ঢাকা , মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo সদরপুরে নিম্ম আয়ের মানুষের ভীড় বাড়ছে ফুটপাতের পুরানো শীতবস্ত্রের দোকানে Logo মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু Logo মধুখালীতে দোয়া মাহফিল ও গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে মতবিনিময় Logo বাঘায় মুক্তিযোদ্ধার সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী চাঁদের মতবিনিময় Logo শিবগঞ্জে চোখ উপড়ে পাহারাদারকে হত্যা Logo মধুখালীতে সাংবাদিক সাগর চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল চুরি Logo বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা  Logo বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য পালশা ডে নাইট শর্ট পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo তানোর বিএনপির রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরকে দায়িত্বশীল পদে দেখতে চায় তৃণমুল Logo কালুখালীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

বিলুপ্ত হতে চলেছে চরের ঐতিহ্য মহিষের খামার

আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতে পাল্টে দিতে পারে মহিষ খামারিদের জীবন

আব্দুল হামিদ মিঞাঃ

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল। সবুজ ঘাস খেয়ে পেট জুড়াত মহিষের দল। সেই চরে মহিষ ছেড়ে দিতেন রাখালরা। এক সময় মহিষের বাথান (গোচারণভূমি বা আবাসস্থল) ছিল পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরে। একেকটি বাথান থেকে দিনে উৎপাদন হতো কয়েক টন দুধ। সেই দুধের ঘি আর দইয়ের খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। সেই ঐতিহ্য এখন আর নেই। নদী ভাঙন ছাড়াও চাষাবাদ আর ঘরবাড়িতে চরাঞ্চলে এখন আর খালি জায়গা নেই। ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে চরের ঐতিহ্য। চরাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ানো মহিষ এখন জায়গা করে নিয়েছে বসতবাড়ি কিংবা খামারে।
ব্যক্তি উদ্যোগে মহিষের খামার গড়ে তোলায় সোনালি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতে পাল্টে দিতে পারে মহিষ খামারিদের জীবনধারা।

পদ্মার চর ঘুরে জানা যায়, একসময় বাথানেই দেশি জাতের মহিষ পালন করতেন পদ্মার চরের পলাশিফতেপুর গ্রামের আইনুল হক। এখন নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন মহিষের খামার। প্রশিক্ষণ ছাড়াই পরিবেশ সম্মতভাবে তাঁর খামারে ৯টি গাভী মহিষ আছে। প্রতিটি মহিষ থেকে ৩ থেকে ৬ কেজি দুধ পান। প্রতি কেজি দুধ বিক্রি হয় ৬০/৭০ টাকা। খরচ বাদে বছরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হয়। আতার পাড়ার মোহাম্মদ আলীর খামারে দেশি জাতের ১টি ষাড় মহিষসহ ১৪টা মহিষ আছে। দুধ দেয় এমন মহিষ রয়েছে ৭টি। মহিষ দেখা শোনার জন্য ৮ হাজার টাকা বেতনে একজন রাখাল রেখেছেন ।

লাভের হিসাব তুলে ধরে মোহাম্মদ আলী বলেন, মহিষ পালনে পরিশ্রমের তুলনায় লাভ বেশি, খরচও কম। গরু পালনে খরচের তুলনায় লাভ কম হয়। কয়েক বছর ধরে মহিষ পালন করছেন। তিনি বলেন,ঠিক মতো খাবার খাওয়াতে পারলে দুধ ছাড়াও প্রতিটি মহিষ ২/৩ লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়।
আরেক মালিক খোশ মোহাম্মদ এর খামারে ১টি ষাড় মহিষসহ ১১ টি মহিষ আছে। এর মধ্যে দুধের ৬টি। জসিম উদ্দীন নামে আরেক মহিষ মালিক জানান, তার খামারের মহিষগুলো নিজেই দেখা শোনা করেন। প্রতিটি মহিষের পেছনে প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ৩০০শ টাকা। ১০০শ’ খড়(আউড়) কিনতে হয় ১৫০০শ টাকায়। এখন দুধের দাম কম।

মহিষের পাল নিয়ে কয়েকজন রাখালকে দেখা গেল ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সীমান্তের আতারপাড়া এলাকার মাঠে। তাদের একজন রাখাল ১৫ বছর বয়সের সাগর আলী। পড়ালেখা বাদ দিয়ে মহিষ চরানোর চাকরি করে বছরে বেতন পান ৬হাজার টাকা। মহিষ মালিক আব্দুল করিমের খামারের মহিষগুলো দেখা শোনা করেন। তিনি জানান,তার মালিকের মহিষ আছে ৮টি। সাগর আলীর মতো মহিষ চরানোর চাকরি করেন ১৪ বছরের ছানা আলী। বেতন বাদে খাওয়া দাওয়া করেন মালিকের বাড়িতে। তাদের ভাষ্য, চাকরি করে ভালো দুধ খাওয়া হয়।

রাখাল শেমা জানান, আমাগো চরে এখন আর খালি জায়গা নেই। তবে জেগে উঠা চরে যেসব জায়গা পান সেখানে মহিষের দল নিয়ে ছুটে যান।
মালিকরা জানান,মহিষের গোবর জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে তাদের প্রত্যেকের বছরে কয়েক হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। দুধ বিক্রি বাদে লাভ হয় মহিষের বাচ্ছা বিক্রি করে। পদ্মার চরাঞ্চলে তাদের মতো মহিষ খামার দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার নারি-পুরুষ। তবে উন্নত জাতের মহিষের প্রজনন খামার গড়ে এখানো উঠেনি ।

জানা যায়, দেশি জাতের তুলনায় মুররাহ্ মহিষে বেশি দুধ ও মাংস পাওয়া যায়। দেশি জাতের একটি মা মহিষ ৩ থেকে ৬ কেজি দুধ দিলেও মুররাহ্ মহিষ থেকে ১০-১২ কেজি দুধ আবার ১৫-২৫ মণ পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায় মুররাহ্ জাতে।

 

অনেকেই বলেছেন,খামারিদের আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থাসহ পরিবেশ সম্মত মহিষের বাসস্থান নিশ্চিত করলে উন্নত জাতের মহিষ পালনকারিদের সংখ্যা বাড়বে। মহিষের সংখ্যা বাড়লে পয়োবর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি, কেঁচো সার তৈরি করা সম্ভব।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ১৩টি মহিষের খামার রয়েছে। এছাড়াও ২/৩ টা করে অনেকেই বাড়িতে লালন পালন করছেন।সব মিলে উপজেলায় ১ হাজার মহিষ রয়েছে। সরকারি মূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কৃমিনাশকসহ সরকারিভাবে সরবরাহকৃত অন্যান্য ঔষধ বিনামুল্যে দেওয়া হয়। মহিষ প্রজনন কেন্দ্র নেই। তবে ঘাস চাষ ও ঘাস প্রক্রিয়াজাতকরণ উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন দশজন

error: Content is protected !!

বিলুপ্ত হতে চলেছে চরের ঐতিহ্য মহিষের খামার

আপডেট টাইম : ০৮:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
আব্দুল হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি :

আব্দুল হামিদ মিঞাঃ

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চল। সবুজ ঘাস খেয়ে পেট জুড়াত মহিষের দল। সেই চরে মহিষ ছেড়ে দিতেন রাখালরা। এক সময় মহিষের বাথান (গোচারণভূমি বা আবাসস্থল) ছিল পদ্মার বুকে জেগে ওঠা চরে। একেকটি বাথান থেকে দিনে উৎপাদন হতো কয়েক টন দুধ। সেই দুধের ঘি আর দইয়ের খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। সেই ঐতিহ্য এখন আর নেই। নদী ভাঙন ছাড়াও চাষাবাদ আর ঘরবাড়িতে চরাঞ্চলে এখন আর খালি জায়গা নেই। ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে চরের ঐতিহ্য। চরাঞ্চলে দাপিয়ে বেড়ানো মহিষ এখন জায়গা করে নিয়েছে বসতবাড়ি কিংবা খামারে।
ব্যক্তি উদ্যোগে মহিষের খামার গড়ে তোলায় সোনালি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত জাতে পাল্টে দিতে পারে মহিষ খামারিদের জীবনধারা।

পদ্মার চর ঘুরে জানা যায়, একসময় বাথানেই দেশি জাতের মহিষ পালন করতেন পদ্মার চরের পলাশিফতেপুর গ্রামের আইনুল হক। এখন নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন মহিষের খামার। প্রশিক্ষণ ছাড়াই পরিবেশ সম্মতভাবে তাঁর খামারে ৯টি গাভী মহিষ আছে। প্রতিটি মহিষ থেকে ৩ থেকে ৬ কেজি দুধ পান। প্রতি কেজি দুধ বিক্রি হয় ৬০/৭০ টাকা। খরচ বাদে বছরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হয়। আতার পাড়ার মোহাম্মদ আলীর খামারে দেশি জাতের ১টি ষাড় মহিষসহ ১৪টা মহিষ আছে। দুধ দেয় এমন মহিষ রয়েছে ৭টি। মহিষ দেখা শোনার জন্য ৮ হাজার টাকা বেতনে একজন রাখাল রেখেছেন ।

লাভের হিসাব তুলে ধরে মোহাম্মদ আলী বলেন, মহিষ পালনে পরিশ্রমের তুলনায় লাভ বেশি, খরচও কম। গরু পালনে খরচের তুলনায় লাভ কম হয়। কয়েক বছর ধরে মহিষ পালন করছেন। তিনি বলেন,ঠিক মতো খাবার খাওয়াতে পারলে দুধ ছাড়াও প্রতিটি মহিষ ২/৩ লাখ টাকায় বিক্রি করা যায়।
আরেক মালিক খোশ মোহাম্মদ এর খামারে ১টি ষাড় মহিষসহ ১১ টি মহিষ আছে। এর মধ্যে দুধের ৬টি। জসিম উদ্দীন নামে আরেক মহিষ মালিক জানান, তার খামারের মহিষগুলো নিজেই দেখা শোনা করেন। প্রতিটি মহিষের পেছনে প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ৩০০শ টাকা। ১০০শ’ খড়(আউড়) কিনতে হয় ১৫০০শ টাকায়। এখন দুধের দাম কম।

মহিষের পাল নিয়ে কয়েকজন রাখালকে দেখা গেল ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ সীমান্তের আতারপাড়া এলাকার মাঠে। তাদের একজন রাখাল ১৫ বছর বয়সের সাগর আলী। পড়ালেখা বাদ দিয়ে মহিষ চরানোর চাকরি করে বছরে বেতন পান ৬হাজার টাকা। মহিষ মালিক আব্দুল করিমের খামারের মহিষগুলো দেখা শোনা করেন। তিনি জানান,তার মালিকের মহিষ আছে ৮টি। সাগর আলীর মতো মহিষ চরানোর চাকরি করেন ১৪ বছরের ছানা আলী। বেতন বাদে খাওয়া দাওয়া করেন মালিকের বাড়িতে। তাদের ভাষ্য, চাকরি করে ভালো দুধ খাওয়া হয়।

রাখাল শেমা জানান, আমাগো চরে এখন আর খালি জায়গা নেই। তবে জেগে উঠা চরে যেসব জায়গা পান সেখানে মহিষের দল নিয়ে ছুটে যান।
মালিকরা জানান,মহিষের গোবর জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে তাদের প্রত্যেকের বছরে কয়েক হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। দুধ বিক্রি বাদে লাভ হয় মহিষের বাচ্ছা বিক্রি করে। পদ্মার চরাঞ্চলে তাদের মতো মহিষ খামার দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার নারি-পুরুষ। তবে উন্নত জাতের মহিষের প্রজনন খামার গড়ে এখানো উঠেনি ।

জানা যায়, দেশি জাতের তুলনায় মুররাহ্ মহিষে বেশি দুধ ও মাংস পাওয়া যায়। দেশি জাতের একটি মা মহিষ ৩ থেকে ৬ কেজি দুধ দিলেও মুররাহ্ মহিষ থেকে ১০-১২ কেজি দুধ আবার ১৫-২৫ মণ পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায় মুররাহ্ জাতে।

 

অনেকেই বলেছেন,খামারিদের আর্থিক অনুদানের মাধ্যমে দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থাসহ পরিবেশ সম্মত মহিষের বাসস্থান নিশ্চিত করলে উন্নত জাতের মহিষ পালনকারিদের সংখ্যা বাড়বে। মহিষের সংখ্যা বাড়লে পয়োবর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি, কেঁচো সার তৈরি করা সম্ভব।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় ১৩টি মহিষের খামার রয়েছে। এছাড়াও ২/৩ টা করে অনেকেই বাড়িতে লালন পালন করছেন।সব মিলে উপজেলায় ১ হাজার মহিষ রয়েছে। সরকারি মূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কৃমিনাশকসহ সরকারিভাবে সরবরাহকৃত অন্যান্য ঔষধ বিনামুল্যে দেওয়া হয়। মহিষ প্রজনন কেন্দ্র নেই। তবে ঘাস চাষ ও ঘাস প্রক্রিয়াজাতকরণ উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।


প্রিন্ট