বাদশাহ মিয়াঃ
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার টিআর কাবিখা-কাবিটা কর্মসূচী আওতায় ১৯টি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও অর্থ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। অধিকাংশ প্রকল্পে কোনো কাজ না করেই বা নামমাত্র কাজ দেখিয়ে কাগজ-কলমে শতভাগ বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে। এসব প্রকল্পের বরাদ্দকৃত বিল সম্পূর্ণ উত্তোলন করে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেওয়া হয়েছে।
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র। মুকসুদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন (পিআইও) অফিসে প্রকল্প সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অসহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে। তথ্য চেয়ে বারবার পিআইও অফিসে যোগাযোগ করা হলেও কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। তবে ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের টিআর, কাবিখা-কাবিটা কর্মসূচীর আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৭৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে টিআর (টেস্ট রিলিফ) কর্মসূচী প্রকল্পের অনুকূলে ২ কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৩৩৮ টাকা, কাবিখা (কাজের বিনিময় খাদ্য) কর্মসূচী প্রকল্পের অনুকূলে ১৫৩.৮৫ মেট্রিক টন গম, কাবিটা (কাজের বিনিময় টাকা) কর্মসূচী প্রকল্পের অনুকূলে ২ কোটি ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৯৭ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার কাশালিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশালিয়া নতুন বাজার হতে দাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত গাইড ওয়ালসহ মাটির রাস্তা পুনঃনির্মাণ করার জন্য (কাবিটা) প্রকল্পের ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে এক কোদালও মাটি পড়েনি। কাগজ কলমে কাজ দেখিয়ে ভুয়া মাস্টাররোলের মাধ্যমে বরাদ্দ অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।
প্রকল্পের সিপিসি (প্রজেক্ট কমিটি) বাসুদেব মন্ডল বলেন, ‘পানি থাকার কারণে কাজ করিনি। অফিসও জানে পানির জন্য কাজ করতে পারছি না।’ কাজ না করে বিল উত্তোলনের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বিল তুলিনি। পিআইও স্যার কি করছেন আমার জানা নেই।’
গোহালা ইউনিয়নের প্রসন্নপুর এলাকায় দুইটি পৃথক মাটির রাস্তা নির্মাণ (টিআর) প্রকল্পে মোট ৮ লাখ টাকা (৪ লাখ টাকা করে দুটি) বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোনো কাজ না করেই পুরো অর্থ উত্তোলন করা হয়েছে।
মোচনা ইউনিয়নের বনগ্রাম-বাথানডাঙ্গা রাস্তা হতে পাইকদিয়া পুরাতন মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য (টিআর) প্রকল্পের ১ লাখ ১৬ হাজার টাকার কাজ করার কথা থাকলেও সেখানেও কোনো কাজ না করেই সিপিসি বিল তুলে নিয়েছেন।
সব মিলিয়ে, প্রায় ১৯টি প্রকল্পে কাজ না করেই কাগজপত্রে কাজ দেখিয়ে ভুয়া মাস্টাররোলের মাধ্যমে বরাদ্দকৃত অর্থ উত্তোলন ও ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, পিআইও অফিসে প্রকল্পের বরাদ্দের বিল ছাড়ের আগেই ‘কমিশন’ নির্ধারণ করা হয়। কাজ হোক বা না হোক, কমিশন দিলেই মেলে বিল। অভিযোগ রয়েছে, পিআইও অফিস এবং উপজেলা প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে এ কমিশনের অর্থ ভাগাভাগি হয়। এছাড়াও পিআইও নিজের ইচ্ছে মতো করে নিজের লোককে সিপিসি করে প্রকল্প তৈরি করেন, যাতে করে ভাগভাগি করতে সুবিধা হয়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল জব্বারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আপনি আগে আমাকে লিখিত আকারে তথ্য পাঠান। তারপর আমি বক্তব্য দেব। এখন একটু ব্যস্ত আছি।’ বলেই ফোন কেটে দেন।
প্রিন্ট

মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু 
বাদশাহ মিয়া, মুকসুদপুর (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি 





















