিচয় পত্রে নিজের নাম পরিবর্তন করে মৃত সৎ ভাই সাহিদুজ্জামান সংশোধন করেন। দাখিলকৃত সনদে তার জন্ম তারিখ দেওয়া আছে ৮ মার্চ ১৯৭৯ অথচ তার পিতার মৃত্যু হয় ১০ অক্টোবর ১৯৭৪। পিতার মৃত্যুর ৫ বছর পর সার্টিফিকেটে তার জন্ম তারিখ দেখিয়ে নির্বাচন অফিস থেকে জাতিয় পরিচয় পত্রে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে এবং নির্বাচন অফিসারের এই অপকর্মের বিষয়ে জনমনে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
১৯৯৫ সাল থেকে ২০২১ সাল প্রর্যন্ত যার জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ভোটার তালিকায় তার নাম মো. লাবলু শেখ থাকে। যার পরিচয় পত্র নং- ৫৫০৭৩৫৬১৮৬৭৫। কিন্তু ২০২৩ সালে আইডি নাম্বার ঠিক রেখে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করে তার নাম মো. সাহিদুজ্জামান কিভাবে করা হয় এ নিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এছাড়া পরিচয় পত্রে তার নাম সাহিদুজ্জামান করা হলেও পূর্বের ভোটার আইডি কার্ডের সাথে মিল রেখে লাভলু নামে স্বাক্ষর করা হয়েছে।
অন্যদিকে- লাভলু শেখ ওরফে সাহিদুজ্জামানের ষড়যন্ত্রে শরিকদের জমি দখল করায় উপায়ান্তর না পেয়ে অন্য ভাই-বোনেরা পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে আদালতের শরণাপন্ন হয়। দীর্ঘদিন মামলা চলার পর বিজ্ঞ বিচারক সাহিদুজ্জামান মৃত্যুবরণ করায় ওই সম্পত্তি তার একভাই আছাদুজ্জামান বাবলু, দুই বোন ফাতেমা বেগম এবং নুরজাহান বেগম কে ৩০ দিনের মধ্যে বন্টনের নির্দেশ দেন। আদালতের রায়ের পর শরিকগণ পৈত্রিক সম্পত্তি দখলে ব্যর্থ হলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অভিযোগ করলেও তারা কোন সমাধান দিতে পারেন নাই। সেখানে লাবলু শেখ কাগজ-পত্র দেখিয়ে নিজেকে সাহিদুজ্জামান প্রমানের চেষ্টা করেন এবং তিনি ওই সম্পত্তির মালিক বলে দাবি করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাহিদুজ্জামান লাভলু শেখ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার সৎ ভাই-বোনেরা পৈত্রিক সম্পত্তি জবর দখল নিতে দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। তিনি আরো বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া জন্ম নিবন্ধন এবং আমার মাদ্রাসার সার্টিফিকেট অনুযায়ি জাতীয় পরিচয় পত্রে আমার নামের সংশোধনী আনা হয়েছে। তবে মৃত ভাইয়ের নাম শহিদুজ্জামান ছিল কিনা এটা তার জানা নাই।
প্রতিবেশী বিনোদপুর বিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসকে নুরুজ্জামান বলেন, জালিয়াতি করে লাভলু শেখ মৃত ভাইয়ের নামের জাতীয় পরিচয় পত্রে নাম সংশোধন করেছে। তাদের পরিবারের এ বিষয়টি সমাধানে আমরা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিরা একাধিকবার শালিসে বসলেও সমাধানে ব্যর্থ হয়েছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান মিনা বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে খতিয়ে দেখলে বিস্তারিত জানা যাবে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. মিলন মিয়া বলেন, এটা আমার আগের দ্বায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা করে গেছেন। তবে এর দ্বায়ভার নির্বাচন অফিসের না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান যেভাবে তার জন্ম সনদ প্রদান করেছেন; আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় পরিচয় পত্রে সেভাবেই তার তার নাম সংশোধন হয়ে এসেছে।
প্রিন্ট