ফরিদপুরে মাছ চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এম এ সালম লালকে (৭২)।
শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে শহরের ভাটি্লক্ষীপুরস্থ নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে দুই নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ।
এম এ সালমের মেয়ে এলিজা আক্তার জানান, হয়রানীমূলক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার বাবাকে। জাতির জন্য যুদ্ধ করে তাকে আজ মাছ চুরির মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এটি জাতির জন্য একটি লজ্জাজনক উদাহরণ হয়ে থাকবে। বিজয়ের মাসে একজন বীর যুদ্ধাকে এভাবে অপমান করবে ভাবতে পারিনি।
এম এ সালাম শহরের ভাটি লক্ষীপুর মহল্লার মৃত রমজান ফকিরের ছেলে। তিনি বিবাহিত এবং দুই মেয়ে ও তিন ছেলের বাবা। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের তিনি কমান্ডার ছিলেন। এছাড়া ফরিদপুর পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন।
শুক্রবার বিকেলে এম এ সালামকে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় নেওয়া হয়। সারারাত কোতয়ালী থানায় রাখার পর শনিবার দুপুরে জেলার মূখ্য বিচারক হাকিমের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এম এ সালামকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে ফরিদপুর দুই নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. রাকিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শহরের সিএন বি ঘাট এলাকার হাশেম ফকির গত ১৩ জুলাই একটি মামলা করেন এম এ সালামের নামে। ওই মামলার এজাহার অনুযায়ী হাশেম সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় একটি পুকুরে মাছের চাষ করেছিলেন।
ওই মাছ চাষ করার জন্য হাশেমের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এম এ সালাম। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় এম এ সালাম তার লোকজন নিয়ে ওই পুকুরের সব মাছ মেরে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, এ মামলায় এম এ সালামকে গ্রেপ্তার করা হলেও তার বিরুদ্ধে টেপাখোলা গরুর হাটে চাঁদাবাজীর অভিযোগ অরেকটি মামলা তদন্তপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে নাম রয়েছে।
এম এ সালামের গ্রেপ্তারের বিবরণ দিয়ে তার মেয়ে এলিজা আক্তার জানান, শরীর অসুস্থ থাকায় শুক্রবারে বাবা তখন বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। ওই সময় পুলিশ সদস্যরা বাড়িতে এসে ‘পুলিশ সুপার সাহেব কথা বলবেন’- এ কথা বলে বাবাকে নিয়ে যান। পরে সারাদিন তাকে দুই নম্বর পুলিশ ফাঁড়ীতে বসিয়ে রাখা হয়। সন্ধ্যার দিকে বাবাতে কোতয়ালী থানায় নেওয়া হয়। সেখানেই তাকে সারারাত বসিয়ে রেখে গতকাল আদালতে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, আমার বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ দেশের জন্য তিনি যুদ্ধ করেছেন। তাকে একটি হয়রানীমূলক মামরায় এভাবে নাজেহাল করার এ ঘটনাটি জাতির জন্য একটি লজ্জাজনক উদাহরণ হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, আমি জাতির কাছে এর বিচার চাই।
ফরিদপুর সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শামসুদ্দীন ফকির এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এম এ সালাম একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। ৭২ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ। হার্টে রিং পড়ানো। পেশারসহ আরও অনেক শারীরিক সমস্যা রয়েছে তার। ইচ্ছাকৃতভাবে ভাবে হয়রানী করার জন্য তাকে নানা কেস দিয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। এটা কোন ধরনের রাজত্ব বুঝতে পারছি না। ৭২ বছর বয়সী একজন ব্যাক্তি, যিনি মুক্তিযোদ্ধা ও অসুস্থ ব্যাক্তি একজন সাবেক কমিশনার তার পক্ষে মাছ চুরির অপবাদ কতটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
তিনি বলেন, রবিবার আমরা মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে বসে আলোচনা করে এ ব্যাপারে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করবো।
প্রিন্ট