ইসমাইল হোসেন বাবু, ষ্টাফ রিপোর্টার
কুষ্টিয়ায় এক কৃষকদল নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও ভূমিহীনদের উচ্ছেদ চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঘণ্টাব্যাপী কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন ভুক্তভোগীরা। এসময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর)বিকেলের দিকে কুষ্টিয়া শহরতলির ত্রিমোহনী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, সুমন সরকার নামের এক নেতার নেতৃত্বে জমি দখলের জন্য বারখাদা হঠাৎপাড়ায় বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা চলছে। সুমন সরকার কুষ্টিয়া জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভার বারখাদা মৌজায় ৭.৩৬ একর সম্পত্তি রয়েছে। প্রায় ২২ বিঘা জমির ২১ বিঘাতে ভূমিহীনরা ৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। বাকি এক বিঘা জমিতে একটি মসজিদসহ ফাঁকা জায়গা রয়েছে। বুধবার সকালে জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক সুমন সরকার ৩০-৪০টি মোটরসাইকেলযোগে এসে মসজিদসহ ফাঁকা জায়গা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। একইসঙ্গে পৌরসভার সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলে পিলার পুঁতে সীমানা নির্ধারণ করে দেন তারা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ত্রিমোহনী মোড়ে ভূমিহীনরা জড়ো হয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে কুষ্টিয়া মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জড়িতদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
ভূমিহীন ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘বিন্দুমাত্র জায়গা নেই আমার। মাথাগোঁজার ঠাঁই হিসেবে কপালে জুটেছে সরকারি এই জায়গাটুকু। সেটিও দখল করতে এসেছে কৃষকদল নেতা সুমনের লোকজন। কেন আমাদের উচ্ছেদ করবে?’
হঠাৎপাড়ায় বসবাসরত শিমুল হোসেন বলেন, ‘এই জায়গা দখল করার জন্য কুষ্টিয়া জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক সুমন সরকার, সুজন সরকার, ছানোয়ার ডাক্তার, তাজ ও মাহাবুলের নেতৃত্বে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে। আজ সকালে প্রায় ৩০টি মোটরসাইকেলে এসে জোর করে সিমেন্টের খুঁটি পুঁতে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন তারা।
উজ্জ্বল হোসেন নামের স্থানীয় আরেকজন বলেন, বারখাদা ত্রিমাহনী হঠাৎপাড়াতে ৪০ বছর ধরে আমরা বসবাস করছি। এটি সরকারি জায়গা। আমার মতো আরও ২০০ ঘর এখানে রয়েছে। এ ঘরগুলো উচ্ছেদ করে দখলের চেষ্টা চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এমপি হানিফ ও তার ভাই আতা মিলে পৌরসভার এই জায়গা একাধিকবার দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখনো প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এখানে বসবাসরত পরিবার। সরকার পরিবর্তনের পর আবার এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। মূলত মসজিদসহ ফাঁকা জায়গাটুকু দখল নিতে পারলে এখানে বসবাসরত ভূমিহীনদের উচ্ছেদে দখলদারদের সুবিধা হবে। পরিবারগুলো নিজেরাই বালু ফেলে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কুষ্টিয়া জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক সুমন সরকার নিজেকে ‘নির্দোষ’ দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি বা আমার দলের কোনো লোক সেখানে ভূমিহীনদের জায়গা দখল করতে যাননি।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, ঘটনাস্থলে এসে জানতে পারি ২২ বিঘার মতো রয়েছে পৌরসভার। সেখানে ভূমিহীনরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। সেই জমি কে বা কারা দখলের চেষ্টা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রিন্ট