ঢাকা , শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানা বিএনপির উদ্যোগে এক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo জোরকরে চেয়ারম্যানকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষরঃ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ Logo ভেড়ামারায় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে পার্টনার ফিল্ড স্কুল কংগ্রেস অনুষ্ঠিত Logo রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গ্রেপ্তার Logo রাজাপুরে সন্ত্রাসী হামলায় সাংবাদিক আহত Logo কুষ্টিয়ায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ছাত্রদল নেতা নিহত Logo কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে কর বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত Logo যশোর উপশহর কলেজের নবনির্বাচিত গভর্নিং বডির পরিচিতি অনুষ্ঠিত Logo রাজশাহী প্রেসক্লাব থেকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজদের দূরীকরণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি, সাংবাদিকদের স্মারকলিপি প্রদান  Logo যশোরে করোনায় দুই জনের মৃত্যু
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

সংগ্রাম করে টিকে আছে চাটমোহরের শাঁখারীরা

শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য তুষাঃ

 

সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের সাত পাকে বাঁধার সময় থেকে হাতে শাখার ব্যবহার আদিকাল থেকে চলে আসছে। স্বামীর মঙ্গলের জন্য আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বী বিবাহিত নারীরা হাতে শাঁখা ব্যাবহার করে আসছেন।বিয়ে হয়েছে অথচ তাদের হাতে শাখা নেই এমনটা কল্পনাতীত।

তাই এ প্রয়োজন মেটাতে যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় পাবনার চাটমোহরের হান্ডিয়াল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ডেফলচরায় শাঁখারিরা কাঁটা শঙ্খ থেকে শাঁখা তৈরী ও নকশাঁ তৈরি করে আসছেন।

চাটমোহর পৌর সদর নতুন বাজার হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরে ডেফলচরা গ্রামের অবস্থান।বহুকাল ধরে এ গ্রামে বসবাস করে আসছেন শঙ্খ শিল্পের সাথে জরিত শাঁখারিরা। বর্তমানে এই গ্রামে ৩৭ টি শাঁখারি পরিবারের বসবাস। তার মধ্যে ৩০ টি পরিবার শাখা শিল্পের সাথে জড়িত। আর বাকি পরিবারগুলো পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

গত ১০ থেকে ১৫ বছরের সঙ্খের দাম বেড়েছে ৪ থেক ৫ গুণ। কাঁচামালের দাম বাড়ার ফলে ক্রেতারা শাখা কিনতে চান না । ফলে শাঁখারিদের লোকসান হয়। অভাবের কারণে দরিদ্র শাঁখারিরা মহাজনের কাছে কম দামে শাখা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। সরকারি বেসরকারি ব্যাংক থেকে সহজে ঋণও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তি টানতে টানতে দিশেহারা হয়ে পড়েন এবং একসময় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। অনেকেই অন্য পেশার সাথে জরিত হয়ে পড়ছেন জীবন ও জীবিকার তাগিদে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে দরকার সরকারি সাহায্য সহোযোগিতা।

এ গ্রামের শাঁখারী বিকাশ কুমার ধরের স্ত্রী ৩৫ বছর বয়সী সিমা রানী ধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর বিয়ে হয়। বিয়ের আগে বাবা মায়ের কাছে শাখায় নকশার কাজ করা শিখি। বিয়ের পরে শশুর বাড়িতে এসে এ কাজই করছি। সকাল থেকে রাত প্রায় ১০ টা পর্যন্ত বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি শাখায় নকশাঁ তৈরি করি। বিভিন্ন আকারের রেত দিয়ে ঘষে প্রতিদিন চিকন প্রায় ৩০ জোড়া আর মোটা শাখা হলে ২৫ জোড়া তৈরি করা যায়।

শাখারি বাবলু কুমার ধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমার পূর্ব পুরুষেরাও এ পেশায় ছিলো। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে শঙ্খ কাটা অবস্থায় আমাদের দেশে আসে। কাটা শঙ্খ ইলেকট্রিক মোটরের সাহায্যে ফিনিশিং করে আনি। এজন্য মটর মালিককে জোড়া প্রতি ২০ টাকা করে দিতে হয়। এরপর বাড়ির মহিলারা হাতে নকশা তৈরির কাজ করে। পরে পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে শাঁখা বিক্রি করি। নকশা ও গুণগত মান অনুযায়ী ৫ শত টাকা থেকে ১৫ শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। তবে শঙ্খের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে সব শেষে আমাদের বেশি টাকা থাকে না। যে টাকা হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। বাপ দাদার ব্যবসা জন্য এখনো করছি। তা না হলে কবেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিতাম।

একই গ্রামের মধুসূদন সেন আজকের পত্রিকাকে জানান, একসময় শাখায় নকশাঁ করে বিক্রি করতাম। এক বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। ঋণের টাকা শোধ করতে গিয়ে টাকার অভাবে ব্যবসা বাদ দিয়ে দিয়েছি। আমার পূর্বপুরুষেরা ও শিল্পের সাথে জড়িত ছিলো জন্য ভালোবাসার কারণে এখনো অন্য পেশায় যেতে পারি নাই। এখন মজুরির ভিত্তিতে মহাজনের কাজ করে দেই। আমরা যান্ত্রিক মোটরের সাহায্যে মহাজনের শাখা ফিনিশিং এর কাজ করি। পরে তারা সেই শাখায় নকশা করে বিক্রি করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা নাসের চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন,প্রাচীন এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ঋণেরও ব্যবস্থা করব।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানা বিএনপির উদ্যোগে এক কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

error: Content is protected !!

সংগ্রাম করে টিকে আছে চাটমোহরের শাঁখারীরা

আপডেট টাইম : ০৯:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য তুষার, জেলা প্রতিনিধি পাবনা :

শুভাশীষ ভট্টাচার্য্য তুষাঃ

 

সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বিয়ের সাত পাকে বাঁধার সময় থেকে হাতে শাখার ব্যবহার আদিকাল থেকে চলে আসছে। স্বামীর মঙ্গলের জন্য আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত সনাতন ধর্মাবলম্বী বিবাহিত নারীরা হাতে শাঁখা ব্যাবহার করে আসছেন।বিয়ে হয়েছে অথচ তাদের হাতে শাখা নেই এমনটা কল্পনাতীত।

তাই এ প্রয়োজন মেটাতে যুগ যুগ ধরে বংশ পরম্পরায় পাবনার চাটমোহরের হান্ডিয়াল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম ডেফলচরায় শাঁখারিরা কাঁটা শঙ্খ থেকে শাঁখা তৈরী ও নকশাঁ তৈরি করে আসছেন।

চাটমোহর পৌর সদর নতুন বাজার হতে প্রায় ১২ কিলোমিটার দুরে ডেফলচরা গ্রামের অবস্থান।বহুকাল ধরে এ গ্রামে বসবাস করে আসছেন শঙ্খ শিল্পের সাথে জরিত শাঁখারিরা। বর্তমানে এই গ্রামে ৩৭ টি শাঁখারি পরিবারের বসবাস। তার মধ্যে ৩০ টি পরিবার শাখা শিল্পের সাথে জড়িত। আর বাকি পরিবারগুলো পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

গত ১০ থেকে ১৫ বছরের সঙ্খের দাম বেড়েছে ৪ থেক ৫ গুণ। কাঁচামালের দাম বাড়ার ফলে ক্রেতারা শাখা কিনতে চান না । ফলে শাঁখারিদের লোকসান হয়। অভাবের কারণে দরিদ্র শাঁখারিরা মহাজনের কাছে কম দামে শাখা বিক্রি করতে বাধ্য হয়। সরকারি বেসরকারি ব্যাংক থেকে সহজে ঋণও পাওয়া যায় না। বাধ্য হয়ে বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে কিস্তি টানতে টানতে দিশেহারা হয়ে পড়েন এবং একসময় ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হন। অনেকেই অন্য পেশার সাথে জরিত হয়ে পড়ছেন জীবন ও জীবিকার তাগিদে। এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে দরকার সরকারি সাহায্য সহোযোগিতা।

এ গ্রামের শাঁখারী বিকাশ কুমার ধরের স্ত্রী ৩৫ বছর বয়সী সিমা রানী ধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, সপ্তম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর বিয়ে হয়। বিয়ের আগে বাবা মায়ের কাছে শাখায় নকশার কাজ করা শিখি। বিয়ের পরে শশুর বাড়িতে এসে এ কাজই করছি। সকাল থেকে রাত প্রায় ১০ টা পর্যন্ত বাড়ির অন্যান্য কাজের পাশাপাশি শাখায় নকশাঁ তৈরি করি। বিভিন্ন আকারের রেত দিয়ে ঘষে প্রতিদিন চিকন প্রায় ৩০ জোড়া আর মোটা শাখা হলে ২৫ জোড়া তৈরি করা যায়।

শাখারি বাবলু কুমার ধর আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমার পূর্ব পুরুষেরাও এ পেশায় ছিলো। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে শঙ্খ কাটা অবস্থায় আমাদের দেশে আসে। কাটা শঙ্খ ইলেকট্রিক মোটরের সাহায্যে ফিনিশিং করে আনি। এজন্য মটর মালিককে জোড়া প্রতি ২০ টাকা করে দিতে হয়। এরপর বাড়ির মহিলারা হাতে নকশা তৈরির কাজ করে। পরে পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে শাঁখা বিক্রি করি। নকশা ও গুণগত মান অনুযায়ী ৫ শত টাকা থেকে ১৫ শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যায়। তবে শঙ্খের দাম বেড়ে যাওয়ার কারনে সব শেষে আমাদের বেশি টাকা থাকে না। যে টাকা হয় তা দিয়ে সংসার চালানোই মুশকিল। বাপ দাদার ব্যবসা জন্য এখনো করছি। তা না হলে কবেই এ ব্যবসা ছেড়ে দিতাম।

একই গ্রামের মধুসূদন সেন আজকের পত্রিকাকে জানান, একসময় শাখায় নকশাঁ করে বিক্রি করতাম। এক বেসরকারি সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। ঋণের টাকা শোধ করতে গিয়ে টাকার অভাবে ব্যবসা বাদ দিয়ে দিয়েছি। আমার পূর্বপুরুষেরা ও শিল্পের সাথে জড়িত ছিলো জন্য ভালোবাসার কারণে এখনো অন্য পেশায় যেতে পারি নাই। এখন মজুরির ভিত্তিতে মহাজনের কাজ করে দেই। আমরা যান্ত্রিক মোটরের সাহায্যে মহাজনের শাখা ফিনিশিং এর কাজ করি। পরে তারা সেই শাখায় নকশা করে বিক্রি করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা নাসের চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন,প্রাচীন এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ।সরকারিভাবে ক্ষুদ্র ঋণেরও ব্যবস্থা করব।


প্রিন্ট