মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সতর্কতার সঙ্গে মামলা তদন্তের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীরা যেন খালাস না পায় তদন্তে সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। রোববার বিকালে পুলিশ সদর দপ্তরে মাসিক (এপ্রিল-মে) অপরাধ পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অ্যাডিশনাল আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) মো. আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় পুলিশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার পুলিশ সুপার ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) জয়দেব কুমার ভদ্র, ডিআইজি (অপারেশনস) মো. হায়দার আলী খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত আইজিপি প্রতিটি সড়ক দুর্ঘটনাকে রেকর্ডে নেওয়ার জন্য মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিন। তিনি বলেন, গত ঈদুল ফিতরে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষের ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ। আসন্ন ঈদেও যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাগণকে নির্দেশ প্রদান করা হয়।
সভায় ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা, কুরবানির পশু পরিবহণ নিরাপদ ও স্বাভাবিক রাখা, পশুর হাটের নিরাপত্তা প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। পুলিশের এ সভায় এপ্রিল ও মে মাসে দেশের সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি সংক্রান্ত মামলার তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে-ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি, সিঁধেল চুরি, খুন, অপমৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, নারী ও শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধার ইত্যাদি।
সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশনা : চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আগ বাড়িয়ে ব্যবস্থা না নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি অবহিত করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে বলা হয়েছে। শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সাধারণত ডিএমপি কমিশনারই মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথি হন। এবার গুরুত্বপূর্ণ এই সভায় আইজিপি নিজেই উপস্থিত থেকে নির্দেশনা দেন।
সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, মাসিক অপরাধ সভায় প্রত্যেক মাসেই ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং জননিরাপত্তার স্বার্থে বাড়তি কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সভায় ডিএমপি’র ৮টি ক্রাইম জোন ও ডিবি’র ৮টি বিভাগের ডিসি, এডিসি, এসি ও ৫০টি থানার ওসিসহ ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত মাসে ঢাকার ৫০টি থানায় কতটি মামলা হয়েছে এবং কতটি মামলার চার্জশিট দেওয়ার প্রক্রিয়ায় তা আলোচনা হয়।
ডিএমপির বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রশংসা করে আইজিপি বলেন, জনসেবা দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। সব পুলিশ সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজ আমরা আস্থার জায়গা সৃষ্টি করেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তাই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হয়েছে। এ অবস্থা ধরে রাখতে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ডিএমপির ফোর্সদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, ভালো অর্জন ছোট ছোট খারাপ কাজের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। যখন সারা দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিবাদ দমনে যে নীতি গ্রহণ করেন আমরা তা অনুসরণ করে জঙ্গিবাদ দমন করতে পেরেছি। জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে পেরেছি।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সভাপতিত্বে সভায় অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) কামরুল আহসান, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) একেএম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান, সব যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, সব উপপুলিশ কমিশনার ও বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অপরাধ পর্যালোচনা সভায় ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানসহ উত্তম কাজের স্বীকৃতি হিসােব ডিএমপির বিভিন্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্যকে পুরস্কৃত করেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
প্রিন্ট