ঢাকা , সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

বোয়ালমারী জর্জ একাডেমী

প্রধান শিক্ষককে নিয়মবহির্ভূতভাবে বহিষ্কারের অভিযোগঃ সভাপতির সাথে বিরোধ তুঙ্গে

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোয়ালমারী জর্জ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ এ বহিষ্কারের প্রতিবাদে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন শিক্ষক মন্ডলী। মঙ্গলবার (০৫.০৯.২৩) বিকেলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ, সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন এবং বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম যথা নিয়মে চলবে। সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি আইনগতভাবে ফয়সালা করা হবে।

জানা যায়, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি চতুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল হাসান ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয়ে অফিস কক্ষে গিয়ে অফিস সহকারী জামাল উদ্দিনের নিকট প্রধান শিক্ষককে বহিষ্কারের চিঠি ধরিয়ে দিয়ে যান। যে চিঠিতে সভার তারিক ও স্বাক্ষরের তারিখ ৩০ আগস্ট উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় প্রধান শিক্ষক অফিসিয়াল কাজে বিদ্যালয়ের বাইরে ছিলেন। পরে জানতে পেরে জরুরীভাবে শিক্ষক ও সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন।

মতবিনিময় সভায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ জানান- বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আমাকে অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদ্যালয়ের ফলাফল বিপর্যয়সহ একাধিক অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যা সম্পুর্ণ বিধি ও নিয়মবহির্ভূত। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ডাহা মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। মূলতঃ সভাপতি ও কয়েকজন সদস্য নির্বাচনের পর থেকেই নানা অনৈতিক সুবিধা বাগিয়ে নিতে আমাকে চাপ সৃষ্টি করে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আমি সেসব অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনিসহ কয়েকজন সদস্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। পরিচালনা কমিটির কোনো প্রকার মিটিং না করে তিনি নিজ বাড়িতে আজ্ঞাবহ কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে নিয়ম বহির্ভূত সভা করেছেন। অনেক সদস্য এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোপনে মিটিং করে আমাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

 

অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিয়মবহির্ভূত বরখাস্তের নির্দেশ- প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমিসহ সকল শিক্ষক কর্মচারী প্রত্যাখান করেছেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়। এতে বাজার মূল্য থেকে মাত্রাতিরিক্ত মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে। একজন অফিস সহকারী ও ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট নিয়োগ করা হবে। সভাপতি আগেই প্রার্থী সিলেক্ট করে ফেলেছেন। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এসি লাগানোর বিষয়ে আপত্তি দিয়েছি। স্কুলের গেট নির্মাণে স্কুল ফান্ড থেকে টাকা দিতে অস্বীকার করেছি। এ সকল বিষয় আপত্তি জানানোর কারণে সভাপতির সাথে আমার বিরোধ বাধে। যে বিরোধ এখন তুঙ্গে রয়েছে। বিধি ও নিয়মবহির্ভূত সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে বিভাগীয় আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ সময় দুএকজন শিক্ষক ছাড়া সবাই প্রধান শিক্ষককে সমর্থন জানায়। সাময়িক বহিষ্কারের আগে তাঁকে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়নি বলে জানান প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. কামরুল হাসান বলেন, সকল প্রকার নিয়ম মেনে বিধিমোতাবেক তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সভাপতি অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক কমিটির সাথে কোন প্রকার সহযোগিতা করেননা। মিটিং ডাকেনা, আমাদের সাথে বসেনা। সিসি ক্যামেরা ক্রয়ে অতিরিক মূল্য ধরা হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, কেনা-কাটার জন্য ক্রয় কমিটি আছে। তাঁরা বলতে পারবে। নারী কেলেংকারীর বিষয়ে তিনি জানেননা। কমিটির এক সদস্য বলেছেন চতুল উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরী করাকালীন ঘটনা ঘটেছিল। অর্থ কেলেংকারীর সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারেননি। বলেন এখন তদন্ত হবে।

 

 

তদন্ত করে সব অনিয়ম বের করা হবে এবং চুড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে। দুইজন লোক নিয়োগের বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে বললেও প্রধান শিক্ষক প্রক্রিয়া শুরু করেননা। কোন প্রার্থী সিলেক্ট করার বিষয়টি মোটেই সত্য নয় বলে জানান সভাপতি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার আমিও চিঠির একটা কপি পেয়েছি। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ সঠিক কি বেঠিক তা তদন্তস্বাপেক্ষে বলা যাবে। তবে বিদ্যালয়রে শিক্ষক প্রতিনিধিসহ ১০-১২জন আজ (বুধবার) একটি দরখাস্ত দিয়ে গেছে। তাঁরা ওই মিটিং সম্পর্কে কিছুই জানেনা। বহিষ্কারাদেশের ৩০ আগস্টের মিটিংটি ভুয়া বলে তাঁরা দাবি করেছেন।

Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

বোয়ালমারী জর্জ একাডেমী

প্রধান শিক্ষককে নিয়মবহির্ভূতভাবে বহিষ্কারের অভিযোগঃ সভাপতির সাথে বিরোধ তুঙ্গে

আপডেট টাইম : ০১:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :

ফরিদপুরের বোয়ালমারীর শতবর্ষী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোয়ালমারী জর্জ একাডেমীর প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ মোল্যাকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ এ বহিষ্কারের প্রতিবাদে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন শিক্ষক মন্ডলী। মঙ্গলবার (০৫.০৯.২৩) বিকেলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ, সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. সিরাজুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রধান শিক্ষক তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন এবং বিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম যথা নিয়মে চলবে। সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি আইনগতভাবে ফয়সালা করা হবে।

জানা যায়, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি চতুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল হাসান ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে বিদ্যালয়ে অফিস কক্ষে গিয়ে অফিস সহকারী জামাল উদ্দিনের নিকট প্রধান শিক্ষককে বহিষ্কারের চিঠি ধরিয়ে দিয়ে যান। যে চিঠিতে সভার তারিক ও স্বাক্ষরের তারিখ ৩০ আগস্ট উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় প্রধান শিক্ষক অফিসিয়াল কাজে বিদ্যালয়ের বাইরে ছিলেন। পরে জানতে পেরে জরুরীভাবে শিক্ষক ও সাংবাদিকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন।

মতবিনিময় সভায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ জানান- বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আমাকে অর্থ আত্মসাৎ, নারী কেলেঙ্কারি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদ্যালয়ের ফলাফল বিপর্যয়সহ একাধিক অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। যা সম্পুর্ণ বিধি ও নিয়মবহির্ভূত। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ ডাহা মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। মূলতঃ সভাপতি ও কয়েকজন সদস্য নির্বাচনের পর থেকেই নানা অনৈতিক সুবিধা বাগিয়ে নিতে আমাকে চাপ সৃষ্টি করে। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে আমি সেসব অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হলে তিনিসহ কয়েকজন সদস্য আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। পরিচালনা কমিটির কোনো প্রকার মিটিং না করে তিনি নিজ বাড়িতে আজ্ঞাবহ কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে নিয়ম বহির্ভূত সভা করেছেন। অনেক সদস্য এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোপনে মিটিং করে আমাকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

 

অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিয়মবহির্ভূত বরখাস্তের নির্দেশ- প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমিসহ সকল শিক্ষক কর্মচারী প্রত্যাখান করেছেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটিকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা লাগানো হয়। এতে বাজার মূল্য থেকে মাত্রাতিরিক্ত মূল্য বেশি দেখানো হয়েছে। একজন অফিস সহকারী ও ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট নিয়োগ করা হবে। সভাপতি আগেই প্রার্থী সিলেক্ট করে ফেলেছেন। প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এসি লাগানোর বিষয়ে আপত্তি দিয়েছি। স্কুলের গেট নির্মাণে স্কুল ফান্ড থেকে টাকা দিতে অস্বীকার করেছি। এ সকল বিষয় আপত্তি জানানোর কারণে সভাপতির সাথে আমার বিরোধ বাধে। যে বিরোধ এখন তুঙ্গে রয়েছে। বিধি ও নিয়মবহির্ভূত সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে বিভাগীয় আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ সময় দুএকজন শিক্ষক ছাড়া সবাই প্রধান শিক্ষককে সমর্থন জানায়। সাময়িক বহিষ্কারের আগে তাঁকে কোন কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়নি বলে জানান প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. কামরুল হাসান বলেন, সকল প্রকার নিয়ম মেনে বিধিমোতাবেক তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সভাপতি অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক কমিটির সাথে কোন প্রকার সহযোগিতা করেননা। মিটিং ডাকেনা, আমাদের সাথে বসেনা। সিসি ক্যামেরা ক্রয়ে অতিরিক মূল্য ধরা হয়েছে এ প্রশ্নের জবাবে সভাপতি বলেন, কেনা-কাটার জন্য ক্রয় কমিটি আছে। তাঁরা বলতে পারবে। নারী কেলেংকারীর বিষয়ে তিনি জানেননা। কমিটির এক সদস্য বলেছেন চতুল উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরী করাকালীন ঘটনা ঘটেছিল। অর্থ কেলেংকারীর সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দিতে পারেননি। বলেন এখন তদন্ত হবে।

 

 

তদন্ত করে সব অনিয়ম বের করা হবে এবং চুড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হবে। দুইজন লোক নিয়োগের বিষয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে বললেও প্রধান শিক্ষক প্রক্রিয়া শুরু করেননা। কোন প্রার্থী সিলেক্ট করার বিষয়টি মোটেই সত্য নয় বলে জানান সভাপতি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার আমিও চিঠির একটা কপি পেয়েছি। সাময়িক বহিষ্কারাদেশ সঠিক কি বেঠিক তা তদন্তস্বাপেক্ষে বলা যাবে। তবে বিদ্যালয়রে শিক্ষক প্রতিনিধিসহ ১০-১২জন আজ (বুধবার) একটি দরখাস্ত দিয়ে গেছে। তাঁরা ওই মিটিং সম্পর্কে কিছুই জানেনা। বহিষ্কারাদেশের ৩০ আগস্টের মিটিংটি ভুয়া বলে তাঁরা দাবি করেছেন।