ঢাকা , সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo মধুখালীর রায়পুর ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চেয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু Logo মধুখালীতে দোয়া মাহফিল ও গণমাধ্যম কর্মিদের সাথে মতবিনিময় Logo বাঘায় মুক্তিযোদ্ধার সাথে সংসদ সদস্য প্রার্থী চাঁদের মতবিনিময় Logo শিবগঞ্জে চোখ উপড়ে পাহারাদারকে হত্যা Logo মধুখালীতে সাংবাদিক সাগর চক্রবর্তীর মোটরসাইকেল চুরি Logo বালিয়াকান্দিতে মোবাইলকোট পরিচালনায় দুই ট্রলি চালককে জরিমানা  Logo বগুড়া পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য পালশা ডে নাইট শর্ট পিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত Logo তানোর বিএনপির রাজনীতিতে জাহাঙ্গীরকে দায়িত্বশীল পদে দেখতে চায় তৃণমুল Logo কালুখালীতে জাতীয় সমবায় দিবস পালিত Logo তানোরে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন। Hotline- +880 9617 179084

সুদানে শহীদ সেনাসদস্য মাসুদ রানার বাড়িতে শোকের মাতম

রাশিদুল ইসলাম রাশেদঃ

 

নাটোরের লালপুর উপজেলায় নেমে এসেছে গভীর শোক। সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (৩৮) শহীদ হওয়ার খবরে তাঁর পরিবার ও উপজেলার এলাকাজুড়ে চলছে কান্না আর আহাজারি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, শনিবার (১৩ ডিসেম্বর ২০২৫) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন এবং অন্তত আটজন আহত হন। হামলার পর ওই এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো অস্থিতিশীল রয়েছে।

 

শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানা নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর ছোট দুই ভাই মনিরুল ইসলাম জনি ও রনি আহমেদও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেওয়ার আগে মাসুদ রানা যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর ২০২৫ স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি (২৭) ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে রেখে তিনি জাতিসংঘ মিশনে যোগ দিতে সুদান যান। প্রায় ১৯ বছরের কর্মজীবনে তিনি নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশের সেবা করে আসছিলেন।

 

শনিবার তাঁর মৃত্যুর খবর প্রথমে গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিও দেখে পরিবারের সদস্যরা মাসুদ রানাকে শনাক্ত করেন বলে জানান তাঁর শাশুড়ি মোছা. জাকিয়া বেগম (৪৫)। পরে ছোট ভাই সেনাসদস্য রনি আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুরো গ্রামজুড়ে শোকের মাতম শুরু হয়।

 

শহীদের মা মর্জিনা খাতুন (৫৫) ছেলের মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি স্বামীর মৃত্যুতে শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, এখনো তাঁদের আট বছরের মেয়েকে বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি।

 

প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদ রানা ছিলেন শান্ত ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। একসময় পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। তিন ভাই সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার পর পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে। পরিবারের সুখের স্বপ্ন নিয়েই তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন।

 

এদিকে শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মৃত্যুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে। রোববার বিকেলে নাটোর আর্মি স্টেডিয়ামের সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর শহীদ পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি জানান, শহীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

 

উল্লেখ্য, কর্পোরাল মাসুদ রানা ২০০৬ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্পোরাল (এমটি) পদে যোগ দেন। তাঁর অবসর গ্রহণের কথা ছিল ২০৩১ সালের ৬ জানুয়ারি। সর্বশেষ তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় ব্যানবেট–৪ ইউনিসফাতে কর্মরত ছিলেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রায়পুরাতে মোমবাতি প্রজ্বলন

error: Content is protected !!

সুদানে শহীদ সেনাসদস্য মাসুদ রানার বাড়িতে শোকের মাতম

আপডেট টাইম : ২১ ঘন্টা আগে
রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি :

রাশিদুল ইসলাম রাশেদঃ

 

নাটোরের লালপুর উপজেলায় নেমে এসেছে গভীর শোক। সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য কর্পোরাল মো. মাসুদ রানা (৩৮) শহীদ হওয়ার খবরে তাঁর পরিবার ও উপজেলার এলাকাজুড়ে চলছে কান্না আর আহাজারি।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, শনিবার (১৩ ডিসেম্বর ২০২৫) সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। এতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয়জন শান্তিরক্ষী শহীদ হন এবং অন্তত আটজন আহত হন। হামলার পর ওই এলাকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখনো অস্থিতিশীল রয়েছে।

 

শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানা নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের বোয়ালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত সাহার উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তাঁর ছোট দুই ভাই মনিরুল ইসলাম জনি ও রনি আহমেদও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত।

 

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেওয়ার আগে মাসুদ রানা যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন। গত ৭ নভেম্বর ২০২৫ স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি (২৭) ও আট বছরের একমাত্র কন্যা মাগফিরাতুল মাওয়া আমিনাকে রেখে তিনি জাতিসংঘ মিশনে যোগ দিতে সুদান যান। প্রায় ১৯ বছরের কর্মজীবনে তিনি নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দেশের সেবা করে আসছিলেন।

 

শনিবার তাঁর মৃত্যুর খবর প্রথমে গণমাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিও দেখে পরিবারের সদস্যরা মাসুদ রানাকে শনাক্ত করেন বলে জানান তাঁর শাশুড়ি মোছা. জাকিয়া বেগম (৪৫)। পরে ছোট ভাই সেনাসদস্য রনি আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই পুরো গ্রামজুড়ে শোকের মাতম শুরু হয়।

 

শহীদের মা মর্জিনা খাতুন (৫৫) ছেলের মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। স্ত্রী আসমাউল হুসনা আঁখি স্বামীর মৃত্যুতে শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, এখনো তাঁদের আট বছরের মেয়েকে বাবার মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি।

 

প্রতিবেশীরা জানান, মাসুদ রানা ছিলেন শান্ত ও মিশুক স্বভাবের মানুষ। একসময় পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। তিন ভাই সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়ার পর পরিবারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসে। পরিবারের সুখের স্বপ্ন নিয়েই তিনি শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন।

 

এদিকে শহীদ কর্পোরাল মাসুদ রানার মৃত্যুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছে। রোববার বিকেলে নাটোর আর্মি স্টেডিয়ামের সেনা ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর মো. নাজমুল আলম আবীর শহীদ পরিবারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি জানান, শহীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।

 

উল্লেখ্য, কর্পোরাল মাসুদ রানা ২০০৬ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্পোরাল (এমটি) পদে যোগ দেন। তাঁর অবসর গ্রহণের কথা ছিল ২০৩১ সালের ৬ জানুয়ারি। সর্বশেষ তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতায় ব্যানবেট–৪ ইউনিসফাতে কর্মরত ছিলেন।


প্রিন্ট