আলিফ হোসেন:
রাজশাহীর তানোর উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীর গ্রামীণ জনপদের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা বিস্তারে অনন্য অবদান রেখে চলেছে কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয়। নানা প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও বিদ্যালয়টি গ্রামীণ জনপদে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
গ্রামীণ পরিবেশেও শহরের মতো আধুনিক পদ্ধতিতে পাঠদান করা হচ্ছে। মনোরম ও নিরিবিলি পরিবেশে স্থাপিত বিদ্যালয়টি শহরের কোলাহল থেকে দূরে। তানোর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে কৃষ্ণপুর গ্রামে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে মানসম্মত পাঠদানের যথাযথ ব্যবস্থা।
শহরের নামিদামি স্কুলগুলোতে যেমন আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকে, হয়তো তেমন উপকরণ এখানে নেই, তবে পাঠদানের মানের দিক থেকে কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় কোনও অংশে পিছিয়ে নেই।
এখানে রয়েছে একদল দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা, যারা বিষয়ভিত্তিক আধুনিক পাঠদানের মাধ্যমে পাবলিক পরীক্ষায় ধারাবাহিক সাফল্য অর্জন করে চলেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানীর আন্তরিক প্রচেষ্টা, পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহায়তায় স্কুলটি একটি আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে শুরু করেছে। শিক্ষকদের আন্তরিকতায় টেকসই পাঠদান, শিক্ষার্থী উপস্থিতি, মূল্যায়ন, এবং অভিভাবক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে চলছে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও বিশ্লেষণমূলক কাজ।
প্রতিষ্ঠার ইতিহাস ও বর্তমান চিত্র:
জানা যায়, ১৯৬৭ সালে উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে এক একর জমির উপর এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে রয়েছে ১৩ জন শিক্ষক, ৬ জন কর্মচারী ও প্রায় ৩০০ জন শিক্ষার্থী।
গত শিক্ষাবর্ষে এসএসসি পরীক্ষায় ৫১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন।
সমস্যা ও সম্ভাবনা:
দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বিদ্যালয়ে আধুনিক একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি ও কম্পিউটার ল্যাব নির্মাণ হয়নি। পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় শিক্ষার গুণগত মান ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
বিদ্যালয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন, খেলাধুলা ও জাতীয় দিবস নিয়মিতভাবে পালন করা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, তেমনি সৃজনশীল ও মননশীল হিসেবে গড়ে উঠছে।
প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী জানান, “অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে চেষ্টা করছি। যদি একাডেমিক ভবন ও কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়, তাহলে বিদ্যালয়টি আরও বড় পরিসরে অবদান রাখতে পারবে।”
উপসংহারঃ
গ্রাম হোক কিংবা শহর, প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সদিচ্ছা থাকলে কোথাও না কোথাও একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব— তানোরের কৃষ্ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় তার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
প্রিন্ট