ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo পাংশার মাছপাড়ায় জামায়াতে ইসলামী কর্মী ও সহযোগী সমাবেশ অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুর জেলা জজ কোর্টে সরকারি আইনজীবী (পিপি ও জিপি) নিয়োগে অসংগতি প্রতিবাদে সভা অনুষ্ঠিত Logo সদরপুরে খালের পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু Logo নোয়াখালী সুবর্ণচরে ২৮টি মোবাইল ট্যাবসহ আনসার সদস্য গ্রেফতার Logo ফরিদপুরে সাহসী সাংবাদিক গৌতম দাসের ১৯ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত Logo হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার থেকে ক্যাশ বাক্স ছিনতাই Logo রাজশাহীতে বীজ আলুর সংকট নিরসনে জরুরি সভা Logo তানোরের গোল্লাপাড়া বাজার বণিক সমিতির নির্বাচন Logo কুষ্টিয়ায় ট্রাকচাপায় স্কুলছাত্র নিহত Logo মধুখালী উপজেলার জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির এর রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

দিনমজুর থেকে শত কোটি টাকার মালিক যুবলীগ নেতা বেলাল

“আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া” প্রবাদটি গল্পের মতো মনে হলেও, ঠাকুরগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা বেলালের জীবন এই কথার এক জলন্ত উদাহরণ। দিনমজুর থেকে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার যুবলীগ নেতা বেলাল প্রায় ১৬ বছর আগে গঠন করা একটি সমবায় সমিতির সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এই সম্পদ অর্জন করেছেন।

 

বেলাল ঠাকুরগাঁও উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এবং ঠাকুরগাঁও গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি। তিনি বিলাসবহুল বাড়ি এবং হেরিয়ারের মতো দামি গাড়িতে চলাফেরা করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন। এই ঘটনার পর বালিয়াডাঙ্গী থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।

 

নাম গোপন রাখার শর্তে গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতির এক কর্মচারী জানান, বেলাল মিথ্যা মামলা, চেক জালিয়াতি, জমি দখল, এবং সমিতির টাকা দিয়ে সুদের ব্যবসার মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি এসব কর্মকাণ্ডে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার সহায়তা পেয়েছেন।

 

বেলালের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর গ্রামে। এক সময় তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সভাপতি পদে তিনি কখনও নিজে, কখনও বাবাকে, আবার কখনও স্ত্রীকে বসিয়ে পরিচালনা করেছেন। নিজের পরিবারের সদস্য এবং পছন্দের লোকদের নিয়ে গঠন করেছেন ব্যবস্থাপনা কমিটি।

 

ভুক্তভোগীরা বলেন, “গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতি থেকে আমরা ঋণ নিই, কিন্তু জামানত হিসেবে ব্যাংক চেক দিতে হয়। ঋণ পরিশোধের পর চেক ফেরত চাইলে তারা বলেন, চেক হারিয়ে গেছে।” এর ফলে অনেককে চেক জালিয়াতির মামলায় হয়রানি করা হয়েছে।

 

ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলার আওতায় ৮৬২টি সমবায় সমিতি রয়েছে, যার মধ্যে গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। সাম্প্রতিক অডিট প্রতিবেদনে সমিতির হিসাবের গড়মিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

 

বেলাল উদ্দীন অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম চলছে। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা।”

 

ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপ-সহকারী নিবন্ধক এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, “বেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকারিয়া মন্ডল মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক বলেন, “গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতি সম্পর্কে অভিযোগ এসেছে এবং আমরা বেলালের সম্পদের তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছি।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

পাংশার মাছপাড়ায় জামায়াতে ইসলামী কর্মী ও সহযোগী সমাবেশ অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

দিনমজুর থেকে শত কোটি টাকার মালিক যুবলীগ নেতা বেলাল

আপডেট টাইম : ০২:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪
মোঃ জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :

“আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়া” প্রবাদটি গল্পের মতো মনে হলেও, ঠাকুরগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা বেলালের জীবন এই কথার এক জলন্ত উদাহরণ। দিনমজুর থেকে তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার যুবলীগ নেতা বেলাল প্রায় ১৬ বছর আগে গঠন করা একটি সমবায় সমিতির সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে এই সম্পদ অর্জন করেছেন।

 

বেলাল ঠাকুরগাঁও উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এবং ঠাকুরগাঁও গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি। তিনি বিলাসবহুল বাড়ি এবং হেরিয়ারের মতো দামি গাড়িতে চলাফেরা করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই স্থানীয়রা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে শুরু করেছেন। এই ঘটনার পর বালিয়াডাঙ্গী থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এবং ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।

 

নাম গোপন রাখার শর্তে গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতির এক কর্মচারী জানান, বেলাল মিথ্যা মামলা, চেক জালিয়াতি, জমি দখল, এবং সমিতির টাকা দিয়ে সুদের ব্যবসার মাধ্যমে শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি এসব কর্মকাণ্ডে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার সহায়তা পেয়েছেন।

 

বেলালের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মধুপুর গ্রামে। এক সময় তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গণ উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সভাপতি পদে তিনি কখনও নিজে, কখনও বাবাকে, আবার কখনও স্ত্রীকে বসিয়ে পরিচালনা করেছেন। নিজের পরিবারের সদস্য এবং পছন্দের লোকদের নিয়ে গঠন করেছেন ব্যবস্থাপনা কমিটি।

 

ভুক্তভোগীরা বলেন, “গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতি থেকে আমরা ঋণ নিই, কিন্তু জামানত হিসেবে ব্যাংক চেক দিতে হয়। ঋণ পরিশোধের পর চেক ফেরত চাইলে তারা বলেন, চেক হারিয়ে গেছে।” এর ফলে অনেককে চেক জালিয়াতির মামলায় হয়রানি করা হয়েছে।

 

ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলার আওতায় ৮৬২টি সমবায় সমিতি রয়েছে, যার মধ্যে গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতি ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। সাম্প্রতিক অডিট প্রতিবেদনে সমিতির হিসাবের গড়মিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

 

বেলাল উদ্দীন অভিযোগের বিষয়ে বলেন, “ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক কার্যক্রম চলছে। আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা।”

 

ঠাকুরগাঁও জেলা সমবায় কার্যালয়ের উপ-সহকারী নিবন্ধক এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, “বেলাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

বালিয়াডাঙ্গী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাকারিয়া মন্ডল মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

 

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ঠাকুরগাঁও সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক বলেন, “গণ উন্নয়ন সমবায় সমিতি সম্পর্কে অভিযোগ এসেছে এবং আমরা বেলালের সম্পদের তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছি।”


প্রিন্ট