রাজশাহীতে ভালো দাম ও লাভজনক হওয়ায় বাড়ছে পেঁয়াজ কদম (বীজ) চাষ। রাজশাহীতে চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ বীজের চাষ বেড়েছে প্রায় ১২ হেক্টর। পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ বীজ চাষে ঝুঁকছে চাষিরা। বাজারে তুলনামূলকভাবে বীজের দাম বেশি থাকে। গতবছর পেঁয়াজের বীজ বাজারে বিক্রি হয়েছে এক হাজার দুশ’ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় এবার ২৭০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করা হয়েছে। এখান থেকে প্রায় দুশ’ মেট্রিক টনের বেশি বীজ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। গত বছর পেঁয়াজের বীজের চাষ হয়েছিল প্রায় ২৫৮ হেক্টর জমিতে। এসব উৎপাদিত বীজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও সরবরাহ করা যাবে।
চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলার মধ্যে সব থেকে বেশি পেঁয়াজের (কদম) বীজ চাষ হয়েছে দুর্গাপুর উপজেলায়। এই উপজেলায় পেঁয়াজ বীজের চাষ হয়েছে প্রায় ১০৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও জেলার গোদাগাড়ীতে ৮৫ হেক্টর, পুঠিয়া উপজেলায় ৭০ হেক্টর, পবা, মোহনপুর, বাগমারা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পেঁয়াজের বীজের চাষ হয়েছে ৫ থেকে ১০ হেক্টর জমিতে। মোহনপুর উপজেলার জাহানাবাদ ইউনিয়নের (ইউপি) কইকুড়ি এলাকায় ১০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের বীজ চাষ করেছেন কলিম খাঁ। তিনি বলেন, এবছর পেঁয়াজের (কদম) রোগ বালায় দেখা দিয়েছে। ঘনঘন কিটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। পেঁয়াজের ফুলকা শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে ঝুঁকি বাড়ছে ফলন নিয়ে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি বৈশাখ মাসে শীলাবৃষ্টি নিয়ে। শীলা বৃষ্টিপাত হলে পেঁয়াজের কদম নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, এই পেঁয়াজের কদম জমিতে থাকবে চার মাস।
এছাড়া যখন জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হয়েছিল তখন তিনি বীজ পেঁয়াজ কিনেছিলেন চার হাজার টাকা মণ দরে। গত বছরও তিনি পেঁয়াজ কদমের চাষ করেছিলেন। তিনি পেঁয়াজের কদম থেকে আহরণ করা বীজ বিক্রি করেছিলেন দেড় থেকে দু’হাজার টাকা দরে। দুর্গাপুর উপজেলার জমির উদ্দিন চাষ করেছিলেন পেঁয়াজের বীজ। গতবছর এক বিঘা জমিতে চাষ করে লাভবান হয়েছিলেন তিনি। তাই এ বছর দেড় বিঘা জমিতে করেছেন পেঁয়াজ বীজের চাষ। তিনি বলেন, গত বছর বীজ বিক্রি করে লাভ হয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা। তাই এবছর নিজের ও লিজ নেওয়া জমিতে চাষ করেছেন পেঁয়াজ বীজ। এক বিঘা জমিতে তার সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৫৮ হাজার টাকা। এই ফসলের পরিবচর্যা বেশি লাগে। পরিচর্যার অভাব হলে ফলন কমে যাবে। সময় মত কিটনাশক দিতে হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, পেঁয়াজের ফুলকে সবাই কদম বলে থাকে। এই কদম থেকে পেঁয়াজের বীজ হয়। গত বছর বেশ ভালো দাম পেয়েছিল চাষীরা। তাই এই বছর বেড়েছে পেঁয়াজ বীজের চাষ। পেঁয়াজের বীজ চাষে মৌমাছির পরাগায়ন নিয়ে নতুন চাষীদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও সাদা কাপড়ের মাধ্যমে পরাগায়ন ঘটানোর কথা বলেছি। এতে বীজ ভালো মানের ও বেশি ফসল উৎপাদন হবে।
প্রিন্ট