তিনি বলেন, “তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। তারা তাদের বন্দুক দিয়ে আমাকে পিটিয়েছে। তারা আমাকে লাথি মেরেছে। এখনও আমি সেই ব্যথায় নড়াচড়া করতে পারি না। আক্রমণের সময় আমার স্বামী আমার চিৎকার শুনে আমাকে বাঁচাতে আমাদের কুঁড়েঘরে ছুটে এসেছিল। কিন্তু তাকে আটকে রেখে আমাকে গণধর্ষণের চিত্র দেখতে বাধ্য করা হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “তারা আমাকে ধর্ষণ করার পর আমার স্বামীকে গলা কেটে হত্যা করেছে। চারজন আরাকান আর্মির সৈন্য আমার স্বামীকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল এবং একজন একটি বড় ধারালো ছুরি দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে।” তবে সিএনএন হামিদার উপর আক্রমণের বিষয়টি যাচাই করতে পারেনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ অন্যান্য ক্যাম্পে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন; যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালের আগস্টে এখানে পালিয়ে এসেছিল। সে সময় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী প্রায় ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করে যেটাকে জাতিসংঘ গণহত্যা হিসেবে বর্ণনা করে।
এখন হামিদার মতো নতুন আগতরা গণহত্যা, বেসামরিক নাগরিকদের উপর বোমা হামলা এবং গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়ার রিপোর্ট নিয়ে আসছে – যা সাত বছর পর ২০১৭ সালের হামলার বৈশিষ্ট্য বহন করে। তবে এবার এই বর্বরতার জন্য দায়ী করা হচ্ছে রাখাইন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মিকে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, আক্রমণের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক দিনটি ছিল ৫ আগস্ট, যখন মংডু শহরে যুদ্ধ করে পালিয়ে আসাদের উপর ড্রোন বোমা হামলায় ২০০ জন নিহত হয়েছিল।
অনলাইনে ব্যাপকভাবে প্রচারিত ভিডিওগুলোতে মৃতদেহের স্তূপ দেখা যায় যাদের বেশিরভাগ নারী এবং শিশু। তারা তাদের জিনিসপত্র নিয়ে উপকূল বরাবর একটি ম্যানগ্রোভ বনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বাংলাদেশে আসার জন্য নৌকায় উঠার চেষ্টা করে। এমন সময় তাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল।
মানবাধিকার গোষ্ঠী ফোর্টফাই রাইটসের একটি নতুন প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে (আইসিসি) “আরাকান আর্মি (এএ) দ্বারা সংঘটিত রোহিঙ্গা বেসামরিক গণহত্যার তদন্ত করার জন্য” আহ্বান জানিয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একটি পৃথক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, হামলাগুলো “জাতিগত নির্মূলের ভীতি বাড়াচ্ছে।”
সিএনএনের সাথে একটি সাক্ষাত্কারে আরাকান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র খাইং থু কা নৃশংসতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, প্রতিবেদনগুলোকে “ভুয়া খবর এবং ভুল তথ্য” বলে দাবি করেছেন।
৫ আগস্টের ড্রোন হামলা সামরিক বাহিনী চালিয়েছিল বলে দাবি করে তিনি বলেন, আরাকান আর্মি যোদ্ধারা “কখনও নিরীহ বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বা হত্যা করেনি।”
বাংলাদেশি কর্মকর্তারা সিএনএনকে বলেছেন, সাম্প্রতিক লড়াইয়ের সময় মিয়ানমার থেকে ৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এছাড়া আগত শরণার্থীদের জন্য মানবিক প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান এখন বাড়ছে।
ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের মুখপাত্র শারি নিজমান বলেছেন, “ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যাতে উত্তর রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের নিরাপত্তার সুযোগ দেওয়া হয়, বিশেষ করে মংডু শহরে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া নৃশংস হামলার পর। নতুন আগতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছে, যাদের মধ্যে কয়েকজন বন্দুকের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছেন।”
-জমিলা বেগম
ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) কক্সবাজারে একাধিক ক্লিনিক পরিচালনা করে। তারা সিএনএনকে জানান, তারা ৫-১১ আগস্টের মধ্যে “যুদ্ধের ক্ষত” নিয়ে আসা ৫৪ জনের চিকিৎসা করেছেন যাদের মধ্যে ৪৮% নারী ও শিশু।
জমিলা বেগম (৪৫) তার চার এতিম নাতি-নাতনিকে নিয়ে নৌকাযোগে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি জানান, গত ৫ আগস্ট যুদ্ধ একটু থামলে তার পরিবার তাদের বাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারপরে “বাড়ির ছাদে বোমা পড়েছিল”। সেই বোমার আঘাতে তার মেয়ে, তার স্বামী এবং তাদের ৭ বছর বয়সী মেয়ে নিহত হয়। জমিলা বেগম তার মেয়ের হাত থেকে সবচেয়ে ছোট ৬ মাসের শিশুকে নিয়ে পালিয়ে আসেন।
জমিলা বেগম নাতি-নাতনিদের নিয়ে পালিয়ে যান এবং বাংলাদেশি নৌকায় উঠার আগে পাঁচ দিন লুকিয়ে থাকেন। কিন্তু বোমার আঘাতে আহত তার বড় নাতি তা করতে পারেনি। তারা একটি নৌকা খুঁজে পাওয়ার আগেই সে মারা যায় এবং তাকে সৈকতে রেখে আসতে বাধ্য হন জমিলা। তিনি নাতি-নাতনিদের নিয়ে চলে আসার পর শুনতে পান আরাকান আর্মি আগুন দিয়ে তাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে।