স্টাফ রিপোর্টার, ফরিদপুরঃ
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচয়ের সূত্র ধরে নিজেকে ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা সাজিয়ে ভাই হিসাবে তরুণীকে আইনি সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে অস্ত্রের মূখে জিম্মি করে ধর্ষণের চেষ্টা। ৫ ঘন্টা পর জিম্মিদশা থেকে ৯৯৯ এ ফোন করে হল শেষ রক্ষা হল তরুণীর।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১ টায় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার এস আই ফাহিম ফয়সাল তরফদার। এর আগে ভোর পৌনে ৫ টায় ডিবি পরিচয় দেয়া ওই আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
জেলার সদর থানাধীন কানাইপুরের ভাটিলক্ষ্মীপুর চুনাঘাটা এলাকা থেকে দিদার মাতুব্বর (৪২) কে অস্ত্র সহ আটক করেছে কোতয়ালী থানা পুলিশ। দিদারের বাড়ী একই ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামে। তার বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় ৯টি মামলা রেকর্ডভূক্ত আছে।
ভুক্তভোগী তরূণী এবং মামলার এজাহার সূত্রে যানা যায়, ভুক্তভোগী ওই তরূণীর সাথে তার নিকটতম আত্মীয় ইয়াসির আরাফাত রামীম নামে এক ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলের সাথে দীর্ঘ ৭ বছরের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিয়ের কথা বলে তরুণীর সাথে রামীমের একাধিকবার মেলামেশা হলে পরবর্তীতে সেটা আর বিয়ে পর্যন্ত গড়ায় না। এরপর রামীম ওই সম্পর্ককে অস্বীকার করে। ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবার বিষয়টি জানলে স্থানীয় থানায় এ বিষয়ে অভিযোগ করে। তরুণীর অভিযোগ থানা গ্রহণ করে মামলা রুজুর পরে পুলিশের পরামর্শে গত ১১ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য যায় ।
এসময় হাসপাতাল কম্পাউন্ডে দিদার মাতুব্বরের সাথে ভুক্তভোগী তরুণীর প্রথম পরিচয় হয়। দিদার নিজেকে ফরিদপুর জেলার ডিবি অফিসার বলে পরিচয় দিয়ে তরুণীর আস্থা অর্জন করে সর্বোচ্চ আইনি সহায়তা পাইয়ে দেবার বিষয়ে তরুনীকে আশ্বস্ত করে। এক পর্যায়ে ক্ষনিকের পরিচয়ের সূত্র ধরে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান হয় দুজনের মধ্যে। দিদার তখন নিজেকে ভাই হিসাবে ভুক্তভোগী তরুণীর প্রেমিক ইয়াসির আরাফাত রামীমকে গ্রেফতার করা সংক্রান্তে যাবতীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। পরবর্তী সময় থেকে দিদার ওই তরুণীকে ফোন করে তার বাড়ীর ঠিকানা নেয়। পরে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দেবার কথা বলে একই তারিখ রাত সাড়ে ১০ টায় তরুনীর বাড়িতে গিয়ে দেখা করার কথা বলে দিদার । এরপর দিদার ওই তরুণীর বাড়ির গেটের সামনে এসে মোবাইলে মাধ্যমে তাকে বাইরে আসার জন্য বলে। তরুণীর একাধিকবার বারণ করা সত্ত্বেও দিদারের অনুরোধে ওই তরুণী তার মাকে সাথে নিয়ে গেটের সামনে গেলে দিদার কিছু না বলে ওখান থেকে সরে গিয়ে পুনরায় ফোন করে তাকে একা গেটের সামনে আসতে বলে। এরপর সে একা গেটের সামনে গেলে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মুখ চেপে ধরে দিদার তরুণীকে তার বাড়ির শয়ন কক্ষে নিয়ে যায়। অস্ত্রের মুখে ৫ ঘন্টা যাবৎ জিম্মি তরুণীর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন নিপিড়নের চেষ্টা করে দিদার। পরে তরুণী কৌশলে অসুস্থতার ভান করে ৯৯৯ এ ফোন করলে ১২ তারিখ ভোর পৌনে ৫টায় কোতোয়ালি থানা পুলিশের দুটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে দিদারকে বিদেশি পিস্তল সহ আটক করে জিম্মি তরুনীকে উদ্ধার করে।
পুলিশ উপ পরিদর্শক ফাহিম ফয়সাল তরফদার জানান, একটি মামলার তদন্ত কাজে এক তরুনীকে আমরা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই ফরেনসিক রিপোর্টের জন্য। সেখানে তার সঙ্গে দিদারের পরিচয় হয়। দিদার একাধিক মামলার আসামি।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেন, এই ঘটনায় তরুনীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা হয়েছে। অন্যদিকে বিদেশী পিস্তল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে পৃথক আরও একটি মামলা দায়ের করেছে। সন্ধ্যায় আসামীকে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে
প্রিন্ট