রাশিদুল ইসলাম রাশেদঃ
নাটোরের লালপুরে রেলস্টেশন এলাকাগুলো মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। নেশার অর্থ যোগান দিতে তারা একদিকে যেমন চুরি ডাকাতি ও ছিনতাই এর মত বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে, অন্যদিকে জনজীবনে ভয়ের সঞ্চার করছে। এতে অতিষ্ঠ হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এমনকি মাদকসেবী এসব নেশাখোরদের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।
ইতিমধ্যে উপজেলার গোপালপুর রেলগেটে নেশাগ্রস্থ হয়ে গোপালপুর রেলগেটম্যান শাফায়েত হোসেন চৌধুরীকে (৩৭) গালিগালাজ ও মারধরের ঘটনায় রবিবার (১১ মে) রাতে দুই নেশাখোরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
.
এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (১০ মে) রাত পৌনে দশটার দিকে আজিমনগর রেলস্টেশন সংলগ্ন গোপালপুর লেভেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যান শাফায়েত হোসেন চৌধুরীকে গালিগালাজ ও মারধর করে মদ খেয়ে নেশাগ্রস্থ দুই মাদকসেবী আজগর হোসেন (৪৬) ও বিপুল ঘোষ ড্রাইভার (৫৩)।
.
আজগর উপজেলার গুচ্ছগ্রামের মৃত জলিলের ছেলে ও বিপুল মধুবাড়ী গ্রামের রঞ্জিত ঘোষের ছেলে। আজিমনগর রেলস্টেশন মাস্টার মোঃ কামরুল হাসান লিখন ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
.
জানা যায়, শনিবার রাতে গোপালপুর রেলগেটে ডক্টর’স ফার্মেসিতে ওষুধ নিতে এসে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ভুলভাল প্রেসক্রিপশন পড়তে থাকেন বিপুল ঘোষ। এতে তার নেশায় আসক্ত থাকার বিষয়টি দোকানদার মিনহাজকে উল্লেখ করেন শাফায়েত। এ সময় বিপুলের সঙ্গে থাকা আজগর ক্ষিপ্ত হয়ে শাফায়েতকে গালিগালাজ করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডক্টর’স ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী মিনহাজ ইসলাম।
.
ভুক্তভোগী শাফায়েত বলেন, ওষুধের দোকানে মাতাল অবস্থায় আজগর আমাকে গালিগালাজ শুরু করলে আমি গেটঘরে চলে আসি। সেখানে সে আমাকে লাঠি দিয়ে মারধর ও প্রাণ নাশের হুমকি দেয়। রবিবার সকাল ১১ টায় আমার ডিউটি শেষ হলে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা গ্রহণ করি এবং রাতে ঈশ্বরদী জিআরপি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
.
আব্দুলপুর রেলস্টেশন জংশন মাস্টার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান নয়ন বলেন, গোপালপুর রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় মাদকাসক্তদের উপদ্রবে রেলওয়ে কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে। আমরা দ্রুত এর সমাধান চাই। এ বিষয়ে ঈশ্বরদী জিআরপি থানার ওসি জিয়াউর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.
স্থানীয়রা মাতালদের এমন উপদ্রবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, স্টেশনের কাছে একটি মদের ভাটি থাকায় মদ খেয়ে মাতালরা বিভিন্ন ধরনের চুরি-ছিনতাই সহ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। এতে এ অঞ্চলের জনজীবনে চরম নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তারা প্রশাসনের প্রতি দ্রুত মদের ভাটি ও মাদক কারখানাগুলো বন্ধের দাবি জানান।
.
এ ব্যাপারে লালপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজিজুল কবির বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেহেদী হাসান প্রশিক্ষণে থাকায় তিনি ইউএনও-র দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রিন্ট