ঢাকা , মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বাধ্য হয়ে কিনছেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা

ভেড়ামারাতে একটি ডাবের দাম ১৬০ টাকা !

ভেড়ামারায় কড়া রোদের মধ্যে একটু স্বস্তি খুঁজতে যারা ডাবের দোকানের ধারে কাছে যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে যারা ডাব কিনছেন, তারা কি বিত্তশালী। এর উত্তর যেমনই হোক, কিছু মানুষ যে বাধ্য হয়েই ডাব কিনছেন তা টের পাওয়া গেলো মুহূর্তেই।

ভেড়ামারা শহরের প্রাণকেন্দ্র গোডাউন মোড়ে ডাব বিক্রি করছিলেন দুইজন ব্যবসায়ী। এ সময় আশরাফ আলী নামের এক ডাব ব্যবসায়ীকে এক ক্রেতা এসেই দুইটি ডাব কেটে ব্যাগে দিতে বলেন। ডাব বিক্রেতা ডাব কেটে ব্যাগে দিয়ে দেন। ডাব হাতে নিয়ে দাম কত দিতে হবে ? জানতে চান ক্রেতা। এবার দাম শুনে হতবাক হয়ে যান ক্রেতা। মিডিয়াম সাইজের দুইটি ডাবের দাম চাওয়া হয় ৩২০ টাকা।

এবার ব্যবসায়ী ও ক্রেতার মধ্যে শুরু হয় বাকযুদ্ধ। পরাস্ত হয়ে ক্রেতা একটি ডাব রেখে দিতে বলেন। কিন্তু ডাব কাটা হয়ে গেছে, তাই নিতে অস্বীকৃতি জানালো বিক্রেতা। শেষে নানা অনুরোধে একটি ডাব রেখে অপর একটি বিক্রির বিষয়ে সম্মত হলেন ওই বিক্রেতা।

এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে ওই ক্রেতা বলেন, আমার নাম বলতে চাই না। তবে আমি এখানকারই বাসিন্দা। হঠাৎ করেই তীব্র গরমে ডায়রিয়া হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম ডাবের দাম ৭০-৮০ টাকা হবে। ১৬০ টাকা পিস ডাব। কি বলবো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বাধ্য হয়ে একটা ডাব নিলাম। দুটো ডাব কেনার মতো অবস্থা নেই।

এবার কথা হয় ডাব বিক্রেতা আশরাফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আগেও ডাবের এতো চাহিদা ছিলো না। গরম অনেক পড়ছে। ডাবের চাহিদাও বেড়েছে। ১০০ টাকার উপরে ডাব কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে তিন কোয়ালিটির ডাব আছে-১৪০ টাকা, ১৫০ টাকা আর ১৬০ টাকা।

আরেক ডাব বিক্রেতা মো. মানিক হোসেন। তিনি বলেন, বড় ডাব তিনি ১৫০ টাকা পিস, মাঝারিটা ১৪০ টাকা। আর ছোটটা ১২০ টাকা দামে বিক্রি করছেন।

চৈত্র-বৈশাখ খরতাপে পুড়তে থাকা ভেড়ামারায় হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ওষুধের পাশাপাশি ডাব খাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসাকরা। তাইতো ভেড়ামারায় ওষুধের পাশাপাশি ডাবের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। কিন্তু ডাব কিনতে গিয়ে দিশেহারা রোগী ও রোগীর স্বজনরা।

ভেড়ামারা শহরের চত্বর (চৌরাস্তা) মোড়, রেল বাজার, স্থানীয় বাসষ্ট্যাান্ড, চেীতন্য মোড়, গোডাউন মোড়সহ শহরের যে কয়টি স্পটে ডাব বিক্রি হয় প্রত্যেকটি স্পটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ডাবের খুচরা মূল্য আকার ভেদে ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রকারভেদে এই ডাবের দাম বর্তমান বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে হওয়ার কথা।

ডাব কিনতে আসা আলমগীর কবির শিপলু বলেন, গত সপ্তাহেও মাঝারি সাইজের ডাব কিনেছি ৭০ টাকায়। এটা এখন দেখি ১২০ টাকা হয়ে গেছে। বড়টা তো ১৬০ টাকা। দাম এত বেড়েছে যে কিনতেই ইচ্ছে করছে না। আবার যে গরম ডাব না খাইলেও সমস্যা।

সাতবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল মোমিন বলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই ডাবের দাম বাড়ছে। বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম যেমন বেশি, সেই সঙ্গে ডাবের দামও বেশি। ডাব কিনে খাওয়ার উপায় নেই। বর্ষাকালেও গরম বেড়েছে বলে অনেক ব্যবসায়ী ডাবের দাম বাড়িয়েছে। এ গরমে ডাব খাওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। এটা বুঝেই ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের সুযোগ নিচ্ছে।

তবে একাধিক সূত্র বলছে, পাইকারি পর্যায়ে ডাবের দাম বৃদ্ধি পেলেও এতো অস্বাভাবিকভাবে বাড়েনি। পাইকারিতে ১০০ টাকার নিচেই ডাব কেনা-বেচা হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে তা ১৬০ টাকায় যাওয়ার যৌক্তিকতা নেই।

বিক্রেতা আশরাফ আলীর বলেন, গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডাব ক্রয় করেন। কখনো গাছ থেকে নিজেরা আবার কখনো শ্রমিক দিয়ে ডাব সংগ্রহ করা হয়। এরপর ভ্যানে করে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার সাথে কিছু মানুষ জড়িত। আগের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। ফলে ডাবের দামও কিছুটা বেড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে প্রায় ১৮০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। ডাবের পানি খাওয়ার পর পটাশিয়ামের কারণে শরীরে একটা শীতল অনুভূতি আসে। ডাবে ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেড, সোডিয়াম ও পরিমাণমত ক্যালসিয়াম থাকে। এটি মানবদেহের জন্য খুব উপকারী।

চৈত্র থেকে শুরু করে বৃষ্টি নেই। বৈশাখ খরতাপে পুড়তে থাকা ভেড়ামারায় হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ওষুধের পাশাপাশি ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা কিন্তু ডাব কিনতে গিয়ে দিশেহারা।

 

ক্রেতারা বলছেন, সব জায়গায় দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছে। সুযোগ পেলেই ফায়দা লুটছে ব্যবসায়ীরা। নজরদারি না থাকায় যে যা খুশি তাই করছে। এ অবস্থার উত্তরণ দরকার।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

বাধ্য হয়ে কিনছেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা

ভেড়ামারাতে একটি ডাবের দাম ১৬০ টাকা !

আপডেট টাইম : ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪

ভেড়ামারায় কড়া রোদের মধ্যে একটু স্বস্তি খুঁজতে যারা ডাবের দোকানের ধারে কাছে যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশই দাম শুনেই চলে যাচ্ছেন। প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে যারা ডাব কিনছেন, তারা কি বিত্তশালী। এর উত্তর যেমনই হোক, কিছু মানুষ যে বাধ্য হয়েই ডাব কিনছেন তা টের পাওয়া গেলো মুহূর্তেই।

ভেড়ামারা শহরের প্রাণকেন্দ্র গোডাউন মোড়ে ডাব বিক্রি করছিলেন দুইজন ব্যবসায়ী। এ সময় আশরাফ আলী নামের এক ডাব ব্যবসায়ীকে এক ক্রেতা এসেই দুইটি ডাব কেটে ব্যাগে দিতে বলেন। ডাব বিক্রেতা ডাব কেটে ব্যাগে দিয়ে দেন। ডাব হাতে নিয়ে দাম কত দিতে হবে ? জানতে চান ক্রেতা। এবার দাম শুনে হতবাক হয়ে যান ক্রেতা। মিডিয়াম সাইজের দুইটি ডাবের দাম চাওয়া হয় ৩২০ টাকা।

এবার ব্যবসায়ী ও ক্রেতার মধ্যে শুরু হয় বাকযুদ্ধ। পরাস্ত হয়ে ক্রেতা একটি ডাব রেখে দিতে বলেন। কিন্তু ডাব কাটা হয়ে গেছে, তাই নিতে অস্বীকৃতি জানালো বিক্রেতা। শেষে নানা অনুরোধে একটি ডাব রেখে অপর একটি বিক্রির বিষয়ে সম্মত হলেন ওই বিক্রেতা।

এ নিয়ে কথা বলতে চাইলে ওই ক্রেতা বলেন, আমার নাম বলতে চাই না। তবে আমি এখানকারই বাসিন্দা। হঠাৎ করেই তীব্র গরমে ডায়রিয়া হয়েছে। আমি ভেবেছিলাম ডাবের দাম ৭০-৮০ টাকা হবে। ১৬০ টাকা পিস ডাব। কি বলবো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। বাধ্য হয়ে একটা ডাব নিলাম। দুটো ডাব কেনার মতো অবস্থা নেই।

এবার কথা হয় ডাব বিক্রেতা আশরাফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আগেও ডাবের এতো চাহিদা ছিলো না। গরম অনেক পড়ছে। ডাবের চাহিদাও বেড়েছে। ১০০ টাকার উপরে ডাব কিনতে হচ্ছে। এ কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে তিন কোয়ালিটির ডাব আছে-১৪০ টাকা, ১৫০ টাকা আর ১৬০ টাকা।

আরেক ডাব বিক্রেতা মো. মানিক হোসেন। তিনি বলেন, বড় ডাব তিনি ১৫০ টাকা পিস, মাঝারিটা ১৪০ টাকা। আর ছোটটা ১২০ টাকা দামে বিক্রি করছেন।

চৈত্র-বৈশাখ খরতাপে পুড়তে থাকা ভেড়ামারায় হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ওষুধের পাশাপাশি ডাব খাওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসাকরা। তাইতো ভেড়ামারায় ওষুধের পাশাপাশি ডাবের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। কিন্তু ডাব কিনতে গিয়ে দিশেহারা রোগী ও রোগীর স্বজনরা।

ভেড়ামারা শহরের চত্বর (চৌরাস্তা) মোড়, রেল বাজার, স্থানীয় বাসষ্ট্যাান্ড, চেীতন্য মোড়, গোডাউন মোড়সহ শহরের যে কয়টি স্পটে ডাব বিক্রি হয় প্রত্যেকটি স্পটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিটি ডাবের খুচরা মূল্য আকার ভেদে ১২০ থেকে সর্বোচ্চ ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রকারভেদে এই ডাবের দাম বর্তমান বাজারে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে হওয়ার কথা।

ডাব কিনতে আসা আলমগীর কবির শিপলু বলেন, গত সপ্তাহেও মাঝারি সাইজের ডাব কিনেছি ৭০ টাকায়। এটা এখন দেখি ১২০ টাকা হয়ে গেছে। বড়টা তো ১৬০ টাকা। দাম এত বেড়েছে যে কিনতেই ইচ্ছে করছে না। আবার যে গরম ডাব না খাইলেও সমস্যা।

সাতবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল মোমিন বলেন, সিন্ডিকেটের কারণেই ডাবের দাম বাড়ছে। বাজারের প্রতিটি জিনিসের দাম যেমন বেশি, সেই সঙ্গে ডাবের দামও বেশি। ডাব কিনে খাওয়ার উপায় নেই। বর্ষাকালেও গরম বেড়েছে বলে অনেক ব্যবসায়ী ডাবের দাম বাড়িয়েছে। এ গরমে ডাব খাওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। এটা বুঝেই ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের সুযোগ নিচ্ছে।

তবে একাধিক সূত্র বলছে, পাইকারি পর্যায়ে ডাবের দাম বৃদ্ধি পেলেও এতো অস্বাভাবিকভাবে বাড়েনি। পাইকারিতে ১০০ টাকার নিচেই ডাব কেনা-বেচা হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে তা ১৬০ টাকায় যাওয়ার যৌক্তিকতা নেই।

বিক্রেতা আশরাফ আলীর বলেন, গ্রামে ঘুরে ঘুরে ডাব ক্রয় করেন। কখনো গাছ থেকে নিজেরা আবার কখনো শ্রমিক দিয়ে ডাব সংগ্রহ করা হয়। এরপর ভ্যানে করে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার সাথে কিছু মানুষ জড়িত। আগের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে। ফলে ডাবের দামও কিছুটা বেড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে প্রায় ১৮০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। ডাবের পানি খাওয়ার পর পটাশিয়ামের কারণে শরীরে একটা শীতল অনুভূতি আসে। ডাবে ক্যালরি, কার্বোহাইড্রেড, সোডিয়াম ও পরিমাণমত ক্যালসিয়াম থাকে। এটি মানবদেহের জন্য খুব উপকারী।

চৈত্র থেকে শুরু করে বৃষ্টি নেই। বৈশাখ খরতাপে পুড়তে থাকা ভেড়ামারায় হঠাৎ করেই ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ওষুধের পাশাপাশি ডাব খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা কিন্তু ডাব কিনতে গিয়ে দিশেহারা।

 

ক্রেতারা বলছেন, সব জায়গায় দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছে। সুযোগ পেলেই ফায়দা লুটছে ব্যবসায়ীরা। নজরদারি না থাকায় যে যা খুশি তাই করছে। এ অবস্থার উত্তরণ দরকার।