ঢাকা , শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

কুষ্টিয়ায় আধুনিক পদ্ধতিতে অপসারণ করা হচ্ছে পয়ঃবর্জ্য

ইসমাইল হোসেন বাবু, ষ্টাফ রিপোর্টার

স্থানীয় সরকার আইন (পৌরসভা) ২০০৯-এ দেওয়া ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দেশে প্রথম স্যানিটেশন উপ-আইন তৈরির মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কুষ্টিয়া পৌরসভা। এই উপ-আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্যানিটেশন ভিশন ২০২৭ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়েছে স্থানীয় সরকারের কুষ্টিয়া জেলার এই প্রতিষ্ঠানটি। পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে বন্ধ হয়েছে পৌরসভার ভর্তুকি, বেড়েছে আয়। বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে উপকারী ও পরিবেশবান্ধব জৈব সার এবং সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।

 

গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই বর্জ্য অপসারণের কাজটি করে পৌরসভা কর্তৃক নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চৌড়হাস ফুলতলা কল্যাণ সমিতি (সিএফসিএস)। সংগৃহীত পয়ঃবর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পৌঁছে দেয় জৈব সার তৈরির জন্য। এই ট্রিটমেন্ট পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে পৌরসভা অনুমোদিত আর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইরাস ভেনচার। এখানে তৈরি জৈব সার কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। কুষ্টিয়া পৌরসভা পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে যেমন আয় করছে, তেমনি জনগণকে প্রদান করছে গুণগত সেবা।

 

অন্যদিকে, আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় পৌরসভা অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্থা তৈরি করছে পৌরবাসী। সেপটিক ট্যাঙ্ক নির্মাণ কাজকে গুণগতভাবে সম্পন্ন করার জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভা এই উপ-আইনের অধীনে বিল্ডিং ডিজাইনার এবং রাজমিস্ত্রিদের তালিকাভুক্ত করে তাদের সম্পৃক্ত করেছে। বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং রাজকীয় দূতাবাস নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সার্বিক সহযোগিতায় কুষ্টিয়া পৌরসভা স্যানিটেশন উপ-আইন ২০২০ প্রণয়ন করে নগরবাসীর জন্য টেকসই এবং জনবান্ধব স্যানিটেশন সেবা প্রদান করছে।

কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দেখা যায়, উপ-আইনের আলোকে স্যানিটেশনের সুব্যবস্থাসহ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ এবং নারী, পুরুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সব মানুষের প্রবেশগম্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পৌরসভা। এখানে মেয়েরা স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রয়োজনে কিনে নিতে পারেন। একটি বেসরকারি সংস্থার চুক্তির ভিত্তিতে এই পাবলিক টয়লেটটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯-এর ১২২ ধারার ক্ষমতাবলে কুষ্টিয়া পৌরসভা ‘কুষ্টিয়া পৌরসভা স্যানিটেশন উপ-আইন ২০২০’ নামে এ আইন প্রণয়ন করে। ফলে কুষ্টিয়া পৌরসভার আওতাভুক্ত বসতবাড়িতে পয়ঃবর্জ্য অপসারণ সেবা প্রদান বিষয়টিকে বেসরকারীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টাকা পৌরসভাকে এই সেবার জন্য ভর্তুকি দিতে হতো। উপ-আইনের অধীনে এই সেবা চালুর ফলে এখন ভর্তুকি তো দূরে থাক বরং অর্থ আয় হচ্ছে পৌরসভার।

 

পৌর এলাকার সানজেদা খাতুন বলেন, গত বছর থেকেই নিয়মিতভাবে এই সেবা নিচ্ছি। দিন দিন এলাকায় সেবাটি জনপ্রিয় হচ্ছে। এ কাজে জড়িত রনি লাল বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও পৌরসভার তদারকিতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা পোশাক ব্যবহার এবং উন্নত স্বাস্থ্যাভ্যাস আচরণের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। পৌরসভা এই উপ-আইনের আলোকে পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা গাইডলাইন তৈরি করে স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা প্রদান করেছে।

 

সিএফসিএসের ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পৌরসভার সঙ্গে চুক্তির আলোকে আমরা গ্রাহকের পয়ঃবর্জ্য অপসারণ করে তা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছি। এই সেবার জন্য গ্রাহকের আবেদনের দিনই অথবা পরের দিন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

 

সেপটিক ট্যাঙ্কের আকার বড় হওয়ায় বছরে একবার বর্জ্য অপসারণ করাই যথেষ্ট। কিন্তু সব পিট ল্যাট্রিনের ক্ষেত্রে একাধিকবার বর্জ্য অপসারণ করতে হয়। এ বিষয়টি স্বীকার করে সেবা গ্রহণকারী আলিমুজ্জামান আলিম বলেন, আগে এরকম সেবা ছিল না। সুইপার দিয়ে করাতে হতো। এতে নোংরা পরিবেশ তৈরি হতো, দুর্গন্ধ ছড়াত এবং পরিবেশ দূষিত হতো। এখন এই আধুনিক পদ্ধতিতে কেউ টেরই পায় না যে কোনো বাসা থেকে পয়ঃবর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে।

 


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

রাজবাড়ীতে ডিবি পুলিশের অভিযানে ইয়াবাসহ মাদকব্যবসায়ী গ্রেফতার

error: Content is protected !!

কুষ্টিয়ায় আধুনিক পদ্ধতিতে অপসারণ করা হচ্ছে পয়ঃবর্জ্য

আপডেট টাইম : ১২:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
ইসমাইল হোসেন বাবু, ষ্টাফ রিপোর্টার :

ইসমাইল হোসেন বাবু, ষ্টাফ রিপোর্টার

স্থানীয় সরকার আইন (পৌরসভা) ২০০৯-এ দেওয়া ক্ষমতাকে ব্যবহার করে দেশে প্রথম স্যানিটেশন উপ-আইন তৈরির মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কুষ্টিয়া পৌরসভা। এই উপ-আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্যানিটেশন ভিশন ২০২৭ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে এক ধাপ এগিয়েছে স্থানীয় সরকারের কুষ্টিয়া জেলার এই প্রতিষ্ঠানটি। পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আধুনিকায়নের সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে বন্ধ হয়েছে পৌরসভার ভর্তুকি, বেড়েছে আয়। বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তৈরি হচ্ছে উপকারী ও পরিবেশবান্ধব জৈব সার এবং সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।

 

গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই বর্জ্য অপসারণের কাজটি করে পৌরসভা কর্তৃক নিয়োজিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চৌড়হাস ফুলতলা কল্যাণ সমিতি (সিএফসিএস)। সংগৃহীত পয়ঃবর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্লান্টে পৌঁছে দেয় জৈব সার তৈরির জন্য। এই ট্রিটমেন্ট পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে পৌরসভা অনুমোদিত আর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইরাস ভেনচার। এখানে তৈরি জৈব সার কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়। যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান। কুষ্টিয়া পৌরসভা পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়ে যেমন আয় করছে, তেমনি জনগণকে প্রদান করছে গুণগত সেবা।

 

অন্যদিকে, আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় পৌরসভা অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী স্যানিটেশন ব্যবস্থা তৈরি করছে পৌরবাসী। সেপটিক ট্যাঙ্ক নির্মাণ কাজকে গুণগতভাবে সম্পন্ন করার জন্য কুষ্টিয়া পৌরসভা এই উপ-আইনের অধীনে বিল্ডিং ডিজাইনার এবং রাজমিস্ত্রিদের তালিকাভুক্ত করে তাদের সম্পৃক্ত করেছে। বিল অ্যান্ড মিলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং রাজকীয় দূতাবাস নেদারল্যান্ডসের অর্থায়নে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের সার্বিক সহযোগিতায় কুষ্টিয়া পৌরসভা স্যানিটেশন উপ-আইন ২০২০ প্রণয়ন করে নগরবাসীর জন্য টেকসই এবং জনবান্ধব স্যানিটেশন সেবা প্রদান করছে।

কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে দেখা যায়, উপ-আইনের আলোকে স্যানিটেশনের সুব্যবস্থাসহ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ এবং নারী, পুরুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ সব মানুষের প্রবেশগম্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পৌরসভা। এখানে মেয়েরা স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রয়োজনে কিনে নিতে পারেন। একটি বেসরকারি সংস্থার চুক্তির ভিত্তিতে এই পাবলিক টয়লেটটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে।

 

সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০০৯-এর ১২২ ধারার ক্ষমতাবলে কুষ্টিয়া পৌরসভা ‘কুষ্টিয়া পৌরসভা স্যানিটেশন উপ-আইন ২০২০’ নামে এ আইন প্রণয়ন করে। ফলে কুষ্টিয়া পৌরসভার আওতাভুক্ত বসতবাড়িতে পয়ঃবর্জ্য অপসারণ সেবা প্রদান বিষয়টিকে বেসরকারীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে।

 

এ বিষয়ে পৌরসভার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছর প্রায় তিন লাখ টাকা পৌরসভাকে এই সেবার জন্য ভর্তুকি দিতে হতো। উপ-আইনের অধীনে এই সেবা চালুর ফলে এখন ভর্তুকি তো দূরে থাক বরং অর্থ আয় হচ্ছে পৌরসভার।

 

পৌর এলাকার সানজেদা খাতুন বলেন, গত বছর থেকেই নিয়মিতভাবে এই সেবা নিচ্ছি। দিন দিন এলাকায় সেবাটি জনপ্রিয় হচ্ছে। এ কাজে জড়িত রনি লাল বলেন, স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকলেও পৌরসভার তদারকিতে স্বাস্থ্য নিরাপত্তা পোশাক ব্যবহার এবং উন্নত স্বাস্থ্যাভ্যাস আচরণের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি। পৌরসভা এই উপ-আইনের আলোকে পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা গাইডলাইন তৈরি করে স্যানিটেশন কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সেবা প্রদান করেছে।

 

সিএফসিএসের ম্যানেজার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, পৌরসভার সঙ্গে চুক্তির আলোকে আমরা গ্রাহকের পয়ঃবর্জ্য অপসারণ করে তা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছি। এই সেবার জন্য গ্রাহকের আবেদনের দিনই অথবা পরের দিন কাজ সম্পন্ন করা হয়।

 

সেপটিক ট্যাঙ্কের আকার বড় হওয়ায় বছরে একবার বর্জ্য অপসারণ করাই যথেষ্ট। কিন্তু সব পিট ল্যাট্রিনের ক্ষেত্রে একাধিকবার বর্জ্য অপসারণ করতে হয়। এ বিষয়টি স্বীকার করে সেবা গ্রহণকারী আলিমুজ্জামান আলিম বলেন, আগে এরকম সেবা ছিল না। সুইপার দিয়ে করাতে হতো। এতে নোংরা পরিবেশ তৈরি হতো, দুর্গন্ধ ছড়াত এবং পরিবেশ দূষিত হতো। এখন এই আধুনিক পদ্ধতিতে কেউ টেরই পায় না যে কোনো বাসা থেকে পয়ঃবর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে।

 


প্রিন্ট