আলিফ হোসেনঃ
রাজশাহীর তানোরে বাণিজ্যিকভাবে বস্তায় আদা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। স্বল্প পুজি বিনিয়োগ করে অল্প সময়ে উচ্চমূল্যের মসলা জাতীয় ফসল আদা চাষে বস্তা পদ্ধতিতে ঝুঁকছেন তরুণ উদ্যোক্তারা। সম্প্রতি উপজেলার, চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের শিলিমপুর এলাকায় পুকুর পাড়ে শুরু হয়েছে বস্তায় আদা চাষ। ওই এলাকার একরামুল ও আব্দুল মালেক, মিলে কয়েক একর জমির মাছের ঘেরের পাড়ে প্রায় আড়াই হাজার বস্তায় আদা চাষ করছেন।
এ পদ্ধতিতে আদা চাষে এলাকায় রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তারা। শুধু একরামুল-মালেক নন, আরও অনেকেই আধা চাষে ঝুঁকেছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ করণ প্রকল্পের মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষ সম্প্রসারণে উদ্বুদ্ধ হন কৃষি বস্তায় আদা চাষ একটি লাভজনক পদ্ধতি বলে জানান একরামুল। তিনি বলেন, ‘পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি অব্যবহৃত পাড়ে আমরা বস্তায় আদার চারা রোপণ করেছি।
খোলা জায়গা, পতিত জমি, ছাদে, বাড়ির আঙিনায়ও বস্তায় আদা চাষ করা যায়। সম্প্রতি তাঁদের বস্তায় আদা চাষ কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আজিজুর রহমান, রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক উম্মে ছালমা ও তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল্লাহ আহম্মদ এ কথা জানান কৃষি উদ্যোক্তা একরামুল। উপজেলা কৃষি অফিস, ইউটিউব এবং অনলাইন ভিত্তিক বিভিন্ন তথ্যে আদা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষি উদ্যোক্তারা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পরীক্ষামূলকভাবে এই প্রথম তানোরের সাত ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভা এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৩৬ হাজার ২৫০ বস্তায় আদা চাষ করছেন চাষিরা। এর মধ্যে, উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বস্তায়, কলমা ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় ৪ হাজার ৮০০ বস্তায়, তালন্দ ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বস্তায়, বাঁধাইড় ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার বস্তায়, কামারগাঁ ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় ৪ হাজার ১৩০ বস্তায়, পাঁচন্দর ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় ৩ হাজার বস্তায় ও সরনজাই ইউনিয়ন এলাকায় প্রায় ৪ হাজার ২৫০ বস্তায় আদা চাষ হয়েছে।
এছাড়াও উপজেলার তানোর পৌর এলাকায় প্রায় ২ হাজার ৫০ বস্তায় এবং মুন্ডুমালা পৌর এলাকার প্রায় ২ হাজার ৫৭০ বস্তায় কৃষি সম্প্রসারণ তানোর কার্যালয়ের উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষ করেছেন। কৃষি অফিস ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ’ পদ্ধতিতে প্রথমে বস্তায় পরিমাণ মতো জৈব ও রাসায়নিক সার এবং বেলে দোআঁশ মাটি দিতে হয়। এর সঙ্গে দানাদার কীটনাশক মিশিয়ে দিতে হয়। একেকটি বস্তায় ২০ থেকে ২৫ কেজি মাটি দিতে হয়। পরে তাতে বীজ আদা রোপণ করতে হয়।
একেকটি বস্তায় তিনটি চারা রোপণ করা হয়। বস্তাপ্রতি খরচ হয় ৫০ টাকার মতো।। ফলন ভালো হলে দেড় কেজির মতো আদা পাওয়া যায়। প্রতি কেজি আদা পাইকারি ২৫০ ও খুচরা ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
কৃষি উদ্যোক্তা মেজবাউল ইসলাম বলেন, আদা চাষে বেশি পরিচর্যা বা পরিশ্রম লাগে না। আর বস্তা পদ্ধতিতে করলে আগাছা বেশি হয় না। রোপণের পর সার প্রয়োজন হয় না। এই ফসল চাষে অতিরিক্ত জায়গারও প্রয়োজন হয় না। তিনি পুকুরপাড়ে সুপারি ও অন্যান্য গাছের মাঝখানে আদা চাষ করছেন।
প্রিন্ট