মানিক কুমার দাস, ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি
কম্বল হাতে পেয়ে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর কল্যাণপুর গ্রামের বৃদ্ধা আলেয়া বেগম (৬৭) বলেন, গরীব মানুষ। একটা টিনের ঘরে থাকি। চারদিক দিয়া বাতাস ঢোকে। ঘরের মধ্যে কালাইয়া উঠি। এই কম্বল পাইয়া অনেক উপকার হইলো। এহন কম্বল মুড়ি দিয়া শান্তিতে ঘুমাইতে পারবো।
কম্বল নিতে প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে হাজির হন চর কল্যাণপুর গ্রামের মালেকা বেগম (৬৯)। কম্বল হাতে তুলে দিতেই তার দু্ই চোখ আনন্দে চক চক করে ওঠে।
মালেকা বেগম বলেন, , এইবার শুরু থেইক্কা হাড় কাঁপানো শীত পড়তেছে। শীতে হাড় পযন্ত ঠক ঠক কইরা কাঁপে। এখনও কেউ কম্বল দিতে আসে নাই। এই কম্বল পাইয়া আমি খুশী। আর শীতে কষ্ট পাইতে হবে না। এই কম্বল গায়ে দিলে ওম হবে।
চর গোপালপুর গ্রামের শিশু রাসেল সিকদার (১০) টাকার অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। সে গাঙ্গপাড়ে (পদ্মা নদীর পাড়) একটি দোকান করে। বাবা করেন কৃষিকাজ।
শিশু রাসেল সিকদার বলেন, ঘরে ভালো কোন কম্বল ছিল না যা দিয়া কাল ঠেকান যায়। এই কম্বল গায়ে দিয়া এইবার শান্তিতে ঘুমাতে পারবো।
এ কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে সারাক্ষণ উপস্থিত থেকে পযবেক্ষণ করছিলেন চরভদ্রাসনের অবৈতনিক শিক্ষক আব্দুস সবুর । তিনি বলেন, শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পায় চর এলাকার মানুষ। কিন্তু অসহায় এই মানুষগুলোর দিকে কেউ ফিরেও তাকায় না। প্রথম আলোকেই দেখেছি চরে এসে অসহায় দুঃস্থ মানুষ খুঁজে খুঁজে বের করে কম্বল বিতরণ করতে। বিপদে আপদে চরের মানুষের পাশে ছুটে আসে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। আদের কাজ অন্যদের জন্য উৎসাহ যোগাবে।
প্রথম আলো বন্ধু সভার সভাপতি মানিক কুণ্ডু বলেন, আজ ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে আমরা ফরিদপুর বন্ধুসভার সদস্যরা বের হয়ে পড়ি। সাড়ে আটটার দিকে চরভদ্রাসনের কাজীবাড়ি ঘাট থেকে ট্রলার ছেড়ে যায় চর ঝাউকান্দার চর গোপালপুর ঘাটের উদ্দেশ্যে। সে ট্রলারে চড়ে পদ্মা নদী পার হয়ে বন্ধুসভার ১০জন কর্মী এ কাজে অংশ নেয়।
তিনি বলেন, চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের চর গোপালপুর গ্রামে যেতে সাড়ে ৮টার ট্রালারটি ধরতে না পারলে পরবর্তি ট্রলার বেলা সাড়ে ১১টায়। ফরিদপুর শহরের চকবাজার এলাকায় অবস্থিত আদি ফরিদপুর বস্ত্রালয় থেকে দুইশ কম্বল নিয়ে আনুমানিক ২৮ কিলোমিটার দূরে চরভদ্রাসন উপজেলায় গিয়ে পদ্মা নদী পাড় হয়ে আমরা কম্বল তুলে দেই দুঃস্থ অসহায় মানুষদের হাতে।
প্রিন্ট