ঢাকা , বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

ছোটগল্পঃ একটি ধর্ষণ মামলা

-শামীম আহমেদ

রাত গভীর। শহরের এক কোণে পুলিশের গাড়ির সাইরেন বেজে উঠল। পাশের গলিতে একটি মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। তার শরীরের ওপর ছিঁড়ে যাওয়া কাপড় ও রক্তের দাগ সব বলে দিচ্ছে যে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছে।

সুমি নামের এই মেয়েটি ছিল একেবারে সাধারণ একটি কলেজপড়ুয়া মেয়ে। তার স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার, যাতে সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সেদিন রাতে তার নিজের জীবনের সব স্বপ্ন যেন ভেঙে খান খান হয়ে গেল। হাসপাতালে যখন তার জ্ঞান ফিরল, তখন তার মা কাঁদছেন, আর পাশেই দাঁড়িয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

কিছুদিন পর মামলা শুরু হলো। অভিযুক্ত ছিল এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, যার নাম রাজিব। সুমি ও তার পরিবার জানত, এই মামলায় জিততে গেলে শুধু সত্যের ওপর ভরসা রাখা যথেষ্ট নয়। তাদের জন্য আসল চ্যালেঞ্জ ছিল রাজিবের পরিবারের শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করা।

আদালতে সুমি তার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিল। তার কথা ছিল স্পষ্ট ও সাহসী। কিন্তু প্রতিপক্ষের আইনজীবী চেষ্টা করছিল সুমির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে।
“আপনি রাতে একা বেরিয়েছিলেন কেন?”
“আপনার পোশাক কি বেশি উগ্র ছিল না?”
“আপনি কি রাজিবকে আগে থেকে চিনতেন?”
এই ধরনের প্রশ্ন সুমিকে আঘাত করছিল, কিন্তু সে দৃঢ় ছিল। তার পাশে ছিল তার পরিবার, একজন সাহসী আইনজীবী, আর নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা।

মামলার সময় সুমির এক সহপাঠী এগিয়ে এসে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। সে জানায়, রাজিব প্রায়ই সুমিকে উত্যক্ত করত। এই সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। তবে, মামলাটি সহজে শেষ হয়নি। রাজিবের পরিবার অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সুমির আইনজীবী ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যান।

শেষ পর্যন্ত, দীর্ঘ আট মাসের লড়াইয়ের পর আদালত রাজিবকে দোষী সাব্যস্ত করে। সুমি যখন রায়ের কথা শুনল, তার চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
তবে এই রায় সুমির জীবনের সব ক্ষত মুছে দিতে পারেনি। সমাজ এখনও তাকে বিচিত্র দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু সুমি জানে, সে অন্যায়ের শিকল ভাঙতে পেরেছে। তার সাহস নতুন প্রজন্মের নারীদের জন্য প্রেরণার উৎস হবে।

শহরের আকাশে সেদিন রাতে তারার আলো যেন একটু বেশি উজ্জ্বল ছিল। সুমির গল্প এখানেই শেষ নয়, বরং এখান থেকেই শুরু। ন্যায়বিচারের জন্য তার লড়াই শুধু তার নিজের নয়, পুরো সমাজের জন্য।

লেখকঃ শামীম আহমেদ
              -কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

error: Content is protected !!

ছোটগল্পঃ একটি ধর্ষণ মামলা

আপডেট টাইম : এক ঘন্টা আগে
শামীম আহমেদ, কবি, লেখক ও সাহিত্যিক :

-শামীম আহমেদ

রাত গভীর। শহরের এক কোণে পুলিশের গাড়ির সাইরেন বেজে উঠল। পাশের গলিতে একটি মেয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। তার শরীরের ওপর ছিঁড়ে যাওয়া কাপড় ও রক্তের দাগ সব বলে দিচ্ছে যে ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছে।

সুমি নামের এই মেয়েটি ছিল একেবারে সাধারণ একটি কলেজপড়ুয়া মেয়ে। তার স্বপ্ন ছিল আইনজীবী হওয়ার, যাতে সমাজের অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু সেদিন রাতে তার নিজের জীবনের সব স্বপ্ন যেন ভেঙে খান খান হয়ে গেল। হাসপাতালে যখন তার জ্ঞান ফিরল, তখন তার মা কাঁদছেন, আর পাশেই দাঁড়িয়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

কিছুদিন পর মামলা শুরু হলো। অভিযুক্ত ছিল এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান, যার নাম রাজিব। সুমি ও তার পরিবার জানত, এই মামলায় জিততে গেলে শুধু সত্যের ওপর ভরসা রাখা যথেষ্ট নয়। তাদের জন্য আসল চ্যালেঞ্জ ছিল রাজিবের পরিবারের শক্তি ও রাজনৈতিক প্রভাবের সঙ্গে লড়াই করা।

আদালতে সুমি তার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিল। তার কথা ছিল স্পষ্ট ও সাহসী। কিন্তু প্রতিপক্ষের আইনজীবী চেষ্টা করছিল সুমির চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলতে।
“আপনি রাতে একা বেরিয়েছিলেন কেন?”
“আপনার পোশাক কি বেশি উগ্র ছিল না?”
“আপনি কি রাজিবকে আগে থেকে চিনতেন?”
এই ধরনের প্রশ্ন সুমিকে আঘাত করছিল, কিন্তু সে দৃঢ় ছিল। তার পাশে ছিল তার পরিবার, একজন সাহসী আইনজীবী, আর নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা।

মামলার সময় সুমির এক সহপাঠী এগিয়ে এসে তার পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। সে জানায়, রাজিব প্রায়ই সুমিকে উত্যক্ত করত। এই সাক্ষ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। তবে, মামলাটি সহজে শেষ হয়নি। রাজিবের পরিবার অর্থ ও প্রভাব খাটিয়ে তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সুমির আইনজীবী ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যান।

শেষ পর্যন্ত, দীর্ঘ আট মাসের লড়াইয়ের পর আদালত রাজিবকে দোষী সাব্যস্ত করে। সুমি যখন রায়ের কথা শুনল, তার চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
তবে এই রায় সুমির জীবনের সব ক্ষত মুছে দিতে পারেনি। সমাজ এখনও তাকে বিচিত্র দৃষ্টিতে দেখে। কিন্তু সুমি জানে, সে অন্যায়ের শিকল ভাঙতে পেরেছে। তার সাহস নতুন প্রজন্মের নারীদের জন্য প্রেরণার উৎস হবে।

শহরের আকাশে সেদিন রাতে তারার আলো যেন একটু বেশি উজ্জ্বল ছিল। সুমির গল্প এখানেই শেষ নয়, বরং এখান থেকেই শুরু। ন্যায়বিচারের জন্য তার লড়াই শুধু তার নিজের নয়, পুরো সমাজের জন্য।

লেখকঃ শামীম আহমেদ
              -কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।


প্রিন্ট