ঢাকা , মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo সদরপুরে নিম্ম আয়ের মানুষের ভীড় বাড়ছে ফুটপাতের পুরানো শীতবস্ত্রের দোকানে Logo মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু Logo মধুখালীতে দোয়া মাহফিল ও গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে মতবিনিময় Logo বাঘায় মুক্তিযোদ্ধার সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী চাঁদের মতবিনিময় Logo শিবগঞ্জে চোখ উপড়ে পাহারাদারকে হত্যা Logo মধুখালীতে সাংবাদিক সাগর চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল চুরি Logo বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা  Logo বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য পালশা ডে নাইট শর্ট পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo তানোর বিএনপির রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরকে দায়িত্বশীল পদে দেখতে চায় তৃণমুল Logo কালুখালীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

মিচে কথা কবোনাঃ এহন আর কিচ্ছু নাই, আগুনে সব শ্যাষ

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

মিচে কথা কবোনা। এহন আর কিচ্ছু নাই। আগুনে সব শ্যাষ, বাকি আছে শুধুই খুঁটি। দুডে ছোয়াল মরার পরতে মানষে দেয়। খেতা, কম্বল, শাড়ি, খাট সব দিছিল মানষে। সব পুড়ে গেছে। ওরে বাপ, কয়ডা টিনমিন যদি পাতাম, নাতি ছোয়ালডা নিয়ে এটু থাকতাম।

 

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী রেলপথ ঘেঁষে কুমারখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরকান্দি এলাকায় দাঁড়িয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন আগুনে সবকেড়ে নিয়েছে মাথা গোঁজার ঠাই নেই। এমন কথা বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব জহুরা খাতুন।

 

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তদের মতে, রাত আড়াইটার দিকে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় চারটি পরিবারের সর্বস্ব।

 

প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। অগ্নিকাণ্ডে চারটি টিনের ঘর, দুটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ৪টি ছাগল, ৯টি চিনা হাঁস, ৩৫টি মুরগি এবং ঘরে থাকা যাবতীয় আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, এই অগ্নিকাণ্ডে চারটি পরিবারের অন্তত ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

জহুরা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী রেলপথের কুমারখালী পৌরসভা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরকান্দি এলাকার মৃত কিয়ামুদ্দিন শেখের স্ত্রী। ২০ বছর আগে বড় ছেলে মানিক এবং ৩ বছর আগে ছোট ছেলে রতনকে হারিয়ে নাতি আনোয়ার হোসেনের (২৭) সাথে থাকতেন তিনি।

 

এছাড়াও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জহুরা বেগমের ভাতিজা (ভ্যানচালক) কামাল হোসেন, কামাল হোসেনের ছেলে হৃদয় হোসেন ( ২২) এবং প্রতিবেশী নাজিম উদ্দিনের পরিবার।

 

ক্ষতিগ্রস্ত নাজিম উদ্দিন জানান, আগুনের গন্ধে রাত আড়াইটার দিকে তার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলতেই দেখেন ঘরে আগুন। কোনোমতে এক কাপড়ে নিজের ভ্যানটি নিয়ে বের হতে পারলেও বাকি সব পুড়ে গেছে। তার মতে, হৃদয়ের ভ্যান চার্জ দেওয়ার ঘর থেকেই আগুনের সূত্রপাত।

 

শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, পোড়া স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে শুধু ইট-সিমেন্টের কয়েকটি খুঁটি। বাতাসে তখনও পোড়া গন্ধ আর ধোঁয়া। ক্ষতিগ্রস্ত ময়না খাতুন বলেন, আমাদের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। সরকারের কাছে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই।

 

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আখতার জানান, খবর পাওয়ার পর দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শীতবস্ত্র ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্তরা লিখিত আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

নরসিংদী-৩ শিবপুর আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন দশজন

error: Content is protected !!

মিচে কথা কবোনাঃ এহন আর কিচ্ছু নাই, আগুনে সব শ্যাষ

আপডেট টাইম : ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
ইসমাইল হোসেন বাবু, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

ইসমাইল হােসেন বাবুঃ

মিচে কথা কবোনা। এহন আর কিচ্ছু নাই। আগুনে সব শ্যাষ, বাকি আছে শুধুই খুঁটি। দুডে ছোয়াল মরার পরতে মানষে দেয়। খেতা, কম্বল, শাড়ি, খাট সব দিছিল মানষে। সব পুড়ে গেছে। ওরে বাপ, কয়ডা টিনমিন যদি পাতাম, নাতি ছোয়ালডা নিয়ে এটু থাকতাম।

 

শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী রেলপথ ঘেঁষে কুমারখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরকান্দি এলাকায় দাঁড়িয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন আগুনে সবকেড়ে নিয়েছে মাথা গোঁজার ঠাই নেই। এমন কথা বলছিলেন ষাটোর্ধ্ব জহুরা খাতুন।

 

শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) গভীর রাতে কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ড ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্ষতিগ্রস্তদের মতে, রাত আড়াইটার দিকে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কিন্তু ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়ে যায় চারটি পরিবারের সর্বস্ব।

 

প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। অগ্নিকাণ্ডে চারটি টিনের ঘর, দুটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ৪টি ছাগল, ৯টি চিনা হাঁস, ৩৫টি মুরগি এবং ঘরে থাকা যাবতীয় আসবাবপত্র ও কাপড়চোপড় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, এই অগ্নিকাণ্ডে চারটি পরিবারের অন্তত ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

 

জহুরা কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী রেলপথের কুমারখালী পৌরসভা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শেরকান্দি এলাকার মৃত কিয়ামুদ্দিন শেখের স্ত্রী। ২০ বছর আগে বড় ছেলে মানিক এবং ৩ বছর আগে ছোট ছেলে রতনকে হারিয়ে নাতি আনোয়ার হোসেনের (২৭) সাথে থাকতেন তিনি।

 

এছাড়াও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জহুরা বেগমের ভাতিজা (ভ্যানচালক) কামাল হোসেন, কামাল হোসেনের ছেলে হৃদয় হোসেন ( ২২) এবং প্রতিবেশী নাজিম উদ্দিনের পরিবার।

 

ক্ষতিগ্রস্ত নাজিম উদ্দিন জানান, আগুনের গন্ধে রাত আড়াইটার দিকে তার ঘুম ভাঙে। দরজা খুলতেই দেখেন ঘরে আগুন। কোনোমতে এক কাপড়ে নিজের ভ্যানটি নিয়ে বের হতে পারলেও বাকি সব পুড়ে গেছে। তার মতে, হৃদয়ের ভ্যান চার্জ দেওয়ার ঘর থেকেই আগুনের সূত্রপাত।

 

শনিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা যায়, পোড়া স্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছে শুধু ইট-সিমেন্টের কয়েকটি খুঁটি। বাতাসে তখনও পোড়া গন্ধ আর ধোঁয়া। ক্ষতিগ্রস্ত ময়না খাতুন বলেন, আমাদের পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। সরকারের কাছে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই চাই।

 

কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আখতার জানান, খবর পাওয়ার পর দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শীতবস্ত্র ও শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্তরা লিখিত আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।


প্রিন্ট