ঢাকা , শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ৭ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আ. লীগ নেতা কৃষ্ণ চন্দ্র এখন এনসিপিতে Logo ইতিহাস ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ গোপালগঞ্জ -ভিপি নুরুল হক নুর Logo শহিদুল ইসলাম বাবুলের মুক্তির দাবিতে সদরপুর বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ Logo মধুখালীতে ইউনিয়ন কর্মী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১০ Logo বৃহত্তর রাজশাহীর কৃষি শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান সুমন রাফি Logo মাগুরায় সাবেক এমপি কাজী কামাল ও যুবদল নেতা নয়নের গণ সংবর্ধনা Logo চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রধান শিক্ষকের উপর দুর্বৃত্তদের হামলা Logo আমরা সবাই মিলে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবোঃ -মহম্মদপুরে কাজী কামাল  Logo কালুখালীতে শিল্প ও বনিক সমিতির আহ্বায়ক কমিটি গঠন Logo ঠাকুরগাঁওয়ে চাষ হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও ফিলিপাইন জাতের আখ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

ইসমাইল হোসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি ও পদ্মা নদীর ঘাট এলাকায় পর্যটনবান্ধব মৌলিক সুবিধাদি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। এর মধ্যে ২১ লাখ টাকার হদিস মিলছে না।

 

প্রকল্পের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ওয়াস ব্লক, ওয়াটার রিজার্ভার, গভীর নলকূপ, পাম্প মোটর স্থাপনের কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সেগুলো বাদ দিয়ে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। শুধু আরসিসি রোড, সাইট ডেভেলপমেন্ট, ছাতাসহ বেঞ্চ নির্মাণ করেই পুরো বরাদ্দ গায়েব করা হয়েছে।

 

প্রকল্পের খাতওয়ারি ব্যয়ের সঙ্গে বরাদ্দের হিসেব মেলাতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে নানা গড়মিল। তদন্তকালে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও সদুত্তর দেওয়া থেকে বিরত আছেন কমিটি প্রধান।

 

গত ২৬ মে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে কুঠিবাড়ি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়। অভিযোগ তদন্তে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মুকুল কুমার মৈত্রকে প্রধান করে গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল, পৌর প্রকৌশল এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী।

 

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় কুঠিবাড়ি চত্বরে তদন্তকালে উপস্থিত হয়ে অভিযোগকারীরা বলেছেন, তদন্ত কমিটি প্রধানের কাগজ-কলমে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাস্তবায়িত প্রকল্প ব্যয়ের ৬৯ লাখ টাকার হিসেব দিতে পারলেও বাকি টাকার বিষয়ে সদুত্তর মেলেনি। শুধু শিলাইদহ কুঠিবাড়ি এলাকার উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯০ লাখ টাকা। বাকি ২১ লাখ টাকার কোনো হদিস নেই তদন্ত কমিটির কাছে। এ প্রকল্পে অনিয়ম তদন্তে আগেও দুইবার তদন্ত করে সবকিছু ঠিকঠাক আছে বলে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

 

কুঠিবাড়ির প্রধান ফটক-সংলগ্ন চা দোকানী প্রত্যক্ষদর্শী আলামিন বলেছেন, কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়ার জন্য ডিসি অফিসের লোকজন তৎকালীন কাস্টোডিয়ানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু, উনি সেটা না দেওয়াতে কত কী হয়ে গেল? শেষ পর্যন্ত উনাকেই এখান থেকে সরিয়ে দিলো। অথচ, ওই কাস্টোডিয়ান চাইলে কোটি টাকা আয় করতে পারত।

 

তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য গণপূর্ত বিভাগের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুজ্জামান হোসেন বলেছেন, এই বরাদ্দ আসে জেলা প্রশাসনের কাছে। উনারাই টেন্ডার করিয়েছেন, অর্থ ব্যয় করেছেন, দেখে-শুনে নিয়েছেন। শুধু টেকনিক্যাল সাপোর্ট যেটা জেলা প্রশাসন চেয়েছে গণপূর্ত বিভাগ সেটাই দিয়েছে মাত্র। এখানে আর্থিক বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের সম্পৃক্ততা ছিল না।

 

তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মৃনাল কুমার মৈত্র বলেছেন, রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে মূলত জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। টেন্ডার হয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে। এখানে ৬৯ লাখ টাকার যে পাঁচটি কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেগুলো ঠিকঠাকভাবে হয়েছে কি না, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। এর বাইরে যদি আরো কোনো বরাদ্দ হয়ে থাকে, সেটার জবাব ডিসি অফিস দিবে।

 

দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী বলেছেন, গণশুনানির দিন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উপস্থাপিত হয়। সে সময় দুদক কমিশনার স্যার জেলা প্রশাসকের ওপর তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। উনারা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করলেই প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার আ. লীগ নেতা কৃষ্ণ চন্দ্র এখন এনসিপিতে

error: Content is protected !!

রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি

আপডেট টাইম : ০৬:৫১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
ইসমাইল হোসেন বাবু, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :

ইসমাইল হোসেন বাবুঃ

কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি ও পদ্মা নদীর ঘাট এলাকায় পর্যটনবান্ধব মৌলিক সুবিধাদি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। এর মধ্যে ২১ লাখ টাকার হদিস মিলছে না।

 

প্রকল্পের ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ওয়াস ব্লক, ওয়াটার রিজার্ভার, গভীর নলকূপ, পাম্প মোটর স্থাপনের কাজ অন্তর্ভুক্ত থাকলেও সেগুলো বাদ দিয়ে বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। শুধু আরসিসি রোড, সাইট ডেভেলপমেন্ট, ছাতাসহ বেঞ্চ নির্মাণ করেই পুরো বরাদ্দ গায়েব করা হয়েছে।

 

প্রকল্পের খাতওয়ারি ব্যয়ের সঙ্গে বরাদ্দের হিসেব মেলাতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে নানা গড়মিল। তদন্তকালে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলেও সদুত্তর দেওয়া থেকে বিরত আছেন কমিটি প্রধান।

 

গত ২৬ মে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে কুঠিবাড়ি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়। অভিযোগ তদন্তে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মুকুল কুমার মৈত্রকে প্রধান করে গণপূর্ত বিভাগ, শিক্ষা প্রকৌশল, পৌর প্রকৌশল এবং জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে বলে জানান দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী।

 

মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় কুঠিবাড়ি চত্বরে তদন্তকালে উপস্থিত হয়ে অভিযোগকারীরা বলেছেন, তদন্ত কমিটি প্রধানের কাগজ-কলমে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাস্তবায়িত প্রকল্প ব্যয়ের ৬৯ লাখ টাকার হিসেব দিতে পারলেও বাকি টাকার বিষয়ে সদুত্তর মেলেনি। শুধু শিলাইদহ কুঠিবাড়ি এলাকার উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯০ লাখ টাকা। বাকি ২১ লাখ টাকার কোনো হদিস নেই তদন্ত কমিটির কাছে। এ প্রকল্পে অনিয়ম তদন্তে আগেও দুইবার তদন্ত করে সবকিছু ঠিকঠাক আছে বলে প্রতিবেদনও জমা দেওয়া হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

 

কুঠিবাড়ির প্রধান ফটক-সংলগ্ন চা দোকানী প্রত্যক্ষদর্শী আলামিন বলেছেন, কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়ার জন্য ডিসি অফিসের লোকজন তৎকালীন কাস্টোডিয়ানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু, উনি সেটা না দেওয়াতে কত কী হয়ে গেল? শেষ পর্যন্ত উনাকেই এখান থেকে সরিয়ে দিলো। অথচ, ওই কাস্টোডিয়ান চাইলে কোটি টাকা আয় করতে পারত।

 

তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য গণপূর্ত বিভাগের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুজ্জামান হোসেন বলেছেন, এই বরাদ্দ আসে জেলা প্রশাসনের কাছে। উনারাই টেন্ডার করিয়েছেন, অর্থ ব্যয় করেছেন, দেখে-শুনে নিয়েছেন। শুধু টেকনিক্যাল সাপোর্ট যেটা জেলা প্রশাসন চেয়েছে গণপূর্ত বিভাগ সেটাই দিয়েছে মাত্র। এখানে আর্থিক বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের সম্পৃক্ততা ছিল না।

 

তদন্ত কমিটির প্রধান কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মৃনাল কুমার মৈত্র বলেছেন, রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি) থেকে উন্নয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে মূলত জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। টেন্ডার হয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে। এখানে ৬৯ লাখ টাকার যে পাঁচটি কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে, সেগুলো ঠিকঠাকভাবে হয়েছে কি না, তা আমরা তদন্ত করে দেখছি। এর বাইরে যদি আরো কোনো বরাদ্দ হয়ে থাকে, সেটার জবাব ডিসি অফিস দিবে।

 

দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মঈনুল হাসান রওশনী বলেছেন, গণশুনানির দিন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উপস্থাপিত হয়। সে সময় দুদক কমিশনার স্যার জেলা প্রশাসকের ওপর তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। উনারা তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করলেই প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


প্রিন্ট