দেশের পুঁজিবাজার পরিস্থিতি নিয়ে রবিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বৈঠকে দিকনির্দেশনা দেন।
পুঁজিবাজারের অগ্রযাত্রায় যেসব পলিসিলিগত পরিবর্তন ও পদক্ষেপ দরকার, তা দ্রুত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে সহায়তা করারও দিকনির্দেশনা দেবেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। আর এসব বিষয় তিনি নিজে তত্ত্ব্বাবধান করবেন বলেও জানিয়েছেন। এ বৈঠকের প্রভাবে গতকাল মঙ্গলবার পুঁজিবাজার পরিস্থিতি বেশ চাঙ্গা ছিল।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসির চেয়ারম্যান পুঁজিবাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় পুঁজিবাজারের উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন বিএসইসি চেয়ারম্যান। দেশের অর্থনীতি যেভাবে বিকশিত হচ্ছে, একইভাবে পুঁজিবাজারকেও বিকশিত করতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
বাজার আরো বড়, সময়োপযোগী ও আধুনিক করতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। উনি আমাকে সমাধান দিয়ে দিয়েছেন।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, ‘পুঁজিবাজারে আকর্ষণীয় পণ্য চালু করা হবে। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আমাদের কিছু কর্মসূচি বিলম্বিত হয়েছিল। সেগুলো এ বছরেই করা হবে। পুঁজিবাজার যাতে আরো সমৃদ্ধ হয়, আরো বড় হয়, লেনদেনের পরিমাণ যাতে আরো বাড়ে, সে জন্য অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাপোর্ট দিচ্ছি। পুঁজিবাজার যাতে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেটার জন্য আমরা সব পদক্ষেপ নিচ্ছি। লেনদেন আরো বাড়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বলেন আস্থা নেই। আমি তাঁদের বলি, আস্থার জন্য আর কী কী করতে হবে বলেন, আমরা সেটা করব। সরকার পুঁজিবাজার উন্নয়নে সব করছে। বাকিটা বাজারে অংশগ্রহণকারীদের করতে হবে। এখন বাজার আরো বড় হওয়া উচিত।’
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘মার্কেট ডেরিভেটিভস অনেকগুলোই আসবে। এর মধ্যে কারেন্সি ডেরিভেটিভস একটি। মেয়েদের জন্য অরেঞ্জ বন্ড, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পিংক বন্ড এ বছর আনব আমরা।’
বৈঠক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বন্ডে বিনিয়োগকে পুঁজিবাজার এক্সপোজারের বাইরে রাখতে ব্যাংক কম্পানি আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ক্যাবিনেট বৈঠকেই আইনটি পাস করা হবে বলে জানা গেছে। আর এটি যেন দ্রুত পাস করা হয়, সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখছেন প্রধানমন্ত্রী।
জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিএসইসির চেয়ারম্যান দেখা করতে গিয়েছিলেন। এ সময় পুঁজিবাজারের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। দেশের পুঁজিবাজারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করছি, সামনের দিনগুলোতে পুঁজিবাজার আরো বড় হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮২ পয়েন্টে। ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৭২ পয়েন্টে এবং ২ হাজার ২১৫ পয়েন্টে।
এর আগে সোমবার ডিএসইএক্স কমেছিল ৪ পয়েন্ট। তবে এর আগের চার কার্যদিবস টানা বেড়েছিল। এর মধ্যে ১০ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছিল ১৪ পয়েন্ট, যা ১১ জানুয়ারি ৪ পয়েন্ট, ১২ জানুয়ারি ৬ পয়েন্ট ও ১৫ জানুয়ারি ৩৫ পয়েন্ট বেড়েছিল।
ডিএসইতে গতকাল ৯০০ কোটি ৪৮ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকার।
ডিএসইতে গতকাল ৩৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ১১৯টির, কমেছে ৬৮টির এবং ১৮৬টির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কম। আর যেসব বিনিয়োগকারী বাজারে আছে, তারা মিথ্যা তথ্য ও গুজবের সময় কম্পানি পরিবর্তন করছে। লভ্যাংশ দেবে কিংবা দাম বাড়বে কোনো কম্পানির—এমন তথ্য শুনলেই সবাই ওই দিকে ছুটছে। এতে কয়েক দিন কম্পানিটির দাম বাড়ে, কিন্তু কিছুদিন পর আবার দাম পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজারে নতুন বিনিয়োগ আনতে সুশাসনে জোর দিতে হবে। বাজারের গভীরতা বাড়াতে আরো ভালো দেশি ও বহুজাতিক কম্পানি তালিকভুক্ত করতে হবে।’
প্রিন্ট