সময়ের প্রত্যাশা ডেস্ক রিপোর্টঃ
গাজীপুর মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় শ্রমিকদল নেতাদের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে হামলা করে জোরপূর্বক জমি দখলে নারীসহ চার জনকে আহত করলেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। হামলাকারী নগদ টাকাসহ লুটে নিয়েছেন স্বর্ণালংকা ভাংচুর করেছেন আসবাবপত্র।
গত ৯এপ্রিল বুধবার এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। হামলায় আহত মেহেরুন আক্তার বাদী হয়ে গত ১৬ এপ্রিল মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ৮জনের নাম উল্লেখ সহ ২০/২৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়। আসামীদের মধ্যে শেখ মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এছাড়া সকলে বিএনপি’র অঙ্গসযোগী সংগঠন শ্রমিক দলের নেতা-কর্মী।
গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগনেতা মাসুদকে গ্রেফতার করলেও তার সহযোগী হামলার ঘটনার জরিত শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা রয়েছে ধরা-ছোয়ার বাহিরে।
মামলা বাদী উল্লেখ করেন, আমার দাদা মহর আলী জীবদ্দশায় গাজীপুর মহানগর এর সদর থানাধীন ৪/ হাড়িনাল উত্তরপাড়া সাকিনস্থ তার জমি হতে তার ছেলে, মেয়ে এবং মৃত ছেলের ঘরের নাতীদেরকে হিস্যা অনুযায়ী পৃথক পৃথক হেবানামা দলিল মূলে জমি লিখে দেন। আমি পৈত্রিক সূত্রে এবং আমার ফুফু মরিয়ম বেগমের নিকট থেকে বেলওয়াজ হেবানামা দলিলমূলে হাড়িনাল উত্তর পাড়া সাকিনে মোট ১.৫ কাঠা জমি ভোগ দখলে আছি। আমার সহোদর বড় ভাই মাহবুব আলম শামীম (৪৮) পৈত্রিক সূত্রে এবং আমার অপর ফুফু মকবুলেন নেছার নিকট থেকে বেলওয়াজ হেবানামা দলিলমূলে হাড়িনাল ১.৫ কাঠা জমির মালিক হয়ে ভোগ দখলে আছেন। আমার এবং আমার সহোদর বড় ভাই মাহবুবক আলম শামীমের ভোগ দখলীয় জমি সংক্রান্তে শেখ মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের সাথে বিরোধ ও শত্রুতা করে আসছে। মাসুদ তার ইতঃপূর্বে একাধিক বার আমাদের উল্লেখিত জমি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করেছে। আমাদের ভোগ দখলীয় জমিতে বাড়ী নির্মাণ বা উন্নয়নমূলক কোন কাজ করতে গেলে মাসুদ তার সহযোগীদের নিয়ে কাজে বাধা প্রদানকরে খুন জখম করার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আমরা স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে উক্ত বিষয়টি জানাই এবং খুন জখমের হুমকি প্রদানের ঘটনায় আমার বড় ভাই মাহবুব আলম শামীম বাদী হয়ে শেখ মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ গংদের বিরুদ্ধে জিএমপি সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এতে মাসুদ আরও বেশী ক্ষীপ্ত হয়। এমতাবস্থায় গত ৯ এপ্রিল দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে আমার পরিবারের লোকজনসহ ভোগ দখলীয় জমিতে বাড়ী-ঘর নির্মাণের লক্ষে মাপঝোক করাকালে শেখ মাসুদ রানা ওরফে মাসুদ তার সহযোগী ইব্রাহিম, মঞ্জুর হোসেন ওরফে মঞ্জু, কামরুল ইসলাম, আঃ কাদির, মাসুদ, কবির হোসেন, বিল্লাল হোসেন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জন ধারালো ছেন, চাপাতি, লাঠি, লোহাররড অস্ত্র-শস্ত্রে নিয়ে আমার বড় ভাই শেখ সোহেল রানা (৪৩), আমার স্বামী আঃ গাফ্ফার (৪৫) (সংবাদ কর্মী) এবং আমার ভাবী শিরিন আক্তার (৩০) দের উপর হামলা করে। এলোপাথারীভাবে মারপিট করে সকলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা-ফোলা জখম করে। মাসুদ তার হাতে থাকা ধারালে চাপাতি দিয়ে আমার বড় ভাই শেখ সোহেল রানাকে খুন করার উদ্দেশ্যে তার মাথা লক্ষ্য করে পর পর ২টি কোপ মারে। প্রাণ রক্ষার্থে সরে যাওয়ার চেষ্টা করলে উক্ত চাপাতির কোপ আমার ভাই শেখ সোহেল রানার ডান হাতের বাহুর উপরের অংশে লেগে ২টি গুরুত্বর কাটা রক্তাক্ত জখম হয়। হামলাকারী ইব্রাহিম, মঞ্জুর হোসেন ওরফে মঞ্জু এবং কামরুল ইসলামগণ আমার আমাকে প্রায় বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানী করে। হামলাকরী কবির হোসেনসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আমার ভাবী শিরিন আক্তারকে শ্লীলতাহানী করে। হামলাকারী ইব্রাহিম আমার গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন যার আনুমানিক মূল্য এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। মাসুদ আমার হাতে থাকা একটি ভ্যানেটি ব্যাগে বাড়ী নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করার জন্য রাখা তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। আমাদেরকে মারপিট করার একপর্যায়ে সকল হামলাকারীরা জমির পার্শ্ববর্তী আমার বড় ভাই শেখ সোহেল রানার বসত ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভাংচুর করে এবং ওয়ারড্রপের ড্রয়ার থেকে নগদ দুই লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা ও ১২ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, একটি ৪ আনা ওজন আংটি, ২টি ৮ আনা ওজন যার আনুমানিক মূল্য এক লক্ষ বার হাজকার পাঁচশত টাকা নিয়ে নেয়। হামলার সময় ডাক-চিৎকার শুনে এবং ঘটনা দেখে আশে-পাশের লোকজন এগিয়ে আসতে থাকলে এবং ঘটনার সংবাদ পেয়ে এলাকায় ডিউটিরত টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হামলাকারীরা দৌঁড়ে পালিয়ে যায় এবং যাওয়ার সময় খুন করবে বলে হুমকি দেয়ে। পরে স্থানীয়রা আমাদেরকে উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন সদর ওসি মো: মেহেদী হাসান জানান, মামলা দায়েরের পর অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামী মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখিত অন্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
প্রিন্ট