ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে জমি দখল, দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করেছেন কামরুল ইসলাম রফিক নামে এক ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে সম্প্রতি অভিযোগপত্র জমা দেন তিনি।
অভিযোগে বলা হয়, হাবিব হাসান এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর জনকল্যাণমূলক কাজে মনোযোগ না দিয়ে সুকৌশলে অবৈধ আয়ের উৎসগুলো চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে-ভূমিদস্যুতা, অবৈধ কাঁচাবাজার, পরিবহণ চাঁদাবাজি (লেগুনা/ অটোরিকশা), ডিশ- ইন্টারনেট অ্যান্টেনা, ফুটপাতে চাঁদা সংগ্রহ, ডোনেশনের নামে চাঁদাবাজি, পদবাণিজ্য, সেক্টর কল্যাণ সমিতির নির্বাচন না দিয়ে কমিটি ঘোষণা, বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে ডেকোরেটরের কাজের টাকা না দেওয়া, হোটেল, রেস্তোরাঁ, ফার্নিচার মার্কেট, স্কুল-কলেজে চাঁদাবাজি, জামায়াত প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ ও অর্থায়ন, বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে সিভিল এভিয়েশনের কাজ নিয়ন্ত্রণ এবং ১শ থেকে ৫শ কোটি টাকার কাজ ভাগবাঁটোয়ারার মাধ্যমে ভোগ করা।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পশ্চিমে বাউনিয়া মৌজায় ১১০ বিঘা জমির ওপর হাবিব সিটি ঘোষণা করেন তিনি। পারিবারিকভাবে ৮-১০ বিঘা জমির মালিক হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ জমির ওপর মাটি ভরাট করে আয়ত্তে নেন। প্রকৃত মালিক ওই জমির ধারেকাছে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে, কাঠাপ্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে জমি তার নামে লিখে দেওয়ার প্রস্তাব করেন। কেউ বিক্রি করতে আপত্তি জানালে তাকে ভয়, হুমকি ও ব্ল্যাকমেইলিং করার চেষ্টা করেন। তার ভাগিনা তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডি হালিম ও তার ভাইদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ৬ বিঘা সম্পত্তি ৫ লাখ টাকা কাঠা দামে কিনে নেন। অনেকের কাছ থেকে কমিশন রেজিস্ট্রি নিয়ে নির্ধারিত টাকার অর্ধেক দিয়ে বাকি অর্ধেক টাকা বাকি রেখে পরে পরিশোধ করবে বলে সময় নেওয়া হয়। এরপর পাওনাদার সময়মতো টাকা চাইতে গেলে অপমান-অপদস্থ হতে হয়। এছাড়া তার নানাবাড়ির আত্মীয় খোরশেদ মাতব্বরের এক বিঘা জমি দখলে রেখেছেন, যার মূল্য ১০ কোটি টাকা। বর্তমানে তার সম্পত্তির কাছে যাওয়ার সুযোগ নেই। আরও অনেক ভুক্তভোগী তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে এসব অভিযোগের তদন্ত চলছে। এছাড়া টঙ্গীর লালবানু নামে একজনের ৪৪ শতাংশ জমি দখল করে বালি ভরাট করেছেন। তারা দুই বোন হাবিবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ৪ লাখ টাকা কাঠা দরে জমি বিক্রির প্রস্তাব করেন। তারা রাজি না হলে অপমান করে বাসা থেকে বের করে দেন।
হাবিবের এই ভূমিদস্যুতায় প্রধান সহযোগী নূর হোসেন-যিনি তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। এই নূর হোসেনের মাধ্যমে সম্প্রতি মেট্রোরেলসংলগ্ন মাইলস্টোন কলেজের পেছনে ৩শ কোটি টাকা মূল্যের ৭ বিঘা জমি কয়েক কোটি টাকায় দখল করেন। এ ধরনের ভূমি দখলে তারা পারিবারিকভাবে বহু আগে থেকেই সম্পৃক্ত। বিষয়টি ঢাকা-১৮ আসনের সবাই জানেন। এ ধরনের দখলবাজির শত শত অভিযোগ হাবিব হাসান পরিবারের রয়েছে। উত্তরা সোনারগাঁও জনপদ রোডে রাজউকের খালি প্লটের ফার্নিচার মার্কেট থেকে প্রতিমাসে ৫ লাখ টাকা চাঁদা নেন তিনি। এসব চাঁদাবাজিতে যুক্ত রয়েছেন ৫১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা বিপুল এবং যুবলীগ নেতা সোহেল। আব্দুল্লাহপুর মাছবাজার থেকে তিনি প্রতিমাসে ১১ লাখ টাকা চাঁদা নেন। এতে সহযোগিতা করেন মোতালেব কাউন্সিলর। হাসেম চেয়ারম্যানের ছেলে নাজমুলের ১০নং সেক্টরসংলগ্ন কাঁচাবাজার থেকে প্রতিমাসে এমপি হাবিব ৩ লাখ, এমপির ভাই সোহেল ১ লাখ এবং এমপির ছেলে তানিম ১ লাখ টাকা চাঁদা নেন।
১১নং সেক্টরে মোস্তফা মেম্বারের কাঁচাবাজার মার্কেট থেকে এমপি হাবিব প্রতিমাসে ১৫ লাখ টাকা কাউন্সিলর শফিকের মাধ্যমে নিয়ে থাকেন। ময়লার মোড়, রবীন্দ্র ইউনিভার্সিটির পাশে রাজউকের জমিতে একটি মামলা চলমান। ওই মালিকের সঙ্গে তুরাগের নুর হোসেনে মাধ্যমে এমপি হাবিব একটি চুক্তি করেন-যাতে উল্লেখ থাকে ভাড়ার অর্ধেক অর্ধেক নেবেন। কিন্তু মার্কেট চালু হওয়ার পর এমপি নিজেই মালিকানা দখল করে নেন।
উত্তরখান ফালুর মার্কেট দখল করে ওই অঞ্চলের কাউন্সিলর জয়নালের মাধ্যমে মাসে ৩ লাখ টাকা ভাড়া আদায় করেন। গত বছরের ২৬ জুলাই উত্তরা ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে ঢাকা-১৮ আসনের সব থানা, ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা নেন।
এ বিষয়ে দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-১৮ আসনের এমপি হাবিব হাসানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ ব্যাপারে এমপি হাবিব হাসানকে বারবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। -সূত্রঃ -যুগান্তর।
প্রিন্ট