ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু Logo লালপুরে বিএনপির মতবিনিময় ও কর্মীসভা অনুষ্ঠিত Logo ফরিদপুরে ৭ই ডিসেম্বর কর্মশালা সফল করার লক্ষ্যে ফরিদপুর বিভাগীয় বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত Logo তানোরে সার পচার, বিতরণে অনিয়ম, হট্টগোল ও মারপিট Logo ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় কওমী মাদরাসা ঐক্য পরিষদের পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত Logo বাংলাদেশের নৃত্য দল ভারতে সাংস্কৃতিক উৎসবে অংশগ্রহণ করে Logo সুন্দরবন প্রেসক্লাবের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন Logo বাগাতিপাড়ায় স্ত্রীর পরকীয়ার অভিযোগে স্বামীর আত্মহত্যা ! Logo কালুখালীতে জামায়াতের কর্মী সমাবেশ Logo বাগাতিপাড়ায় জাটকা মাছ জব্দ করে দন্ড
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সালথায় হারিয়ে গেছে ছোট নদী ‘মালঞ্চর নামকরণ

নদীমাতৃক বাংলাদেশের মধ্যবর্তী ফরিদপুর জেলা গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান নদী পদ্মার অববাহিকায়। আর এই জেলা শহরের কোল জুড়ে বয়ে চলা কুমার নদ পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার বাজার অতিক্রমকালে সৃষ্টি হয়েছে এর একটি শাখা নদী যার নাম মলঞ্চ। সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবনে ও রাজশাহীতে মালঞ্চ নামে পৃথক দুটি নদী রয়েছে। তবে সেসব নদীর মতো সুদীর্ঘ না হলেও ফরিদপুরের মালঞ্চ নদীর রয়েছে কয়েকশো বছরের প্রাচীন ইতিহাস।

ফরিদপুরের মালঞ্চ নদী সালথা উপজেলার গট্টিবাজারে কুমার নদ থেকে উৎপত্তি লাভ করে সিংহপ্রতাপ, গৌড়দিয়া, সলিয়া, সেনহাটি, খাগৈড়, গোয়ালপাড়া, গোবিন্দপুর ও দুর্গাপুর এই আটটি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। বিভিন্ন জনপদ ও গ্রাম ছাপিয়ে নদীটি ১২ কিলোমিটার পথপাড়ি দিয়ে আবারও কুমার নদের সাথে মিশেছে। এজন্য অনেকে এটিকে কুমার নদের অংশ মনে করে।

মাত্র ৩০ থেকে ৪০ বছর আগেও মালঞ্চ নদী ছিলো নানান জাতের দেশীয় মাছের সম্ভারে পরিপূর্ণ। স্থানীয়রা সেই মাছ শুটকি দিয়ে সারাবছরের খাদ্যসংস্থানের জন্য রেখে দিতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে অনেককিছুর সাথে মালঞ্চ নদীও তার আগের রুপলাবন্য হারিয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, নদীর এমন সুন্দর একটি নামই হারাতে চলেছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেনা, এই নদীর নাম মালঞ্চ।  নদীর পাড়ে বেড়ে ওঠা বর্তমান প্রজন্মেরও অনেকে জানেনা মালঞ্চ নদীর আসল নাম। ফরিদপুরের সরকারি-বেসরকারি নথিপত্রে কোথাও নেই মালঞ্চ নদীর কোন অস্তিত্বের বিবরণ।

স্থানীয়রা জানান, শুকনো মৌসুমে খড়ায় পানি শুকিয়ে জেগে উঠে মালঞ্চ নদীর উদোম শরীর। নদীটি সম্প্রতি খনন করা হয়েছে। এখন শুকনো মৌসুমে হাটু পানি থাকে কোথাও। আবার বর্ষায় পানিতে ভরে উঠে নদীর বুক। এ মৌসুমে ফরিদপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট জাগ দেয়া হয় এ নদীতে। পাটের পঁচা হাজামজা পানি নিয়েই বয়ে চলে নদী। গ্রামের সহজসরল প্রকৃতির মতোই তার ছুটে চলা। এমর সুন্দর স্নিগ্ধতা জড়ানো এই নদী যেনো সকলের অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে।

মালঞ্চ নদীর নামকরণের সাথে মিশে রয়েছে এক করুণ শোকগাথা। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক সূধীর দত্ত ওরফে উত্তম জানান, নবাবী আমলে সালথায় বড় জমিদার ছিলেন প্রতাপ সিংহ। তার মেয়ে যার নাম ছিলো মালঞ্চ। এই নদীতে নৌকায় বাড়ি ফেরার সময় সে নৌকাডুবিতে মারা গেলে তার নাম অনুসারেই এই নদীর নাম হয় মালঞ্চ।

ফরিদপুরের সাংবাদিক ও সালথার বাসিন্দা শ্রাবণ হাসান বলেন, এমন একটি সুন্দর নামের নয়নাভিরাম নদী রয়েছে আমাদের সালথায় অথচ তেমনভাবে কখনো জানা হয়ে উঠেনি। নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই এ নদীর নাম জানেনা।

হারুন-অর-রশীদ নামে আরেকজন সাংবাদিক যার বাড়িও এই সালথায় তিনি বলেন, নিবীড় প্রকৃতির মাঝে বয়ে চলা মালঞ্চ নদীর অপরূপ দৃশ্য সৌন্দর্যপিয়াসীদের আকৃষ্ট করে। নদীটি এখনো হারিয়ে যায়নি। তবে এই নদীর সুন্দর নামটি এখন হারাতে চলেছে।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ৬০ এর দশক থেকে ৮০ দশকেও এই নদীতে দেশীয় জাতের প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ শুকিয়ে শুটকী করে রাখা হতো। এটি কোন রুপকথা নয় বাস্তব সত্যি কথা। সেই ভরা ঐশ্বর্যের মালঞ্চ নদী আজ শুধু তার নাব্যতাই হারায়নি, নামটিই হারাতে চলেছে।

স্খানীয়দের মতে, নদীমাতৃক বাংলাদেশে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আরো অনেক নদনদীর মতো মালঞ্চ নদীর রুপলাবণ্য ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের একটি অপরিহার্য দাবি হয়ে উঠেছে।

ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকে এই নদীর নামই জানেনা যা খুবই উদ্বেগজনক। তাই নদীটি রক্ষা যেমন জরুরি, তেমনি মালঞ্চ নদীর নামটিও সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ থাকা দরকার।

এব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, এ নদীর বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই প্রথম জানতে পেলাম। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখব। আর যদি সরকারি নথিপত্রে এই নদীর নাম ও তথ্য না থাকে তাহলে তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমাদের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে।

 

 

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা এব্যাপারে বলেন, মালঞ্চ নদী সম্মন্ধে সেভাবে জানা নেই। আমরা সারাদেশের নদীর তথ্য হালনাগাদ করছি। যদি এটি নদীর শ্রেণিভুক্ত হয় তাহলে অবশ্যই নদনদীর তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলবো।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

বর্তমান সরকার ব্যর্থ হলে ছাত্র জনতার বিপ্লব ব্যর্থ হয়ে যাবেঃ -মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া পিংকু

error: Content is protected !!

সালথায় হারিয়ে গেছে ছোট নদী ‘মালঞ্চর নামকরণ

আপডেট টাইম : ০৬:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০২৩
এফ.এম আজিজুর রহমান, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি :

নদীমাতৃক বাংলাদেশের মধ্যবর্তী ফরিদপুর জেলা গড়ে উঠেছে দেশের প্রধান নদী পদ্মার অববাহিকায়। আর এই জেলা শহরের কোল জুড়ে বয়ে চলা কুমার নদ পার্শ্ববর্তী সালথা উপজেলার বাজার অতিক্রমকালে সৃষ্টি হয়েছে এর একটি শাখা নদী যার নাম মলঞ্চ। সাতক্ষীরা জেলার সুন্দরবনে ও রাজশাহীতে মালঞ্চ নামে পৃথক দুটি নদী রয়েছে। তবে সেসব নদীর মতো সুদীর্ঘ না হলেও ফরিদপুরের মালঞ্চ নদীর রয়েছে কয়েকশো বছরের প্রাচীন ইতিহাস।

ফরিদপুরের মালঞ্চ নদী সালথা উপজেলার গট্টিবাজারে কুমার নদ থেকে উৎপত্তি লাভ করে সিংহপ্রতাপ, গৌড়দিয়া, সলিয়া, সেনহাটি, খাগৈড়, গোয়ালপাড়া, গোবিন্দপুর ও দুর্গাপুর এই আটটি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে গেছে। বিভিন্ন জনপদ ও গ্রাম ছাপিয়ে নদীটি ১২ কিলোমিটার পথপাড়ি দিয়ে আবারও কুমার নদের সাথে মিশেছে। এজন্য অনেকে এটিকে কুমার নদের অংশ মনে করে।

মাত্র ৩০ থেকে ৪০ বছর আগেও মালঞ্চ নদী ছিলো নানান জাতের দেশীয় মাছের সম্ভারে পরিপূর্ণ। স্থানীয়রা সেই মাছ শুটকি দিয়ে সারাবছরের খাদ্যসংস্থানের জন্য রেখে দিতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে অনেককিছুর সাথে মালঞ্চ নদীও তার আগের রুপলাবন্য হারিয়েছে। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হলো, নদীর এমন সুন্দর একটি নামই হারাতে চলেছে। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেনা, এই নদীর নাম মালঞ্চ।  নদীর পাড়ে বেড়ে ওঠা বর্তমান প্রজন্মেরও অনেকে জানেনা মালঞ্চ নদীর আসল নাম। ফরিদপুরের সরকারি-বেসরকারি নথিপত্রে কোথাও নেই মালঞ্চ নদীর কোন অস্তিত্বের বিবরণ।

স্থানীয়রা জানান, শুকনো মৌসুমে খড়ায় পানি শুকিয়ে জেগে উঠে মালঞ্চ নদীর উদোম শরীর। নদীটি সম্প্রতি খনন করা হয়েছে। এখন শুকনো মৌসুমে হাটু পানি থাকে কোথাও। আবার বর্ষায় পানিতে ভরে উঠে নদীর বুক। এ মৌসুমে ফরিদপুরের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট জাগ দেয়া হয় এ নদীতে। পাটের পঁচা হাজামজা পানি নিয়েই বয়ে চলে নদী। গ্রামের সহজসরল প্রকৃতির মতোই তার ছুটে চলা। এমর সুন্দর স্নিগ্ধতা জড়ানো এই নদী যেনো সকলের অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে।

মালঞ্চ নদীর নামকরণের সাথে মিশে রয়েছে এক করুণ শোকগাথা। স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক সূধীর দত্ত ওরফে উত্তম জানান, নবাবী আমলে সালথায় বড় জমিদার ছিলেন প্রতাপ সিংহ। তার মেয়ে যার নাম ছিলো মালঞ্চ। এই নদীতে নৌকায় বাড়ি ফেরার সময় সে নৌকাডুবিতে মারা গেলে তার নাম অনুসারেই এই নদীর নাম হয় মালঞ্চ।

ফরিদপুরের সাংবাদিক ও সালথার বাসিন্দা শ্রাবণ হাসান বলেন, এমন একটি সুন্দর নামের নয়নাভিরাম নদী রয়েছে আমাদের সালথায় অথচ তেমনভাবে কখনো জানা হয়ে উঠেনি। নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই এ নদীর নাম জানেনা।

হারুন-অর-রশীদ নামে আরেকজন সাংবাদিক যার বাড়িও এই সালথায় তিনি বলেন, নিবীড় প্রকৃতির মাঝে বয়ে চলা মালঞ্চ নদীর অপরূপ দৃশ্য সৌন্দর্যপিয়াসীদের আকৃষ্ট করে। নদীটি এখনো হারিয়ে যায়নি। তবে এই নদীর সুন্দর নামটি এখন হারাতে চলেছে।

অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, ৬০ এর দশক থেকে ৮০ দশকেও এই নদীতে দেশীয় জাতের প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ শুকিয়ে শুটকী করে রাখা হতো। এটি কোন রুপকথা নয় বাস্তব সত্যি কথা। সেই ভরা ঐশ্বর্যের মালঞ্চ নদী আজ শুধু তার নাব্যতাই হারায়নি, নামটিই হারাতে চলেছে।

স্খানীয়দের মতে, নদীমাতৃক বাংলাদেশে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব থেকে বাঁচতে হলে আরো অনেক নদনদীর মতো মালঞ্চ নদীর রুপলাবণ্য ফিরিয়ে আনা এখন সময়ের একটি অপরিহার্য দাবি হয়ে উঠেছে।

ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক পান্না বালা বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকে এই নদীর নামই জানেনা যা খুবই উদ্বেগজনক। তাই নদীটি রক্ষা যেমন জরুরি, তেমনি মালঞ্চ নদীর নামটিও সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ থাকা দরকার।

এব্যাপারে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, এ নদীর বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই প্রথম জানতে পেলাম। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখব। আর যদি সরকারি নথিপত্রে এই নদীর নাম ও তথ্য না থাকে তাহলে তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আমাদের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হবে।

 

 

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা এব্যাপারে বলেন, মালঞ্চ নদী সম্মন্ধে সেভাবে জানা নেই। আমরা সারাদেশের নদীর তথ্য হালনাগাদ করছি। যদি এটি নদীর শ্রেণিভুক্ত হয় তাহলে অবশ্যই নদনদীর তালিকাভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলবো।


প্রিন্ট