ঢাকা , শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo আমাদের পশ্চাদগামিতা অনিবার্য হয় কেন ? Logo মাথিন ট্র‍্যাজেডি: ভালোবাসার এক করুণ পরিণতি Logo পরিবেশের জন্যে ঝুঁকি পাটকাঠি ছাই মিল বন্ধের দাবীতে মধুখালীতে মানববন্ধন Logo কুষ্টিয়ায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের আয়োজনে দোয়া ও আলোচনা সভা Logo ফরিদপুরে দুইদিন ব্যাপী রিপোর্ট রাইটিং প্রশিক্ষনের উদ্বোধন Logo পাংশা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে বিএনপির মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত Logo সালথায় সনদ জালিয়াতি ও ভুয়া নিয়োগে একই প্রতিষ্ঠানে একাধিক শিক্ষকের চাকরি Logo লালপুরে আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ Logo রাজাপুরে ৫৩ জনকে আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা, অজ্ঞাত ১৫০
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

এ নির্বাচনে আমার নয় জনগণের বিজয়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের জন্য ও গণতন্ত্রের জন্য যুগান্তকারী ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে। নির্বাচন খুব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি, যেটা আপনারা (পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক) নিজেরাই দেখেছেন।’

 

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে গতকাল সোমবার গণভবনে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

মতবিনিময়ের শুরুতে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনারা আমাদের দেশটাকে দেখতে এসেছেন।’

 

এবারের নির্বাচনে বিজয়কে ‘জনগণের বিজয়’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই বিজয়টা আমার বিজয় না। আমি মনে করি এই বিজয় জনগণের বিজয়। কারণ এখানে জনগণের অধিকার আছে, সরকার গঠন করার ক্ষমতা আছে তাদের হাতে। যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে, সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। সম্পূর্ণ ফলাফল এলে গেজেট হবে, তখনই শপথ হবে। এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবেন, সেটা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সেটা নির্বাচিত করবেন। মেজরিটি পার্টি যাকে নির্বাচিত করবেন তিনিই হবেন সংসদীয় দলের নেতা। তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে, তারপর সরকার গঠন হবে। এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া তা অনুসরণ করতে চাচ্ছি।’

 

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি অনেকবারই নির্বাচন করেছি। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে আটবার আমার নির্বাচন করা হয়ে গেছে। তবে এত মানুষের আগ্রহ আগে দেখিনি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ অনেক আনন্দিত এবং নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, মতামত দিয়েছেন, সেটা উপযোগী। সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

 

বিদেশি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন। বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থাকে আরও মজবুত করবে, শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

 

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিল নির্বাচনটা সুষ্ঠু করা। মানুষের যে ভোটের অধিকারটা অর্থাৎ সে যাকে চায়, কে সরকারে থাকবে, সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। সেজন্য নির্বাচনের সিস্টেমকে সংস্কার করেছি।’

 

এ সময় নির্বাচন কমিশন আইনসহ অন্যান্য বিধানাবলি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আরেকটু ব্যতিক্রমী। সাধারণত আমরা দলীয় প্রার্থী ঠিক করে দিই বা সব দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি যে যার ইচ্ছেমতো দাঁড়াতে পারবে।’

 

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। কারণ তারা কখনই করতে চায় না। সে দলগুলো মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি হয়। ফলে তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেজন্য নির্বাচনকে ভয় পায়। আমাদের দল হলো জনগণের দল। এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, যাকে নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে। অন্য দলগুলোরও বেশ কিছু নির্বাচিত হয়েছেন। এই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি।’

 

সূচনা বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকের প্রশ্নের জবাব দেন। বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইন প্রশ্ন রাখেন, ‘২০১৮ সালের পর আপনি প্রধান বিরোধী দলকে সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে রবিবারের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। যেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়নি। আপনার সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সীমিত করেছে, মানবাধিকারকর্মীরা এমন সমালোচনা করছেন। আপনি কি এখনো বিশ্বাস করেন, কোনো বিরোধী দল ছাড়া বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে?’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয় তার মানে এটা বোঝায় না যে, সেখানে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে জনগণ অংশ নিয়েছে কি নেয়নি।’

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘দলটি (বিএনপি) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তারা চেষ্টা করেছে, বাধা দিয়েছে, জনগণ যাতে ভোট দিতে না যায়। কিন্তু জনগণ তাদের কথা শোনেনি। কারণ আমাদের জনগণ এখন তাদের অধিকার নিয়ে খুবই সচেতন, ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রের যদি আলাদা কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এটা জনগণের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়। সুতরাং জনগণের অংশগ্রহণই মূল বিষয়।’

 

ভারতীয় গণমাধ্যম টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেভাদ্বীপ পুরোহিত প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন বাংলাদেশে আপনার বিরোধী দলেরও প্রয়োজন হবে। এ নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কি চান, আপনি কি বলছেন আমার উচিত একটি বিরোধী দল গঠন করা? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দলকে সংগঠিত করেছি। সুতরাং বিরোধীদেরও তাদের নিজেদের দলকে সংগঠিত করতে হবে। তারা যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে বলেন বিরোধী দলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত করতে, যদি আপনি চান আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা সত্যিকারের বিরোধী দল হবে না।’

 

বিদেশি এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, তার এ বিজয় উদযাপনের সময় তিনি ড. ইউনূসকে ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন কি না? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস নিজেদের কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন, তাদের কাছেই তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। ইউনূসের বিষয়টা শ্রম আদালতের। তার নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বঞ্চিত এবং তারা মামলা করেছেন। তিনি শ্রম আইন ভঙ্গ করেছেন, নিজের কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন। এখানে আমার কিছু করার নেই। তার ক্ষমার বিষয়ের প্রশ্ন আমার কাছে আসে না।’

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিচালনাকারী ‘লৌহমানবীর’ সঙ্গে তাকে তুলনা করে বিদেশি সাংবাদিকদের দেওয়া মতামতের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ চালানোর সময় পুরুষ না নারী, সে চিন্তা করা উচিত নয়। একজন নারী হিসেবে তিনি কখনই মনে করেন না তার কোনো বাধা আছে। তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। নারী একজন মা। যিনি পরিবার ও বাচ্চাদের দেখেন ও বড় করে থাকেন। মাতৃস্নেহ থেকেই তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ। দেশের জনগণের জন্য দায়িত্ববোধ রয়েছে যে তাদের জন্য কাজ করতে হবে। তাদের উন্নত জীবন দিতে হবে। আমি সেটা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

 

ভারতের প্রেস ক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ির প্রশ্ন ‘সুশাসন ও স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশকে লক্ষ্য ধরে তরুণ জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলব। আমাদের দেশের মানুষ খুব স্মার্ট।’

 

এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) সাংবাদিক অশোকা রাজ জানতে চান, আগামী পাঁচ বছরের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য কী? নির্বাচনে জয়ের পর ভারত থেকে বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে কী ধরনের শুভেচ্ছা পেয়েছেন? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের বড় বন্ধু। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের হত্যার পর ভারত তাকে ও তার বোনকে আশ্রয় দিয়েছিল। যদিও কিছু সমস্যা আছে কিন্তু সেটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করা হয়। এ ছাড়া সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের নীতি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে আসা সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন ভালো হয়েছে এটা বলার জন্য ওই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ল করেন, ‘আপনি কি বলবেন, এটা আপনার দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) চেয়ে ভালো নির্বাচন কি না?’

 

মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চমৎকার। তারা তার কথা শোনে। তবে কিছু বিরোধী আছে। সেটা খুব স্বাভাবিক। তিনি প্রতিশোধপরায়ণ নন। তিনি কখনো কারও ওপর প্রতিশোধ নেননি। তিনি খোলামনের ও উদার। অনেক টিভি চ্যানেল আছে কিন্তু সরকারের মাত্র একটি টিভি চ্যানেল। সেখানে মানুষ কথা বলছে। অনেক পত্রিকা, তারা লিখতে পারছে। সেখানে তিনি কখনই হস্তক্ষেপ করেন না। বরং কেউ সমালোচনা করলে তা ভালো। সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

 

গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের শতাধিক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ হাসিনা ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল উপস্থিত ছিলেন।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আমাদের পশ্চাদগামিতা অনিবার্য হয় কেন ?

error: Content is protected !!

এ নির্বাচনে আমার নয় জনগণের বিজয়

আপডেট টাইম : ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৪
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের জন্য ও গণতন্ত্রের জন্য যুগান্তকারী ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি যে, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে পারে। নির্বাচন খুব সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি, যেটা আপনারা (পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক) নিজেরাই দেখেছেন।’

 

নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে গতকাল সোমবার গণভবনে মতবিনিময়ের সময় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

মতবিনিময়ের শুরুতে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আপনারা আমাদের দেশটাকে দেখতে এসেছেন।’

 

এবারের নির্বাচনে বিজয়কে ‘জনগণের বিজয়’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এই বিজয়টা আমার বিজয় না। আমি মনে করি এই বিজয় জনগণের বিজয়। কারণ এখানে জনগণের অধিকার আছে, সরকার গঠন করার ক্ষমতা আছে তাদের হাতে। যেটা নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার সেটা তারা নিজেরা প্রয়োগ করবে, সেটা সুষ্ঠুভাবে হয়েছে।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন হয়ে গেছে, এখনো গেজেট হয়নি। সম্পূর্ণ ফলাফল এলে গেজেট হবে, তখনই শপথ হবে। এরপর আমাদের সংসদীয় দলের বৈঠক করতে হবে। সেখানে সংসদীয় দলের নেতা কে হবেন, সেটা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা সেটা নির্বাচিত করবেন। মেজরিটি পার্টি যাকে নির্বাচিত করবেন তিনিই হবেন সংসদীয় দলের নেতা। তখন সরকার গঠন করতে রাষ্ট্রপতির কাছে যেতে হবে, তারপর সরকার গঠন হবে। এটাই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া তা অনুসরণ করতে চাচ্ছি।’

 

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি অনেকবারই নির্বাচন করেছি। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে আটবার আমার নির্বাচন করা হয়ে গেছে। তবে এত মানুষের আগ্রহ আগে দেখিনি। আমি মনে করি, বাংলাদেশের জনগণ অনেক আনন্দিত এবং নির্বাচন যারা পর্যবেক্ষণ করেছেন, মতামত দিয়েছেন, সেটা উপযোগী। সেজন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

 

বিদেশি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যার যার দেশে ফিরে যাবেন। বাংলাদেশের কথা বলবেন। আপনাদের আগমন আমাদের গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থাকে আরও মজবুত করবে, শক্তিশালী করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

 

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০১৪ ও ’১৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবসময় এটাই চেষ্টা ছিল নির্বাচনটা সুষ্ঠু করা। মানুষের যে ভোটের অধিকারটা অর্থাৎ সে যাকে চায়, কে সরকারে থাকবে, সেটা মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে। সেজন্য নির্বাচনের সিস্টেমকে সংস্কার করেছি।’

 

এ সময় নির্বাচন কমিশন আইনসহ অন্যান্য বিধানাবলি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটা আরেকটু ব্যতিক্রমী। সাধারণত আমরা দলীয় প্রার্থী ঠিক করে দিই বা সব দল তাদের প্রার্থী নির্বাচন করে দেয়। এবার আমরা আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত করেছি, পাশাপাশি এ নির্বাচনটা উন্মুক্ত করে দিয়েছি যে যার ইচ্ছেমতো দাঁড়াতে পারবে।’

 

বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন একটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। কারণ তারা কখনই করতে চায় না। সে দলগুলো মিলিটারি ডিক্টেটরের হাতে তৈরি হয়। ফলে তারা নিজেরা চলতে পারে না, নিজেদের জনসমর্থন থাকে না। সেজন্য নির্বাচনকে ভয় পায়। আমাদের দল হলো জনগণের দল। এবারে নির্বাচনে জনগণ যে ভোট দিয়েছে, যাকে নির্বাচিত করেছে এবং আমাদের অনেক স্বতন্ত্রও নির্বাচিত হয়েছে। অন্য দলগুলোরও বেশ কিছু নির্বাচিত হয়েছেন। এই দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি।’

 

সূচনা বক্তব্যের পর শেখ হাসিনা বেশ কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকের প্রশ্নের জবাব দেন। বিবিসির সাংবাদিক সামিরা হুসেইন প্রশ্ন রাখেন, ‘২০১৮ সালের পর আপনি প্রধান বিরোধী দলকে সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করেননি। তাদের অনুপস্থিতিতে রবিবারের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। যেখানে ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দেয়নি। আপনার সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সীমিত করেছে, মানবাধিকারকর্মীরা এমন সমালোচনা করছেন। আপনি কি এখনো বিশ্বাস করেন, কোনো বিরোধী দল ছাড়া বাংলাদেশে একটি গতিশীল গণতন্ত্র থাকবে?’

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। যদি কোনো দল নির্বাচনে অংশ না নেয় তার মানে এটা বোঝায় না যে, সেখানে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে বিবেচনা করতে হবে জনগণ অংশ নিয়েছে কি নেয়নি।’

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘দলটি (বিএনপি) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তারা চেষ্টা করেছে, বাধা দিয়েছে, জনগণ যাতে ভোট দিতে না যায়। কিন্তু জনগণ তাদের কথা শোনেনি। কারণ আমাদের জনগণ এখন তাদের অধিকার নিয়ে খুবই সচেতন, ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার।’ তিনি আরও বলেন, ‘গণতন্ত্রের যদি আলাদা কোনো সংজ্ঞা থাকে, সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি এটা জনগণের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়। সুতরাং জনগণের অংশগ্রহণই মূল বিষয়।’

 

ভারতীয় গণমাধ্যম টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেভাদ্বীপ পুরোহিত প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি যখন গণতন্ত্রের কথা বলছেন, তখন বাংলাদেশে আপনার বিরোধী দলেরও প্রয়োজন হবে। এ নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?’ জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনি কি চান, আপনি কি বলছেন আমার উচিত একটি বিরোধী দল গঠন করা? আমি তা করতে পারি? আমি নিজেও বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘ সময়। আমরা আমাদের দলকে সংগঠিত করেছি। সুতরাং বিরোধীদেরও তাদের নিজেদের দলকে সংগঠিত করতে হবে। তারা যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তার জন্য কে দায়ী?’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে বলেন বিরোধী দলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে সংগঠিত করতে, যদি আপনি চান আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা সত্যিকারের বিরোধী দল হবে না।’

 

বিদেশি এক সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, তার এ বিজয় উদযাপনের সময় তিনি ড. ইউনূসকে ক্ষমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন কি না? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুহাম্মদ ইউনূস নিজেদের কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন, তাদের কাছেই তার ক্ষমা চাওয়া উচিত। ইউনূসের বিষয়টা শ্রম আদালতের। তার নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বঞ্চিত এবং তারা মামলা করেছেন। তিনি শ্রম আইন ভঙ্গ করেছেন, নিজের কর্মীদের বঞ্চিত করেছেন। এখানে আমার কিছু করার নেই। তার ক্ষমার বিষয়ের প্রশ্ন আমার কাছে আসে না।’

 

বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পরিচালনাকারী ‘লৌহমানবীর’ সঙ্গে তাকে তুলনা করে বিদেশি সাংবাদিকদের দেওয়া মতামতের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ চালানোর সময় পুরুষ না নারী, সে চিন্তা করা উচিত নয়। একজন নারী হিসেবে তিনি কখনই মনে করেন না তার কোনো বাধা আছে। তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন। নারী একজন মা। যিনি পরিবার ও বাচ্চাদের দেখেন ও বড় করে থাকেন। মাতৃস্নেহ থেকেই তিনি দেশের মানুষের জন্য কাজ করেন।

 

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি খুবই সাধারণ একজন মানুষ। দেশের জনগণের জন্য দায়িত্ববোধ রয়েছে যে তাদের জন্য কাজ করতে হবে। তাদের উন্নত জীবন দিতে হবে। আমি সেটা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

 

ভারতের প্রেস ক্লাবের সভাপতি গৌতম লাহিড়ির প্রশ্ন ‘সুশাসন ও স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশকে লক্ষ্য ধরে তরুণ জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যতের জন্য সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলব। আমাদের দেশের মানুষ খুব স্মার্ট।’

 

এশিয়ান নিউজ ইন্টারন্যাশনালের (এএনআই) সাংবাদিক অশোকা রাজ জানতে চান, আগামী পাঁচ বছরের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য কী? নির্বাচনে জয়ের পর ভারত থেকে বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে কী ধরনের শুভেচ্ছা পেয়েছেন? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত বাংলাদেশের বড় বন্ধু। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের হত্যার পর ভারত তাকে ও তার বোনকে আশ্রয় দিয়েছিল। যদিও কিছু সমস্যা আছে কিন্তু সেটা দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করা হয়। এ ছাড়া সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের নীতি।

 

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে আসা সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করেন। এর জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। বাংলাদেশের নির্বাচন ভালো হয়েছে এটা বলার জন্য ওই ব্যক্তিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ল করেন, ‘আপনি কি বলবেন, এটা আপনার দেশের (যুক্তরাষ্ট্র) চেয়ে ভালো নির্বাচন কি না?’

 

মতবিনিময়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষ চমৎকার। তারা তার কথা শোনে। তবে কিছু বিরোধী আছে। সেটা খুব স্বাভাবিক। তিনি প্রতিশোধপরায়ণ নন। তিনি কখনো কারও ওপর প্রতিশোধ নেননি। তিনি খোলামনের ও উদার। অনেক টিভি চ্যানেল আছে কিন্তু সরকারের মাত্র একটি টিভি চ্যানেল। সেখানে মানুষ কথা বলছে। অনেক পত্রিকা, তারা লিখতে পারছে। সেখানে তিনি কখনই হস্তক্ষেপ করেন না। বরং কেউ সমালোচনা করলে তা ভালো। সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

 

গণভবনের সবুজ লনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের শতাধিক সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষক উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শেখ হাসিনা ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল উপস্থিত ছিলেন।


প্রিন্ট