রাজবাড়ীর পাংশায় ২২ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার বাবুপাড়া ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর মাধমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মো. জুলফিকার আলী। তিনি বাবুপাড়া ইউনিয়নের চেচপাড়া বাজার সংলগ্ন নিশ্চিতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
বুধবার (১০ মে) মারপিটের কথা স্বীকার করে ইব্রাহীম, রাহুলসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা শ্রেণিকক্ষের বাইরে স্কুলের বারান্দায় সব ছাত্ররা কথা বলছিলাম। এ সময় আমাদের ক্লাসের ছাত্রীরা সবাই শ্রেণিকক্ষের ভেতরে হৈচৈ করছিল। জুলফিকার স্যার তখন পাশের রুমে ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস নিচ্ছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে একজন শিক্ষার্থী এসে আমাদের ক্লাসের ছাত্রীদের হৈচৈ করতে নিষেধ করেন।
এ সময় আমাদের মধ্যে কোনো এক ছাত্র ওই শিক্ষার্থীকে বলেন, স্যারের সমস্যা হলে স্যারতো আমাদের বলতো। এ কথা শুনে ওই শিক্ষার্থী ক্লাসে চলে যায়। পরে জুলফিকার স্যার এসে ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দিয়ে ছাত্রদের ক্লাসের মধ্যে ঢুকতে বলেন। আমরা ক্লাসে প্রবেশ করলে একজন ছাত্রীকে দিয়ে বেত এনে ক্লাসে থাকা ২০ জন ছাত্রকে এলোপাতারি মারপিট করে। ২ জন ছাত্র স্কুলের বাইরে ছিল। তারা স্কুলে ঢোকার পর তাদেরকেও লাইব্রেরিতে নিয়ে বেত্রাঘাত করে। এ বেত্রাঘাতের ঘটনায় অনেক ছাত্রের মাথায়, কানে, হাতে ও পিঠেসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়ে যায় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
মারপিটের শিকার শিক্ষার্থী ইব্রাহীমের মা রহিমা বেগম জানান, ঘটানার পর বেচপাড়া বাজারের কয়েকজন লোক আমার ছেলেকে একটি ভ্যানে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে আমার ছেলের মাথায় পানি ও আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বরফ দিলে কিছুটা সুস্থ হয়।
ছাত্রদের শ্রেণিকক্ষে ঢুকিয়ে বেত্রাঘাত করা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কামরুল ইসলাম, কেরানী আব্দুল রাজ্জাক ও প্রধান শিক্ষক ফিক্ষিরোধ কান্তি সরকার।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিক্ষিরোধ কান্তি সরকার বলেন, আমি এসএসসি পরীক্ষার ডিউটিতে ছিলাম। বিষয়টি জানতে পেরে ডিউটি শেষে বিদ্যালয়ে আসি। মারপিটের শিকার একাধিক ছাত্র ও অভিভাবকরা আমার কাছে এসেছিল। আমি স্কুলে এসে শিক্ষক জুলফিকার আলীকে পাইনি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে জানিয়েছি। এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ঘটনাটি কেন ঘটেছে তা জেনে অতিদ্রুত বিষয়টি সমাধান করা হবে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল ওহাব মন্ডল বলেন, বিষয়টি আমি স্কুলের কেরানির কাছ থেকে শুনেছি। ছাত্ররা শিক্ষকের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। স্যার একটু উত্তেজিত হয়ে ছাত্রদের বেত্রাঘাত করেছে। যদিও এটা স্যারের করা উচিত হয়নি। তবে এই ঘটনায় পর অভিভাবকরা স্কুলে এসে আমাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক জুলফিকার আলী বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ক্লাস চলাকালে দশম শ্রেণির ছাত্ররা স্কুলের বারান্দায় উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলছিল। আমি এক শিক্ষার্থী পাঠিয়ে ছাত্রদের কথা বলতে নিষেধ করি। এ সময় কোন এক ছাত্র বলে ওঠে ‘যার সমস্যা হয় সে এসে বলতে পারে না’। বিষয়টি আমার কানে এলে আমি ছাত্রদের কাছে জানতে চাই যে কোন ছাত্র এ কথা বলেছে। পরে কেউ স্বীকার না করায় সকল ছাত্রকে বেত্রাঘাত করেছি।
পাংশা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম আজাদ বলেন, মারপিটের শিকার শিক্ষার্থীরা ইউএনও অফিসে এসেছিল। ইউএনও স্যার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আগামীকাল অভিযোগ করবে বলে জানিয়েছে। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী জানান, গতকাল সন্ধ্যায় ১৯ জন শিক্ষার্থী আমার কাছে এসেছিল। আমি শিক্ষার্থীদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখেছি। ছবি তুলে রেখেছি। বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে অবগত করেছি। মারপিটের শিকার শিক্ষার্থীদের আগামীকাল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট