শামীম আহমেদঃ
বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে রুবি ভাবছিল, এ বছরও হয়তো গরু আসবে না। গত দুই বছর কোরবানির ঈদে তাদের বাড়িতে শুধু হালুয়া-সেমাই আর বিরিয়ানির ঘ্রাণ ছিল, গরুর ছায়াও না…।
.
স্বামী শফিক সাহেব স্কুলশিক্ষক। বেতন আসে নিয়মিত, কিন্তু বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে চলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। একমাত্র ছেলে মেঘরাজ গতকালই জিজ্ঞেস করেছিল, “আমাদের বাসায় গরু কবে আসবে মা?”
রুবির চোখ ভিজে উঠেছিল। সে শুধু বলেছিল, “আল্লাহ ভরসা।”
.
ঈদের আগের দিন বিকেলে হঠাৎ শফিক সাহেব ঘরে ঢুকলেন, মুখে হাসি। রুবি অবাক। হাতে একটা গরুর রশি!
— “এই তো, ছোট একটা গরু পেলাম। দুই সহকর্মীর সাথে ভাগ করে নিয়েছি,” বললেন তিনি।
মেঘরাজ দৌড়ে এসে গরুকে অপলোক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো। গরুটি বেশ ছোট, কিন্তু তার চোখে যেন একটা গর্ব।
.
সন্ধ্যায় পাশের বাসার রহমান সাহেবের ছেলের গলা শোনা গেল, “আব্বু, ওদের গরুটা এত ছোট কেন?”
রুবি না শোনার ভান করল। সে ব্যস্ত ছিল গরুর খাবার দিতে। তার চোখে তখন সন্তুষ্টির পানি। সে জানে, এই সামান্য কোরবানির মাঝেই লুকিয়ে আছে অনেক বড় ত্যাগ—যেটা শুধু গরুর মাপে মাপা যায় না…।
লেখকঃ -শামীম আহমেদ
কবি, লেখক ও সাহিত্যিক।
প্রিন্ট