দেশে মোট সরকারি চিনিকল ১৫টি। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে ৬টি আর চালু আছে ৯টি। বন্ধ চিনিকলগুলোকে সব দিক থেকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। চালু চিনিকলগুলোর মধ্যে একমাত্র দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোং ছাড়া অন্যগুলোকে বছর বছর গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা লোকসান।
এ ছাড়া বছরের পর বছর অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। এসব চিনিকলের মধ্যে কুষ্টিয়া চিনিকলের চিত্র তুলে ধরা হলো।
অর্থ সংকট ও দেনার দায়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৬০ বছরের পুরোনো কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী চিনিকল। টানা ৩ মৌসুম আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রয়েছে চিনিকলটিতে। ২০০১-০২ অর্থবছর থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত চিনিকলটিতে লোকসান হয়েছে ৪৬১ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া, পাবনা, পঞ্চগড়, শ্যামপুর (রংপুর), রংপুর ও সেতাবগঞ্জ (দিনাজপুর) চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন এই শিল্পে জড়িত কৃষক ও শ্রমিকরা।
বর্তমানে নষ্ট হচ্ছে কুষ্টিয়া চিনিকলের ভারী যন্ত্রপাতিসহ শতকোটি টাকার স্থাপনা। অন্যদিকে এখনও বকেয়া অবসরপ্রাপ্তদের গ্র্যাচুইটি। বন্ধের সময় কুষ্টিয়া চিনিকল কর্তৃপক্ষ বলেছিল, বিকল্প কলকারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যেখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তবে সেই আশ্বাস আশ্বাসই থেকে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া চিনিকলে ২০২০-২১ মৌসুম থেকে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। এই মিলের দৈনিক মাড়াই ও উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১ হাজার ৫০০ টন আর বার্ষিক মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১৫ হাজার টন। কিন্তু বন্ধের ৩ বছর পরও মিলটি চালু করতে সরকার কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় মিলজোনের আওতায় আখ উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পেয়েছে। টানা মৌসুম বন্ধ থাকায় চিনিকলের অভ্যন্তরে সুনসান নীরবতা। মিলের শতাধিক কোয়ার্টারও বর্তমানে পরিত্যক্ত।
জনবল কাঠামো অনুযায়ী কুষ্টিয়া চিনিকলে ১ হাজার ৭৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে বর্তমারে ৬৬ জন মিলের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছেন। এদের মধ্যে ৫ জন কর্মকর্তা, ২৬ জন স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারী এবং ৩৫ জন চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক। এই চিনিকলটি বন্ধ হওয়ার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশের অন্য চালু চিনিকলে সংযোজন করা হলেও বিপদে পড়েন দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিকরা। চিনি কলে কাজ না থাকায় বিকল্প পেশায় ছুটছেন তারা।
প্রিন্ট