বাংলাদেশে বিদেশী পুঁজিবিনিয়োগএকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এই বিষয় প্রায় সকলেই জানা। অথচ এই বিষয়টি নিয়ে সরকারি, স্বায়ীত্ব শাসিত বা বড় এন্টারপ্রাইজ এর পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। কোথাও এবিষয়ে দুই একটি কথা উঠলেই অন্য পক্ষ বলে বসেন এটা একটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তাই বলে কি আমরা চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকবো আর পুঁজিবাজার সহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়তেই থাকবে। তাই ওটাকে আমাদের থামাতে হবে।
আমরা জানি বিদেশী বিনিয়োগ (Foreign Direct Investment – FDI) নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। আর বিদেশী পুঁজি বা বৈদেশিক অর্থ প্রবাহের উপর বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতি অনেকাংশেই নির্ভরশীল। আমাদের আছে কোটির উপরে রেমিট্যান্স যোদ্ধা, যাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুভূতি তাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রাদেশে পাঠানো অনেকাংশেই নির্ভরশীল। কাজেই সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ দরকার যা আমাদের দেশের শিল্প, প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান বাড়াতেআরো সাহায্য করবে। বিদেশী বিনিয়োগের সুবিধা, চ্যালেঞ্জসমূহ, সরকারের ভুমিকা ও ভবিষ্যত সম্ভবাবনা নিয়ে এখনে আলোচনা করা হলো।
বিদেশী বিনিয়োগের সুবিধাঃ
১) অর্থনৈতিক বৃদ্ধি স্বাধণঃ বাংলাদেশের অর্থনীতি গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেলেও তাস্থিতিশীল নয়। শিল্পায়ন, রপ্তানি বাণিজ্য, বিশেষ করে গার্মেন্টস সেক্টর, এবং বিদেশী বিনিয়োগ এই বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তবে, কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অর্থনৈতিক অসাম্য, হুন্ডিব্যবসা, দুর্নীতি এবং পরিবেশগত নানা সমস্যা এই বৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করেছে। এছাড়া বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং করোনা মহামারির প্রভাবও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
সকল বাধা পেরিয়ে সার্বিক ভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু এটি টেকসই ও সমন্বিতভাবে পরিচালিত হলে আরও উন্নতি সম্ভব হবে। যা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ তৈরি করে। বিদেশী বিনিয়োগ দেশের অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে জিডিপি বৃদ্ধিতে আরো সহায়ক হবে। এটি নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতাও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করবে।যাতে করে পুঁজিবাজার চাঙ্গা হবে বলে আশা করা যায়।
২) পুঁজির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়ঃ বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে মূলধন প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, তখন বিনিয়োগকারীরা নতুন প্রকল্প এবং কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়। এটি বাজারে নতুন তহবিলের প্রবাহ তৈরি করে এবং শেয়ার দামের বৃদ্ধি ঘটায়। মূলধন প্রবাহ বৃদ্ধি বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। যখন তারা দেখে যে অর্থ প্রবাহিত হচ্ছে, তখন তারা বেশিবিনিয়োগ করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
যখন কোম্পানিগুলি বেশিমূলধন পায়, তারা তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারে, যা লভ্যাংশ এবং মুনাফা বাড়াতে সহায়ক। এটি বিনিয়োগকারীদের আরও আকৃষ্ট করে। মূলধন প্রবাহ বৃদ্ধি অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক সংকেত হিসেবে কাজ করে।
মূলধন প্রবাহ বাজারে তরলতা বৃদ্ধি করে, যা শেয়ার কেনাবেচার প্রক্রিয়াকে সহজ করে। তারল্য বাজার বিনিয়োগকারীদের জন্য আরও সুবিধাজনক।মূলধন প্রবাহ নতুন উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে, যা বাজারে নতুন পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে আসে। সুতরাং, মূলধন প্রবাহ বৃদ্ধি পুঁজিবাজারের জন্য এক ধরনের ইতিবাচক শক্তি হিসাবে কাজ করে, যা বাজারের সামগ্রিকঅবস্থা এবং কার্যকারিতাকে উন্নত করে।
৩) প্রযুক্তি স্থানান্তর ও উন্নয়ন তরান্বিত করেঃ বিদেশী কোম্পানিগুলি তাদের উন্নত প্রযুক্তি স্থানান্তর করলে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন প্রযুক্তির সুবিধা পায়, যা উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং নতুন পণ্য ও পরিষেবা উন্নয়নে সহায়ক হয়। একই ভাবে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্থানীয় কর্মীদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করা যায়। যার ফলে স্থানীয় জন শক্তির দক্ষতা উন্নয়ন করবে এবং বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে। সেই সাথে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে যৌথ গবেষণা প্রকল্প চালু করা যেতে পারে। এটি প্রযুক্তি স্থানান্তরকে উৎসাহিত করবে এবং নতুন উদ্ভাবনের সুযোগ তৈরি করবে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের তথ্য প্রযুক্তি খাতে বিদেশী বিনিয়োগের ফলে দেশটি বৈশ্বিক বাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান অধিকার করেছে। কাজেই বিদেশী বিনিয়োগের ফলে গড়ে উঠা কোম্পানিগুলি প্রবর্তন করে নতুন প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনা কৌশল, যা স্থানীয় শিল্পকে আধুনিকায়ন করতে সাহায্য করছে।
৪) নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়ঃ বিনিয়োগকারীরা যখন নতুন উদ্যোগ শুরু করেন, তখন তারা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেন। এই উদ্যোগগুলি স্থানীয় বাজারে নতুন পণ্য ও সেবা সরবরাহ করে। বিদেশী কোম্পানিগুলি স্থানীয় সরবরাহকারীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে, যা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে। বিদেশী বিনিয়োগ বিভিন্ন খাতে যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, উৎপাদন, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদিতে প্রবাহিত হতে পারে, যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে।
চ্যালেঞ্জসমুহ
৫) বিনিয়োগের নিরাপত্তাঃ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপত্তা ও আইনগত সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগকারীদের মনোভাব নিয়ন্ত্রণ করতে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য। অনিশ্চয়তা বা রাজনৈতিক অস্থিরতা বিদেশী বিনিয়োগকে প্রভাবিত করতে পারে।বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আনা খুবইগুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাসহ অনেকেরই সামান্য আহবানেই অনেক বিদেশী বিনিয়োগ আমাদের দেশে আসতে পারে।
৬) রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিদেশী বিনিয়োগের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। যখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির হয়, তখন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা সাধারণত বিনিয়োগ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হন। তারা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হন, যা বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও লাভজনকতা সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি করে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা প্রায়শই অর্থনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত হয়, যেমন মুদ্রাস্ফীতি, কর বৃদ্ধি, এবং বাজারের পতন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের ঝুঁকি বাড়ে। রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে নীতিগত পরিবর্তন ঘটতে পারে, যা বিদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। নতুন সরকার বিভিন্ন নিয়ম ও নীতি প্রণয়ন করতে পারে, যা বিনিয়োগের পরিবেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।
৭) বিদেশী মুদ্রার বিনিময় হারঃ বিদেশী মুদ্রার বিনিময় হার বিদেশী বিনিয়োগকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। বিনিময় হার যদি বিনিয়োগকৃত দেশের মুদ্রার বিরুদ্ধে ওঠে, তাহলে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের লাভ বাড়াতে পারেন। Conversely, যদি হার কমে যায়, তাহলে তাদের লাভ কমে যেতে পারে, যা বিনিয়োগের আকর্ষণ হ্রাস করে। বিনিময় হার পরিবর্তনের কারণে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি বাড়তে পারে। তারা যদি মুদ্রার ওঠানামার কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হন, তাহলে তারা বিনিয়োগ করতে আরও সাবধানী হয়ে যেতে পারে। যাতে করে বিদেশী বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হতে পারে।
পরামর্শসমূহ যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবেঃ
৮) বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নঃ বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় ও স্বচ্ছ পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। নবায়নযোগ্য শক্তি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব প্রকল্প, সহজলভ্য কর্মী বাহিনী, স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার, কর সুবিধা, সহজে ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ এবং আইনগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশ।
৯) প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়নঃ স্থানীয় কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশী কোম্পানিগুলির সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা উচিত যা স্থানীয় মানবসম্পদকে উন্নত করবে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ। দক্ষ ও সস্তা শ্রমশক্তি বিদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য উৎপাদন খরচ কমানোর সুযোগ সৃষ্টি করবে।
১০) সামাজিক উন্নয়নঃ শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক অবকাঠামোর উন্নতিকল্পে সরকারের উদ্যোগ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সুস্থ ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। সামাজিক উন্নয়ন হলে উন্নত কর্মী বাহিনী গড়ে উঠবে। ভালো ও দক্ষকর্মীদের স্বল্প ব্যয়ে প্রাপ্তি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেতে পারে।
১১) আইনগত সংস্কারঃ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনগত বাধাগুলো কমাতে হবে। বিনিয়োগকেন্দ্রিক নীতিমালার সুবিধা ও প্রয়োগকে আরও কার্যকর করতে হবে। একই সাথে বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে বিভিন্ন নীতিমালা এবং প্রণোদনা প্রদানের ক্ষেত্রগুলো প্রকাশ করাও আলোচনা করা দরকার।উদাহরণস্বরূপ, কর ছাড়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) এবং বিনিয়োগ সুরক্ষা।
১২) অবকাঠামো ও স্থায়ী উন্নয়নঃ সরকার কর্তৃক অবকাঠামো উন্নয়ন করা জরুরী, যা যোগাযোগ, পরিবহন এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে স্থায়ী উন্নতি করবে।উন্নত অবকাঠামো বিদেশী বিনিয়োগকে সহজ করে ও বেশি বেশি বিনিয়োগ কারীদের আকৃষ্ট করে। আবার এটাও ঠিক যে বিদেশী বিনিয়োগের ফলে পরিবেশের ওপর যে প্রভাব পড়ে; তাইপরিবেশবান্ধব প্রকল্প গুলিতে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা উচিত।
১৩) স্থানীয় বাজারে প্রবেশ, অংশীদারিত্ব ও প্রতিযোগিতাঃ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য স্থানীয় বাজারে প্রবেশ করা সহজ করতে আইন ও বিধি পরিবর্তন করা যেতে পারে। বিদেশী কোম্পানির সাথে স্থানীয় কোম্পানির যৌথ উদ্যোগ তৈরি করা যেতে পারে।এই সব উপায় বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। বিদেশী বিনিয়োগের মাধ্যমে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে, যা তাদের কর্মদক্ষতা এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
১৪) আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারের সম্ভাবনাঃ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে। এমতাবস্তায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সুবিধা বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে। আবার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারও দ্রুত বাড়ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৃদ্ধি এবং ভোক্তা চাহিদার উন্নতি বিদেশী বিনিয়োগের জন্য নতুন বাজার সৃষ্টি করছে।এই বিষয়গুলো বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে তুলে ধরা দরকার।
১৫) অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাঃ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা যেতে পারে। এসব অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ সুবিধা প্রদান করা যেতে পারে। বাংলাদেশে পোশাক শিল্প, তথ্য প্রযুক্তি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ এবং অন্যান্য খাতে উল্লেখযোগ্য শিল্পায়নের সম্ভবনা রয়েছে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এই খাতগুলোতে আনার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
১৬) বিনিয়োগের প্রচারঃ আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও বিনিয়োগ পরিবেশের কথা ব্যপক প্রচার করা উচিত। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্যে বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা বিজ্ঞাপন টেলিভিশন, রেডিও, এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রচার ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে। বিনিয়োগের সুযোগ সম্পর্কে তথ্য প্রকাশের জন্য নিয়মিত প্রেস রিলিজ দেওয়া এবং সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা সহ ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন ইত্যাদি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে, ব্লগ ও আর্টিকেল, ভিডিও কনটেন্ট, বিনিয়োগের সুবিধা ও সফলতার বিষয় তুলে ধরতে হবে। এছাড়া দেশে বিদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ইনফোগ্রাফিক্স, নেটওয়ার্কিং ইভেন্ট, মিডিয়া পার্টনারশিপ, সেমিনার, কনফারেন্স ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশকে তুলে ধরা যেতে পারে। এইসব কৌশল ব্যবহার করে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা সম্ভব।
বাংলাদেশে বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। যদি সরকারের নীতি ও পরিবেশ উন্নয়ন করা যায়, তবে দেশের অর্থনীতিতে বিদেশী বিনিয়োগের ভূমিকা আরও বিস্তৃত হবে। বিদেশী বিনিয়োগ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথে নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ তৈরি করে, বিভিন্ন ইভেন্টের আয়োজন করে, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সাথে সহযোগিতা করে বিনিয়োগের সুযোগ প্রচার করে, তথ্যবহুল ইনফোগ্রাফিক্স তৈরি করে বিনিয়োগের সুবিধা ও প্রক্রিয়া সহজ ভাবে উপস্থাপনা করে বিদেশী বিনিয়োগ নিশ্চিত করা যেতে পারে। বিনিয়োগ সফলতার কেস স্টাডি প্রকাশ করে নতুন বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা ও একটা কৌশল হতে পারে। তবে, বিদেশীদের বিনিয়োগ সফলভাবে পরিচালনার জন্য সরকারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও উপযুক্ত নীতিমালা প্রয়োজন।সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি বিনিয়োগবান্ধব দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে এবং সেই সাথে পুঁজি বাজার ও চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।
লেখক পরিচিতিঃ
মোঃ আনিসুর রহমান (সজল)
অবসরপ্রাপ্ত লেঃকর্নেল, সামরিক বিশ্লেষক, লেখক ও সাহিত্যিক।
তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যাল থেকে স্নাতক ও কানাডা স্কুল ওব ম্যানেজমেন্ট থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
ক্যাডেট কলেজে থাকাকালীন হাউজ কালচারাল প্রিফেক্ট ছিলেন এবং কলেজ জীবন থেকে লেখালেখি করে আসছেন।
প্রিন্ট