বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট কৃষি অর্থনীতিবিদ, একুশে পদক প্রাপ্ত, এ্যামিরিটার্স প্রফেসার ড. এম এ সাত্তার মন্ডল এখন ক্লাস নেন গ্রামের তার পড়ার হাই স্কুলে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কৃষ্ণারডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীর ইংরেজি ক্লাস নিতে দেখা গেছে তাকে। ডঃ এম এ সাত্তার এই কৃষ্ণারডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়েই মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনা করেছেন বলে জানাগেছে।
তিনি উপজেলার উত্তর গুপীনাথপুর গ্রামের গফুর মন্ডলের জৈষ্ঠ পুত্র।
তিনি ছোট বেলার স্মৃতির টানে ছুটে আসেন বাল্য জীবনের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তবে পড়ার জন্য নয় বিদ্যালয়ের প্রিয় শিক্ষার্থীদের কিছু শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তিনি ঐ বিদ্যালয়ে নবম ও দশম শ্রেণীর ইংরেজি বিষয় পাঠদান করেন।
এ প্রসঙ্গে ডঃ এম এ সাত্তার মন্ডল বলেন, আমি এখানে আসি শিখরের টানে, এখানে আমার জন্ম, অনেক খেলার সাথীও রয়েছে এই এলাকায়।
ইচ্ছে থাকা সত্বেও তাদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারি না কর্মের ব্যাস্ততার কারনে।
তবে যতটুকু সময় পাই তখনই ছুটে আসার চেষ্টা করি এই জন্ম স্থানে। এখানকার মানুষদের সত্যিই মন থেকে ভালোবাসি।
আমি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিচ্ছি। আমার উদ্দেশ্য গ্রামের স্কুল কোমলমতি শিক্ষার্থীরা সঠিক শিক্ষা পেয়ে ভালো কলেজে লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাফল্য ও শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ মোল্যা বলেন, এ্যমিরেটার্স প্রফেসর ডঃ এম এ সাত্তার মন্ডল স্যার এই বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তার শিক্ষাদান সত্যিই আমাদের আনন্দিত করছে ঠিক তেমনি শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হচ্ছে। তিনি আমাদের গর্ব, তথা সারাদেশেরই গর্ব, আল্লাহুতায়ালা তাকে যেন দীর্ঘ হায়াত দান করেন।
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাহাদাৎ হোসেন বলেন ডঃ এম এ সাত্তার মন্ডল স্যার আমাদের দারুণ ভাবে পাঠ্যপুস্তকসহ অন্যান্য বিষয়ে শিখাচ্ছেন। আমরাও সহজেই বুজতে পারি, স্যার সত্যিই একজন ভালো মনের মানুষ। আমদের মনের আশা আমরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করে স্যারের মতো হবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মঈনুল হক বলেন, একুশে পদক প্রাপ্ত এ্যামিরেটার্স প্রফেসর ডঃ এমএ সাত্তার মন্ডল স্যারের মতো একজন ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করাচ্ছেন এটা সত্যিই খুশির খবর, এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উৎসাহ বাড়বে। স্যারের এই উদ্যোগকে স্বাদুবাদ জানাই।
ডাঃ প্রফেসর এমএ সাত্তার বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক হিসেবে ৫ বছর দায়িড্ব পালন করেছেন।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের কৃষি অর্থনীতি বিভাগে যোগদান করেছেন।
অধ্যাপক সাত্তার মন্ডল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি গ্রাজুয়েট এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১তম উপাচার্য ছিলেন। এর আগে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক হিসাবে কৃষি অর্থনীতি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের অন্যতম সদস্য হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী ডঃ সাত্তার মন্ডল কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের ডীন, বিভাগীয় প্রধান, সিন্ডিকেট সদস্য ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপুর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
সাত্তার মন্ডল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন (১৯৭২-১৯৭৪)।
তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে ১৯৭৯ সনে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পোষ্ট ডক্টরাল স্টাডি সম্পন্ন করেন (১৯৮৭-৮৮) । তিনি দেশী বিদেশী সাহায্যপুষ্ট উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গবেষণা প্রকল্পের প্রধান হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার ও পলিসি ফোরামে অংশগ্রহণ করেন।
কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়নের ওপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে ডঃ সাত্তার মন্ডলের কয়েক শতাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ, বই ও সেমিনার পেপার এবং জনপ্রিয় নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ জার্নাল অব এগ্রিকালচারাল ইকোনোমিক্স এর সম্পাদক ছাড়াও তিনি সুদীর্ঘ সময় ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইরিগেশন অ্যান্ড ড্রেনেজ-সিস্টেমের সদস্য ছিলেন।
অধ্যাপক সাত্তার মন্ডল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতির সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতির পদ অলংকৃত করা ছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন পেশাগত সংগঠনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে দেশে ও বহির্বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বলকল্পে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন। ব্যক্তিগত জীবনে অধ্যাপক মন্ডল বিবাহিত এবং এক পুত্র ও এক কন্যার জনক।
প্রিন্ট