সেলিম সানোয়ার পলাশঃ
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ডিজিটাল প্রিপেইড বিদ্যুৎ মিটার স্থাপনকে কেন্দ্র করে তীব্র জনঅসন্তোষ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) কর্তৃক স্থাপিত প্রিপেইড মিটার বাতিলের দাবিতে একদিকে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান, অন্যদিকে মিটার বসাতে গিয়ে এলাকাবাসীর বাধার মুখে পড়ে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে নেসকোর কর্মচারীরা।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে গোদাগাড়ী পৌর এলাকার সিএন্ডবি গড়ের মাঠ গ্রামে প্রিপেইড মিটার স্থাপনকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের বাধার মুখে পড়ে নেসকোর কর্মচারীরা কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হন। এ সময় নেসকোর একটি গাড়ি কিছু সময়ের জন্য এলাকাবাসী আটকে রাখেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালে কোনো পূর্ব নোটিশ বা আলোচনা ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। দিনভর বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। সন্ধ্যায় প্রিপেইড মিটার বসানোর চেষ্টা করলে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বিদ্যুৎ গ্রাহক মো. রাসেল বলেন, কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই সকাল থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রিপেইড মিটার নিয়ে আমাদের অনেক প্রশ্ন থাকলেও তার কোনো জবাব দেওয়া হয়নি।
আরেক গ্রাহক মো. আরাফাত বলেন, প্রিপেইড মিটার বসালে বিদ্যুৎ বিল আরও বাড়বে এই আশঙ্কা আমাদের সবার মধ্যেই আছে। আলোচনা ছাড়া জোর করে মিটার বসানো আমরা মানব না। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দিলে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা করে নেসকোর কর্মচারীরা এলাকা ত্যাগ করেন। এ ঘটনায় এলাকায় কিছু সময়ের জন্য থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে।
এনিয়ে গত রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় গোদাগাড়ী সদর ডাইংপাড়া মোড়ে ‘গোদাগাড়ী নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি’-র ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রমকে জনস্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে তিন দফা দাবি উত্থাপন করেন।
দাবিগুলো হলো—
১) ডিজিটাল প্রিপেইড বিদ্যুৎ মিটার স্থাপন কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা;
২) ৫০ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের ক্ষেত্রে একই মূল্যহার নির্ধারণ করা;
৩) গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া ডিমান্ড চার্জ বাতিল করা;
বক্তারা অভিযোগ করেন, প্রিপেইড মিটার চালুর পর স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিদ্যুৎ ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত বিদ্যুৎ ব্যবহারের হিসাব না বুঝেই গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে বলেও তারা দাবি করেন।
তারা আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও অফিসে এখনো পোস্ট-পেইড মিটার চালু থাকলেও সাধারণ জনগণের ওপর প্রিপেইড মিটার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা স্পষ্ট বৈষম্যমূলক। পর্যাপ্ত জরিপ, জনমত যাচাই ও গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই জোরপূর্বক এই মিটার বসানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়।
মানববন্ধন শেষে একটি প্রতিনিধি দল গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুস সাদাত রত্নের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। স্মারকলিপিতে উত্থাপিত দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানানো হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন গোদাগাড়ী নাগরিক স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন বিশ্বাস। বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের রাজশাহী জেলা সভাপতি ড. মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, গোদাগাড়ী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান, গোদাগাড়ী শিশু নিকেতনের সাবেক অধ্যক্ষ এস এম বরজাহান আলী পিন্টুসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
এ বিষয়ে নেসকোর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো লিখিত বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সরকারিভাবে প্রিপেইড মিটার স্থাপন কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা দ্রুত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ এবং গ্রাহকবান্ধব ও স্বচ্ছ সমাধান দাবি করেছেন। তারা জানান, বিদ্যুৎ একটি মৌলিক সেবা এই সেবার নামে সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা চাপানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রিন্ট

সদরপুরে নিম্ম আয়ের মানুষের ভীড় বাড়ছে ফুটপাতের পুরানো শীতবস্ত্রের দোকানে 
সেলিম সানোয়ার পলাশ, গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি 




















