ভূমিকা
সামাজিক সংগঠন সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমাজে মানবকল্যাণ, সহযোগিতা, সচেতনতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশ রক্ষার মতো নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনায় সামাজিক সংগঠনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ ধরনের সংগঠন এক বা একাধিক লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করে থাকে। সামাজিক সংগঠনগুলো মূলত ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গঠিত হয় এবং সমাজে নানাবিধ সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
প্রকৃতি ও কার্যক্রম
সামাজিক সংগঠনের কাজ সাধারণত অলাভজনক হয় এবং স্বেচ্ছাসেবক দ্বারা পরিচালিত হয়। অনেকে এগুলোকে এনজিও বা বেসরকারি সংগঠন হিসেবেও চেনে, তবে সব সামাজিক সংগঠনই এনজিও নয়। কিছু স্থানীয় যুব সংগঠন বা ছাত্র সংগঠন শুধুমাত্র সমাজের ছোট পরিসরে জনকল্যাণে কাজ করে থাকে। এরা পথশিশুদের শিক্ষাদান, নারীদের ক্ষমতায়ন, বয়স্কদের সহায়তা, প্রতিবন্ধীদের সেবা ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত থাকে।
সচেতনতা ও সমাজকল্যাণে ভূমিকা
সামাজিক সংগঠন সমাজের অসহায়, দরিদ্র, রোগাক্রান্ত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ায়। তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় জনসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সরাসরি সহায়তা প্রদান করে। অনেক সংগঠন জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ রক্ষা, রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, প্লাস্টিক মুক্ত সমাজ গড়ার মতো প্রকল্প হাতে নেয়।
সুব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্ব
যেসব সামাজিক সংগঠন সুসংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হয়, তারা দীর্ঘমেয়াদে টেকসই উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়। এ ধরনের সংগঠনের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনসম্পৃক্ততা থাকা জরুরি। সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, একতা ও দায়িত্ববোধ থাকলে সেটি আরও কার্যকরভাবে সমাজে অবদান রাখতে পারে।
তরুণদের অংশগ্রহণ
বর্তমানে শিক্ষিত তরুণরা সামাজিক সংগঠনের কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে, যা একটি আশাব্যঞ্জক দিক। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের মাধ্যমে সমাজসেবায় অংশ নিচ্ছে। এতে তাদের মধ্যে মানবিকতা, নেতৃত্বের গুণাবলি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি হচ্ছে।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
তবে কিছু সংগঠন নামমাত্র সামাজিক কর্মকাণ্ড করে আসল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়, যা সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক সংগঠনগুলোর নিবন্ধন ও তদারকি নিশ্চিত করা জরুরি, যেন ভুয়া সংগঠনের কারণে মানুষের আস্থা বিনষ্ট না হয়।
উপসংহার
অবশেষে বলা যায়, সামাজিক সংগঠন সমাজ গঠনে এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে থেকেও এরা নাগরিক সমাজে নৈতিকতা, মানবতা এবং সহমর্মিতার মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে। একটি সুস্থ, সচেতন, সহযোগিতামূলক সমাজ গড়তে হলে প্রতিটি এলাকায় অন্তত একটি সামাজিক সংগঠনের কার্যকর উপস্থিতি থাকা দরকার। ব্যক্তিগত ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সবাই যদি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়, তাহলে দেশ ও সমাজ হবে আরও সুন্দর, মানবিক ও আলোকিত।
প্রিন্ট