ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo লালপুরের পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৫ Logo ফরিদপুরে আ.লীগের ব্যানারে মিছিল দেওয়ার প্রস্তুতিকালে বিএনপি নেতার ছেলেসহ আটক ৮ Logo বহলবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সম্মেলন Logo শ্রমিকদল নেতাদের সহযোগীতায় জোরপূর্বক জমি দখলে শসস্ত্র হামলা Logo ডিপ্লোমা ইন্টার্ন নার্সদের একদফা দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত Logo ছাত্রদল নেতা পারভেজ হত্যার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল Logo সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও আলোচনা সভা Logo আলফাডাঙ্গায় শিক্ষকদের সংবর্ধনা ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করলেন জেলা প্রশাসক Logo মুকসুদপুর উপজেলা পরিষদের ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ Logo ভূরুঙ্গামারীতে নাশকতা বিরোধী বিশেষ অভিযানে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ৫ নেতা গ্রেফতার
প্রতিনিধি নিয়োগ
দৈনিক সময়ের প্রত্যাশা পত্রিকার জন্য সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হচ্ছে। আপনি আপনার এলাকায় সাংবাদিকতা পেশায় আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন।

এক যুগেও হয়নি জলাবদ্ধতার সমাধান

লালপুরের বসন্তপুর বিলে অনিশ্চিত ১০ হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে বসন্তপুর বিলের পানি নিষ্কাশন খালের মুখে অবৈধভাবে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় সৃষ্ট জলবদ্ধতায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অনাবাদিভাবে পড়ে আছে বিলের ১০ হাজার বিঘা জমি। বিগত বছরে কয়েকবার বিলের পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিলেও হয়নি কার্যকর কোন সমাধান। এতে বিলে জন্মেছে কচুরিপানা ও জলজ আগাছা। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিলে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। এদিকে চলতি মৌসুমেও বোরো ধানের আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ কি.মি দীর্ঘ ও ৩ কি.মি চওড়া বিশাল এ বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আজিজুল আলম এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে তাঁদের জমিতে সরকারি ব্যয়ে একটি খাল খনন করেছিলেন। বর্ষাকালে এই খাল হয়ে বিলের পানি পার্শ্ববর্তী রঘুনাথপুর, হাসেমপুর ও আকবর পুর হয়ে আরেকটি খালের মাধ্যমে নাটোরের চন্দনা নদীতে পড়তো। তখন থেকে এই বিলে বছরে ৩টি করে ফসল উৎপাদিত হতো। পড়ে থাকতো না এক ইঞ্চি জমি। বিলের চারপাশে বসবাসকারী ২০ টি গ্রামের মানুষের কাছে বিলটি হয়ে উঠেছিল আশীর্বাদ।

কিন্তু ২০১২ – ২০১৩ সাল থেকে বিলে কয়েকজন প্রভাবশালী সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অবৈধভাবে পুকুর খনন শুরু করলে বন্ধ হয়ে যায় বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এতে বিপাকে পড়েন বিলে আবাদকারী কৃষকেরা।

২০১৯ সালের ২৪ মার্চ বিলের ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধ ও জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে লিখিত অভিযোগ, উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। ২০১৯ সালের ১২ মে হাইকোর্ট একটি রিট শুনানি করে উপজেলার কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে নির্দেশ দিলেও বন্ধ করা যায়নি অবৈধ পুকুর খনন। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট লালপুরের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যূতি ভুক্তভোগী চাষিদের দিয়ে ৪২টি পুকুরের পাড় কেটে সাময়িক পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন। স্থায়ীভাবে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২২ সালের ১ মার্চ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বসন্তপুর বিলের সঙ্গে চন্দনা নদীর সংযোগ খাল সংস্কারের জন্য প্রায় এক কোটি টাকার একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। কিন্তু বিলের ১ কি.মি খাল খনন করার পর ব্যক্তি মালিকানাধীন ১.৫ কি.মি জমি সরকারিভাবে অধিগ্রহণ না করায় বাকি অংশে আর খাল খনন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বর্ষাকালে পানি বন্দি হয়ে পড়ে বিলের চারপাশের ২০ টি গ্রাম। দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকায় এলাকার মানুষ রোগব্যধিতে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় ঘটে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবারো উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগী চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অব:) নজরুল ইসলাম বলেন, “বিলে আমাদের পরিবারের ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবাদ করতে পারছি না। বারবার প্রশাসনের কাছে ধরনা দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না।”
গন্ডবিল গ্রামের মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, “জলাবদ্ধতার কারণে বাধ্য হয়ে আমিও পুকুর খনন করেছি। তবে খাল খনন করা হলে সকলের জন্যই উপকার হবে।”

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, ” অবৈধভাবে পানি নিষ্কাশন খালের মুখে পুকুর খনন করায় বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিএডিসি’র সেচ প্রকল্প ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থায়ীভাবে বিলের জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য কাজ করা হচ্ছে।”

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান জানান, “জমির মালিক ও পুকুর মালিকের সাথে কথা বলে সাময়িকভাবে পানি নিষ্কাশনের একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কথা বলা হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য বিএডিসি’র সেচ প্রকল্পে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে।”


প্রিন্ট
Tag :
এই অথরের আরো সংবাদ দেখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

লালপুরের পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১, আহত ৫

error: Content is protected !!

এক যুগেও হয়নি জলাবদ্ধতার সমাধান

লালপুরের বসন্তপুর বিলে অনিশ্চিত ১০ হাজার বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ

আপডেট টাইম : ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি :

রাশিদুল ইসলাম রাশেদ, লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি

নাটোরের লালপুরে বসন্তপুর বিলের পানি নিষ্কাশন খালের মুখে অবৈধভাবে অপরিকল্পিত পুকুর খনন করায় সৃষ্ট জলবদ্ধতায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অনাবাদিভাবে পড়ে আছে বিলের ১০ হাজার বিঘা জমি। বিগত বছরে কয়েকবার বিলের পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নিলেও হয়নি কার্যকর কোন সমাধান। এতে বিলে জন্মেছে কচুরিপানা ও জলজ আগাছা। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বিলে ফসল উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কৃষক ও শ্রমিকরা। এদিকে চলতি মৌসুমেও বোরো ধানের আবাদ নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ কি.মি দীর্ঘ ও ৩ কি.মি চওড়া বিশাল এ বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দুড়দুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আজিজুল আলম এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে তাঁদের জমিতে সরকারি ব্যয়ে একটি খাল খনন করেছিলেন। বর্ষাকালে এই খাল হয়ে বিলের পানি পার্শ্ববর্তী রঘুনাথপুর, হাসেমপুর ও আকবর পুর হয়ে আরেকটি খালের মাধ্যমে নাটোরের চন্দনা নদীতে পড়তো। তখন থেকে এই বিলে বছরে ৩টি করে ফসল উৎপাদিত হতো। পড়ে থাকতো না এক ইঞ্চি জমি। বিলের চারপাশে বসবাসকারী ২০ টি গ্রামের মানুষের কাছে বিলটি হয়ে উঠেছিল আশীর্বাদ।

কিন্তু ২০১২ – ২০১৩ সাল থেকে বিলে কয়েকজন প্রভাবশালী সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অবৈধভাবে পুকুর খনন শুরু করলে বন্ধ হয়ে যায় বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এতে বিপাকে পড়েন বিলে আবাদকারী কৃষকেরা।

২০১৯ সালের ২৪ মার্চ বিলের ফসলি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধ ও জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে লিখিত অভিযোগ, উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। ২০১৯ সালের ১২ মে হাইকোর্ট একটি রিট শুনানি করে উপজেলার কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধে নির্দেশ দিলেও বন্ধ করা যায়নি অবৈধ পুকুর খনন। ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট লালপুরের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মুল বানীন দ্যূতি ভুক্তভোগী চাষিদের দিয়ে ৪২টি পুকুরের পাড় কেটে সাময়িক পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন। স্থায়ীভাবে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০২২ সালের ১ মার্চ নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বসন্তপুর বিলের সঙ্গে চন্দনা নদীর সংযোগ খাল সংস্কারের জন্য প্রায় এক কোটি টাকার একটি প্রকল্প উদ্বোধন করেন। কিন্তু বিলের ১ কি.মি খাল খনন করার পর ব্যক্তি মালিকানাধীন ১.৫ কি.মি জমি সরকারিভাবে অধিগ্রহণ না করায় বাকি অংশে আর খাল খনন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বর্ষাকালে পানি বন্দি হয়ে পড়ে বিলের চারপাশের ২০ টি গ্রাম। দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকায় এলাকার মানুষ রোগব্যধিতে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় ঘটে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আবারো উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। কিন্তু এখনো দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগী চন্ডিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (অব:) নজরুল ইসলাম বলেন, “বিলে আমাদের পরিবারের ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। জলাবদ্ধতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবাদ করতে পারছি না। বারবার প্রশাসনের কাছে ধরনা দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না।”
গন্ডবিল গ্রামের মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, “জলাবদ্ধতার কারণে বাধ্য হয়ে আমিও পুকুর খনন করেছি। তবে খাল খনন করা হলে সকলের জন্যই উপকার হবে।”

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রীতম কুমার হোড় বলেন, ” অবৈধভাবে পানি নিষ্কাশন খালের মুখে পুকুর খনন করায় বিলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বিএডিসি’র সেচ প্রকল্প ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে স্থায়ীভাবে বিলের জলবদ্ধতা নিরসনের জন্য কাজ করা হচ্ছে।”

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী হাসান জানান, “জমির মালিক ও পুকুর মালিকের সাথে কথা বলে সাময়িকভাবে পানি নিষ্কাশনের একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কথা বলা হয়েছে। এছাড়া স্থায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য বিএডিসি’র সেচ প্রকল্পে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হবে।”


প্রিন্ট