রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার যশাই ইউপির চর লক্ষীপুর গ্রামের গৃহবধূ হাফিজা খাতুন (২৪) হত্যাকান্ডের মূল আসামী সাবু প্রামানিক (২৮)সহ অপর তিন আসামী ঘটনার ৩মাসেও গ্রেফতার হয়নি। পাংশা মডেল থানার মামলা নং ১০, তারিখ ০৯/০৮/২০২১ খ্রি.। ধারা ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী-২০০৩, ১১ (ক)/৩০।
সাবু প্রামানিক হাফিজা খাতুনের স্বামী। যৌতুকের জন্য মারপিট করে হত্যা ও সহায়তার অপরাধে নিহত হাফিজা খাতুনের ভাই মাহাবুবুর রহমান হাসান বাদী হয়ে পাংশা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, ৪ বছর আগে হাবাসপুর ইউপির কাচারীপাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান প্রামানিকের মেজো মেয়ে হাফিজা খাতুনের যশাই ইউপির আরশেদ প্রামানিকের বড় ছেলে সাবু প্রামানিকের সাথে বিবাহ হয়। সাবু প্রামানিক কৃষক পরিবারের সন্তান। তাদের পরিবারে সামিয়া খাতুন নামের ২ বছর ৬ মাস বয়সের শিশু কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু হাফিজা খাতুনের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। বিয়ের ৪ বছরে স্বামী সাবু প্রামানিক ও তার পরিবারের লোকজনের হাতে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতিত হয়।
মামলার অভিযোগে বাদী মাহাবুবুর রহমান হাসান বলেন, আমার বোনের বিবাহের কিছুদিন পর হতে আসামী সাবু প্রামানিক অন্যান্য আসামীদের কু-পরামর্শে আমার বোন হাফিজার নিকট যৌতুক বাবদ একলাখ টাকা দাবী করে। উক্ত টাকা আমার বোন আমাদের বাড়ি হতে আনতে অস্বীকার করায় আসামীগণ আমার বোনের উপর বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। আমার বোন শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আমাদের বাড়ি হতে আসামীর দাবীকৃত যৌতুক বাবদ ১লাখ টাকার মধ্যে বিশ হাজার টাকা এনে দেয়। এতে আসামীরা ক্ষান্ত না হয়ে আমার বোনের উপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। গত ৮/৮/২০২১ তারিখ রাত দেড়টার দিকে আসামীদের বাড়ির পাশের লোকজন আমার চাচাতো ভাই ফরিদের মোবাইলে ফোন করে আমার বোন হাফিজাকে যৌতুকের জন্য মারপিট করছে মর্মে সংবাদ প্রদান করে। তখন আমার চাচাতো ভাই ফরিদ রাত্রীবেলায় আমাদের বাড়িতে যেয়ে আমার বোন হাফিজা খাতুনকে মারধর করার সংবাদ দেয়।
গভীর রাত হওয়ায় আমিসহ আমার পরিবারের লোকজন ৮/৮/২০২১ খ্রি. সকাল আনুমানিক ৮টার সময় আমার বোনের শ্বশুরবাড়ি চর লক্ষèীপুর গ্রামে পৌঁছে দেখি আমার বোন হাফিজা খাতুনের মৃতদেহ আমার বোনের শ্বশুরবাড়ির বসতঘরের বারান্দায় কাপড় দ্বারা ঢাকা। আমার বোন হাফিজা খাতুনের লাশ দেখার সময় আমার বোনের ডান কানের নিচে, থুতনির নিচে, থুতনির ডান পাশে, গলার ডান পাশে, ডান কাঁধের নিচে, ডান ও বাম হাতের কনুইয়ের নিচে ও উপরে এবং ডান পায়ের হাঁটুর নিচে জখমের চিহ্ণ দেখতে পাই।
তখন আশেপাশের লোকজনের নিকট জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি যে, আসামীগণ ৭/৮/২০২১ তারিখ বিকেল বেলায়ও আমার বোন হাফিজা খাতুনকে মারধর করে এবং ৮/৮/২০২১ তারিখ রাত দেড়টার পর হতে ৮/৮/২০২১ তারিখ সকাল অনুমান ৮টার মধ্যবর্তী যে কোনো সময় আসামীগণ পরিকল্পিতভাবে যৌতুকের দাবীতে মারধর করে কিংবা শ্বাসরুদ্ধ করে আমার বোন হাফিজাকে হত্যা করে গলায় ওড়না দিয়ে বসতঘরের বারান্দায় বাঁশের আড়ার সাথে ফাঁস নিয়েছে বলে প্রচার করে।
পরবর্তীতে পাংশা মডেল থানা পুলিশকে সংবাদ দিলে থানা পুলিশ চর লক্ষীপুর গ্রামস্থ আরশেদ প্রামানিকের বসতঘরের বারান্দায় উপস্থিত হয়ে হাফিজা খাতুনের মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ রাজবাড়ী মর্গে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায় নিহত হাফিজা খাতুনের ভাই মাহাবুবুর রহমান হাসান বাদী হয়ে চর লক্ষীপুর গ্রামের সাবু প্রামানিক, পনটুরী বেগম, আরশেদ প্রামানিক ও সেলিম রেজা অরফে বাবু প্রামানিককে আসামী করে পাংশা মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের করার পরপরই ৪নং আসামী সেলিম রেজা অরফে বাবু প্রামানিক (২৫) কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ ব্যাপারে সোমবার ৮ নভেম্বর বিকেলে নিহত হাফিজা খাতুনের বৃদ্ধ পিতা হাবিবুর রহমান প্রামানিক বলেন, আসামী পক্ষের লোকজন আমাকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করছে। মামলা আপোষ করার জন্য লোভ-প্রলোভন দিচ্ছে। কোনো লোভ প্রলোভনে আমাকে নতি স্বীকার করাতে পারছে না। আমি ন্যায় বিচার চাই। মা হারা শিশু নাতনি সামিয়া যেন তার মায়ের হত্যাকারীদের বিচার দেখতে পায়। খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই আমার মেয়ে হাফিজার আত্মা শান্তি পাবে।
ঘটনার ৩ মাসেও মূল আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন তিনি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নবীন বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে।
প্রিন্ট