পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় রোকেয়া বেগম (২৬) নামে এক গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার সকালে উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের জোতহাসনা এলাকায় বাড়ির পাশের ডোবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই গৃহবধূর বাবা সহ পরিবারের সদস্যদের দাবি তাকে হত্যার পর বাড়ির পাশের ডোবায় ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ওই গৃহবধূর স্বামী এরশাদ আলী (৩৫) কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।
নিহত গৃহবধূর পরিবার ও পুলিশের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, প্রায় ৭ বছর আগে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের জোতহাসনা এলাকার হাসির উদ্দিনের ছেলে এরশাদ আলীর সাথে তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের রবিউল ইসলামের মেয়ে রোকেয়া বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতো। তাদের সংসারে বর্তমানে দুটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
গত বছর করোনার শুরুতে ঢাকায় কাজ হারিয়ে স্বামী স্ত্রী ফিরে আসেন নিজ গ্রামে। জোতহাসনা এলাকায় স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে একটি ছোট টিনের চালা ঘরে থাকতেন। ওই ঘরের পাশেই একটি মুরগি খামার করেন তারা। খামারটিতে কিছুদিন ধরে লোকসান হচ্ছিল।
এছাড়া খামারের দুর্গন্ধ নিয়ে তাদের প্রতিবেশিদের সাথে ঝগড়া হতো। স্বামী স্ত্রীর মধ্যেও ঝগড়া হতো। মঙ্গলবার রাতে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। সকালে তাদের ঘর সংলগ্ন ডোবায় রোকেয়ার মরদেহ পরে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসাপাতলের মর্গে প্রেরণ করেছে। ঘটনার পরপরই তার স্বামী এরশাদকে আটক করে পুলিশ।
এরশাদের পরিবার এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বললেও ওই গৃহবধূর পরিবার দাবি করছে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে ডোবায় ফেলে দেয়া হয়েছে। এরশাদ আলীর বড় ভাই খায়রুল ইসলাম বলেন, সকালে এরশাদ মুঠোফোনে রোকেয়াকে খুঁেজ পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানায়। এর পরপরই স্থানীয়রা রোকেয়ার লাশ পুকুরের পানিতে পড়ে থাকতে দেখে আমাদের জানায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। গত রাতে তাদের মাঝে ঝগড়া বিবাদের কথাও শুনিনি।
কি কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটল আমরা বুঝতেই পারলাম না। নিহত গৃহবধূর বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে এরশাদ আমাদের ফোন দিয়ে জানায় রোকেয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরেই আমরা জানতে পারি বাড়ির পাশের ডোবায় রোকেয়ার লাশ পাওয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর তার লাশ ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছে। আমার মেয়ে সাঁতার জানে। সে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার কথা না। তার দুই মেয়ের এখন কি হবে। আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা বলেন, ওই গৃহবধূর লাশের প্রাথমিক সুরতহালে পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হয়নি। বিষয়টি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
প্রিন্ট