মো: রনি আহমেদ রাজু, মাগুরা জেলা প্রতিনিধি
আলোচিত মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলাধীন ধূলজোড়া চুড়ারগাতি পি সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবৈধ ৪টি পদে নিয়োগের ঘুষের অর্ধকোটির বেশি টাকা অবশেষে বদহজম পরিনত হতে যাচ্ছে।মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে রয়েছে,এসেছে কার্যক্রমের উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা।
মামলা নথি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, ধুলজোড়া চুড়ারগাতী পি সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ১৬ তারিখে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর, অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও আয়া, ৪টি পদে কমপক্ষে ৫৪ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শ্রীকান্ত বিশ্বাস ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আশুতোষ বিশ্বাস এবং সভাপতি রসকান্ত বিশ্বাস যোগসাজশ করে নিয়োগ প্রদান করেন। এর আগে ২৭/০৮/২২ইং তারিখে নিয়োগ পরীক্ষার দিন ধার্য্য হলে, পত্র পত্রিকায় ঘুষ নেওয়ার বিষয়ে সংবাদ চলে এলে উক্ত তারিখে ম্যানেজিং কমিটির মিটিং ডেকে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ও ঐ একই তারিখে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রেজুলেশন করেন, যা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিধি পরিপন্থী। যাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়া হয়েছে তাদের নামও পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
যেহেতু প্রধান শিক্ষক শ্রীকান্ত বিশ্বাস বাবুখালী ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সাধারণ সম্পাদক, ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রসকান্ত বিশ্বাস ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সহ-সভাপতি তাই সকল কিছুকে থোঁড়াই কেয়ার করে পত্রিকায় নাম আসা বিশ্বাসদের ৪জন হলেন সৌরভ বিশ্বাস, সংকর বিশ্বাস, মনোজিত বিশ্বাস ও নিষ্কৃতি বিশ্বাস কে ১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে নিয়োগ পরীক্ষা দেখিয়ে, তাদেরকে প্রথম করে ২০/০৯/২২ইং তারিখ দুপুর ২টায় নিয়োগ বৈধ করণ মিটিং দেখিয়ে ঐ দিনই তাদের নিয়োগ পত্র প্রদান করেন এবং ঐ একই তারিখে যোগদান দেখানো হয়,যা বেসরকারি শিক্ষক বিধি-১২(৬)সেকশন-৩৪ পরিপন্থী।ঘুষ নেওয়া ৪ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন প্রধান শিক্ষক শ্রীকান্ত ও সহকারী প্রধান শিক্ষক আশুতোষ বসু এবং সভাপতি রসকান্ত বিশ্বাস,তাই তারা নানা বিকৃতকৌশলের আশ্রয় নেন বলে অভিযোগ ওঠে।
কাউকে নিয়োগে পরীক্ষার দিন চিঠি দেওয়া, কাউকে একেবারেই চিঠি না দেওয়া, আবার কাউকে পরীক্ষায় অংশ না নিতে বলা সহ পাহাড় সমপরিমান অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে।এই ঘুষ বাণিজ্যের নিয়োগ দিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক আশুতোষ বসুর মধ্যস্থতায় তখন সহযোগিতা করেন মাগুরা০২ আসনের সাংসদ সদস্য ড.শ্রী বীরেন শিকদারের মামী শাশুড়ি মহম্মদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মালা রানী বিশ্বাস। এই ঘটনার পর ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন এলাকাবাসী, স্থানীয় সাংবাদিক স্কুল ম্যানেজিং সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ, তাই তারা এই জলজ্যান্ত ও প্রকাশ্য ঘুষ দূর্নীতির বিচারের জন্য সোচ্চার হয়ে ওঠেন।সাংবাদিকেরা অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন, যেখানে কমিটির সদস্য, নিয়োগ পাওয়া ৪প্রার্থী, নিয়োগ বঞ্চিত প্রার্থী, এলাকাবাসী, প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, সভাপতি, নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের নিকটজনদের সাথে কথা বলে নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয় নিশ্চিত হয়ে, ঘুষ, দূর্নীতি, অনিয়ম নিয়ে হতে থাকে একের পর এক ধারাবাহিক খবর, মোট চারটি পর্বে নিউজ প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়।
তাই ০৪/১০/২২ ইং তারিখে এলাকাবাসীর পক্ষে ইব্রাহিম খলিল জেলা প্রশাসকের নিকট নিয়োগ বাতিল চেয়ে ও শ্রীকান্ত এবং রসকান্তে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা চেয়ে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে ৩১/১০/২২ইং তারিখে ততকালীন জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি জনাব শাহাদাত হোসেন মাসুদ ০৫.৪৪.৫৫০০.০২৬.০৫.০৩৫. ২২-৩৫৩(২) স্মারকে মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। ৩১/১০/২২ ইং তারিখে দন্ড বিধির ৪০৬/৪২০/৫০২(২) ধারায় মামলা করেন চাকুরী বঞ্চিত প্রার্থী মাসুদ রানা, এতে অভিযুক্ত করা হয় প্রধান শিক্ষক শ্রীকান্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আশুতোষ বসু ও সভাপতি রসকান্তকে মামলা নং ৫২৮/২২।
এছাড়াও ৪পদে অর্ধ কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে, ঘুষ নেওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া এবং প্রার্থীদের নিয়োগ বাতিল চেয়ে, ২২/০৯/২২ তারিখে আরেকটি মামলা করেন নিয়োগ বঞ্চিত প্রার্থী মৌসুমি বিশ্বাস পিতা অশোক বিশ্বাস ও স্কুল কমিটির সদস্য হিজবুল আলম, অমিত কুমার মন্ডল এবং আনোয়ারা বেগম। এতে প্রধান শিক্ষক শ্রীকান্ত ও সভাপতি রসকান্ত বিশ্বাসকে সহ ১২ জনকে বিবাদী করা হয়।
যা নিম্ম আদালত অদৃশ্য কারণে গত১২/১১/২৪ ইং তারিখে নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত শুনানিতেই না মঞ্জুর করেন। লেনদেন এর মাধ্যমে সকল ঘাতপ্রতিঘাত চড়াই উৎরাই হতে পারলেও, ঘুষ, দূর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার লোকটি স্কুল কমিটির সদস্য মোঃ হিজবুল আলম মামলাটি নিয়ে গেছেন উচ্চ আদালত পর্যন্ত। উচ্চ আদালতে উক্ত নিয়োগের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন। উক্ত আপিলের শুনানি শেষে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের বেঞ্চ গত ০৮/১২/২৪ ইং তারিখে উক্ত দূর্নীতির নিয়োগ কে রুল ইস্টের আদেশ প্রদান করেন এবং প্রতিপক্ষের ৬ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবী সঠিক বিচারের মাধ্যমে মানুষকে কাছে এই বার্তা পৌঁছে যাক, ঘুষ, দূর্নীতি করে কেউ সারাজীবন পার পায় না, সেই সাথে ফ্যাসিস্টের দোসর ইস্কান গ্রুপ শ্রীকান্ত, রসকান্ত, আশুতোষ ও তাদের সহযোগিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় কতটাকা ঘুষ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহম্মদপুর এমপিও করার জন্য ফাইল জেলায় পাঠালেন এ প্রশ্নও রয়েছে এলাকাবাসীর। এবিষয়ে মাগুরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জনাব মোঃ আলমগীর কবির বলেন, উপজেলা থেকে এমপিও করার জন্য ফাইল জেলা শিক্ষা অফিসে এসেছিলো, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় গত ১৭/১২/২৪ ইং তারিখে সেটা উপজেলায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।
প্রিন্ট